‘সৌভাগ্যবান’ আলভারেজের সঙ্গে চাইলে কপাল ঘষতে পারেন

রিয়াল গোলকিপার থিবো কোর্তোয়াকে ফাঁকি দিয়ে গোল করছেন আলভারেজছবি: এএফপি

আর্লিং হলান্ডকে তুলে পেপ গার্দিওলা যখন হুলিয়ান আলভারেজকে নামালেন, ম্যাচ ততক্ষণে রিয়াল মাদ্রিদের মুঠো ফসকে গেছে। ৩-০ গোলে এগিয়ে ছিল ম্যানচেস্টার সিটি। কিন্তু ইতিহাদে উৎসবের শেষটা তখনো বাকি। যোগ করা সময়ের ১ মিনিটে থ্রু পাস পেয়ে রিয়াল গোলকিপার থিবো কোর্তোয়াকে ফাঁকি দিয়ে গোল করেন আলভারেজ।

আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকারের কপাল বটে! এই গোলের মধ্য দিয়ে ভেঙেছেন লিওনেল মেসির একটি রেকর্ড।

আরও পড়ুন

চ্যাম্পিয়নস লিগ সেমিফাইনালে সর্বকনিষ্ঠ আর্জেন্টাইন হিসেবে গোলের রেকর্ড এখন ২৩ বছর বয়সী আলভারেজের। কাল ২৩ বছর ৩ মাস ১৭ দিন বয়সে গোল করেছেন সিটি ফরোয়ার্ড। ২০১১ সালে ২৩ বছর ১০ মাস ৩ দিন বয়সে এই রেকর্ড গড়েছিলেন মেসি। প্রতিপক্ষ? দুই জাতীয় দল সতীর্থ একই প্রতিপক্ষ পেয়েছেন-রিয়াল মাদ্রিদ। তবে আলভারেজের কপালের প্রসঙ্গই যেহেতু উঠল, তাই সবচেয়ে মজার বিষয়টি খুলে বলাই ভালো।

আলভারেজের প্রতিভা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। গত ডিসেম্বরে কাতার বিশ্বকাপে তা দেখা গেছে। তবে প্রতিভার সঙ্গে সৌভাগ্যও যোগ হলে তা সোনায় সোহাগা হয়ে ওঠে। বিশেষ করে, তাঁর দলের জন্য। যেমন ধরুন, দক্ষিণ আমেরিকার চ্যাম্পিয়নস লিগ হলো কোপা লিবার্তোদোরেস—এই টুর্নামেন্টে ২০১৮ সালে আলভারেজের অভিষেক। রিভার প্লেটের হয়ে অভিষেকেই টুর্নামেন্টটি জিতেছেন।

রিয়ালের জালে গোলের পর সতীর্থের সঙ্গে আলভারেজের উদ্‌যাপন
ছবি: এএফপি

এরপর চলে আসুন কোপা আমেরিকায়। দক্ষিণ আমেরিকার প্রাচীনতম এ টুর্নামেন্টে ২০২১ সালে অভিষেক আলভারেজের। সে টুর্নামেন্টেও জিতেছেন শিরোপা—চ্যাম্পিয়ন হয় আর্জেন্টিনা। কাতার বিশ্বকাপের ফল তো সবারই জানা। তাঁর অভিষেক বিশ্বকাপেই—চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা। ৪ গোল করে দারুণ অবদানও রেখেছিলেন আলভারেজ। কিন্তু এখানেই শেষ নয়।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন

