৭ গোলের জয়ের পর এশিয়ান কাপ কত দূর

বাহরাইনকে বড় ব্যবধানে হারিয়ে এশিয়ান কাপ বাছাইপর্ব শুরু করেছে বাংলাদেশ।বাফুফে

দুটি শূন্যতা কাটিয়েছে বাংলাদেশ।

এএফসি উইমেন্স এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বে বাংলাদেশ দল আগেও খেলেছে। ২০১৪ আসরে তিন ম্যাচ, ২০২২ আসরে দুই ম্যাচ। তবে এই পাঁচ ম্যাচের একটিতেও বাংলাদেশ জিততে পারেনি। গতকাল সন্ধ্যায় বাহরাইনের বিপক্ষে সেই শূন্যতা কাটিয়েছে পিটার বাটলারের দল। এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের বাংলাদেশের জয় এখন আর ০ নয়, ১।

আফঈদা খন্দকার-ঋতুপর্ণা চাকমারা শূন্যতার অবসান ঘটিয়েছেন আরেকটি জায়গায়। বাংলাদেশ দল নিজেদের খেলা আগের দুই বাছাইপর্বে গোল হজম করেছিল ২৫টি। ম্যাচপ্রতি গড়ে ৫ গোল! দুই ডজনের বেশি গোল হজম করা দলটি প্রতিপক্ষের জালে একবারও বল পাঠাতে পারেনি। গতকাল ইয়াঙ্গুনের থুউন্না স্টেডিয়ামে সেই গোলশূন্যতা কেটেছে ম্যাচের ১০ মিনিটে শামসুন্নাহার জুনিয়রের সৌজন্যে।

বলা হয়ে থাকে, ০ থেকে ১ মানে শুধু সংখ্যাগত অগ্রগতি নয়, বরং মানসিক বিপ্লব। পরের পথটা শুধুই এগিয়ে যাওয়ার। বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলও কাল এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে প্রথম গোলের পর শুধু এগিয়েছেই। তহুরা খাতুন, ঋতুপর্ণা, কোহাতি কিসকু, মুনকি আক্তারদের পাঁয়ের ছোঁয়ায় বাংলাদেশ পেয়েছে একের পর এক গোল। ৯০ মিনিট শেষের স্কোরলাইন ৭–০! কে বলবে, এই ম্যাচের জয়ী দল মেয়েদের ফিফা র‍্যাঙ্কিংয়ে বাহরাইনের চেয়ে ৩৬ ধাপ পিছিয়ে?

একের পর এক গোল উদ্‌যাপন করেছেন তহুরা–শামসুন্নাহাররা।
বাফুফে

১২৮ র‍্যাঙ্কিংয়ে থাকা বাংলাদেশ দল বাহরাইনকে গোল-বন্যায় ভাসিয়ে দেওয়ার পর স্বাভাবিকভাবেই সমর্থকদের প্রত্যাশা বাড়ছে। যাঁরা এমন মাইলফলকময় জয়ের কারিগর, সেই খেলোয়াড়, কোচিং স্টাফের মধ্যেও আত্মবিশ্বাস বাড়ার কথা। এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে এমন দারুণ শুরুর পর চূড়ান্ত পর্বে খেলার স্বপ্ন বাংলাদেশ দেখবে না কেন?

কিন্তু তেমন সম্ভাবনা আসলে কতটুকু? এখানে শুধু ২০২৬ এশিয়ান কাপ খেলার অঙ্কই নয়, আছে ২০২৭ ফিফা নারী বিশ্বকাপ আর ২০২৮ লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিক খেলার সমীকরণও। বাংলাদেশের জন্য বিশ্বকাপ আর অলিম্পিক এখনো অনেক দূরের পথ, প্রাথমিক লক্ষ্য এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্ব।

আরও পড়ুন

২০২৬ সালে অস্ট্রেলিয়ায় হতে যাওয়া নারী এশিয়ান কাপে খেলবে ১২টি দল। এর মধ্যে আয়োজক হিসেবে অস্ট্রেলিয়া এবং ২০২২ এশিয়ান কাপের শীর্ষ তিন দল হিসেবে চীন, দক্ষিণ কোরিয়া আর জাপানের জায়গা চূড়ান্ত।

বাকি আছে আটটি জায়গা। এই আট জায়গার জন্য এখন বাছাইপর্ব খেলছে মোট ৩৪টি দল। এই দলগুলোকে আট গ্রুপে ভাগ করা হয়েছে। প্রতিটি গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন দল এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্বের টিকিট পাবে। গ্রুপ রানার্সআপের জন্য দ্বিতীয় সুযোগ নেই।

আট গ্রুপের মধ্যে দুটিতে আছে পাঁচটি করে দল, ছয়টি গ্রুপে দল চারটি করে। বাংলাদেশ আছে চার দল নিয়ে গঠিত ‘সি’ গ্রুপে। এই গ্রুপের সব ম্যাচ হবে মিয়ানমারে। যা গতকাল ২৯ জুন শুরু হয়েছে, চলবে ৫ জুলাই পর্যন্ত।

আরও পড়ুন

বাংলাদেশ প্রতিপক্ষ হিসেবে স্বাগতিক মিয়ানমার, বাহরাইন ও তুর্কমেনিস্তানকে পেয়েছে। গ্রুপের প্রত্যেকে প্রত্যেকের সঙ্গে একটি করে মোট তিনটি ম্যাচ খেলবে।
গতকাল প্রথম দিনের খেলায় বাংলাদেশ বাহরাইনকে ৭–০ গোলে হারিয়ে পেয়েছে ৩ পয়েন্ট। তুর্কমেনিস্তানকে হারিয়ে সমান পয়েন্ট পেয়েছে স্বাগতিক মিয়ানমারও। তবে এ মুহূর্তে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে মিয়ানমারই। কারণ, তুর্কমেনিস্তানের বিপক্ষে তারা জিতেছে ৮–০ গোলে।

গ্রুপে সবচেয়ে শক্তিশালী দল মিয়ানমারই। সর্বশেষ ফিফা র‍্যাঙ্কিংয়ে দলটির অবস্থান ৫৫ নম্বরে। ২ জুলাই বাংলাদেশ দলের পরের ম্যাচ তাদের বিপক্ষেই। বাংলাদেশকে গ্রুপসেরা হতে হলে মিয়ানমারের সঙ্গে জিততে হবে, ড্র করলেও সম্ভাবনা থাকবে। সে ক্ষেত্রে দুই দলের তৃতীয় ম্যাচ হয়ে উঠবে বড় প্রভাবক, যেখানে গোলপার্থক্য আসবে বিবেচনায়।

৫ জুলাই বাংলাদেশের তৃতীয় ম্যাচের প্রতিপক্ষ তুর্কমেনিস্তান, র‍্যাঙ্কিংয়ে যারা ১৪১ নম্বরের দল, আফঈদাদের চেয়ে ১৩ ধাপ পিছিয়ে। তবে তুর্কমেনিস্তান ম্যাচে সর্বোচ্চ সুযোগ নেওয়ার আগে বাংলাদেশকে পার হতে হবে মিয়ানমার–বাধা। ২ জুলাইয়ের ম্যাচটিই অনেকখানি ঠিক করে দেবে বাংলাদেশ দলের এশিয়ান কাপের মূল পর্বে খেলার সম্ভাবনা, আরও বড় পরিসরে তাকালে ২০২৭ ফিফা নারী বিশ্বকাপ ও ২০২৮ লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পকের টিকিটও।

বিশ্বকাপে খেলতে হলে এশিয়ান কাপের সেমিফাইনালে উঠতে হবে, কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নিলেও ‘প্লে–ইন’ জিততে হবে। আর কোয়ার্টার ফাইনালে জায়গা করলেই খেলা যাবে অলিম্পিক বাছাইয়ে। তবে বাংলাদেশের দৃষ্টি আপাতত এশিয়ান কাপেই। সে জন্য আপাতত চোখ রাখতে হবে ২ জুলাই মিয়ানমার ম্যাচে।

আরও পড়ুন