গত বছরের ৩১ জানুয়ারি নিজের ২২তম জন্মদিনে সুখবর দেন আলভারেজ। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের দল ম্যানচেস্টার সিটিতে সই করেন সাড়ে পাঁচ বছরের চুক্তিতে। প্রিমিয়ার লিগে অভিষেক হয় ৭ আগস্ট হলান্ডের বদলি নেমে। নরওয়েজিয়ান স্ট্রাইকার গার্দিওলার প্রথম পছন্দ হলেও আলভারেজও সুযোগ পেয়েছেন ভালোই। এখন পর্যন্ত লিগে খেলেছেন ২৮ ম্যাচ, করেছেন ৮ গোল। কিন্তু সবচেয়ে বড় কথা হলো, প্রিমিয়ার লিগেও নিজের অভিষেক মৌসুমেই শিরোপার সুবাস পাচ্ছেন আলভারেজ।

সিটি আর এক ম্যাচ জিতলেই চ্যাম্পিয়ন। চ্যাম্পিয়নস লিগেও তাই! ইউরোপসেরার এই ক্লাব টুর্নামেন্টে অভিষেক মৌসুমেই ফাইনালে উঠলেন আলভারেজ। চাই আর একটি জয়। আগামী ১০ জুন চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে ইন্টার মিলানের মুখোমুখি হবে সিটি। এই ম্যাচ জিতলেই প্রথম আর্জেন্টাইন হিসেবে কোপা লিবার্তোদোরেস, বিশ্বকাপ ও চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের কীর্তি গড়বেন আলভারেজ। এর আগে মাত্র চার ফুটবলার এই তিন শিরোপা জিতেছেন। চারজনই ব্রাজিলিয়ান—রোনালদিনিও, কাফু, দিদা ও রকি জুনিয়র।

তবে আলভারেজের সামনেও দারুণ এক সুযোগ আছে। সিটি চ্যাম্পিয়নস লিগ জিততে পারলে একই মৌসুমে বিশ্বকাপ ও চ্যাম্পিয়নস লিগজয়ী ১০ম খেলোয়াড় হবেন এই আর্জেন্টাইন তারকা।

চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে আলভারেজের জন্য কী অপেক্ষা করছে, তা সময়ই বলে দেবে। তবে তিনি কিন্তু রিয়ালেও খেলতে পারতেন। ১১ বছর বয়সে তাঁকে স্পেনে উড়িয়ে আনেন রিয়ালের স্কাউট। কিন্তু মাদ্রিদের ক্লাবটি তখন ১৩ বছর বয়সীদের সই করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এবং আলভারেজেরও পরিবার ছেড়ে মন টিকছিল না স্পেনে। তাই রিয়ালে আর যোগ দেওয়া হয়নি। তবে গার্দিওলার সঙ্গে তাঁর ভাগ্যের একটা যোগসূত্র সম্ভবত ছিল!

আরও পড়ুন

ঘটনাটা শুনুন। ২০১৬ সালে আলভারেজ পড়তেন রিভার প্লেট ইনস্টিটিউশনে। সেখানে ক্লাসে বসেই মুঠোফোনে চ্যাম্পিয়নস লিগ সেমিফাইনাল ফিরতি লেগে বায়ার্ন মিউনিখ-আতলেতিকো মাদ্রিদ ম্যাচ দেখেছিলেন আলভারেজ। সে ম্যাচে বায়ার্নের কাছে আতলেতিকো ২-১ গোলে হারলেও দুই লেগ মিলিয়ে (২-২) ‘অ্যাওয়ে গোল’ সুবিধা নিয়ে ফাইনালে উঠেছিল স্পেনের ক্লাবটিই।

ম্যাচটা দেখার ছবি টুইট করেছিলেন আলভারেজ। শ্রেণিকক্ষের চেয়ারে মুঠোফোন হেলান দিয়ে রেখে ছবিটি তুলে টুইট করে ক্যাপশনে লিখেছিলেন, ‘আমরা খেলা দেখছি না।’ আর ছবিটি তোলার সময় ফোনের স্ক্রিনে ছিল বায়ার্ন কোচের ছবি। অবশ্যই ধরতে পেরেছেন।

তাঁর বর্তমান কোচ পেপ গার্দিওলা!

আরও পড়ুন