জন্মদিন কীভাবে কাটাচ্ছেন হামজা
রাত ১২টা বাজতেই দেশের ফুটবলের ফ্যান পেজগুলোতে শুভেচ্ছা–বৃষ্টি। বাংলাদেশ দলের ফুটবলাররা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন মুহূর্তে তোলা ছবি দিয়ে জানাচ্ছেন শুভকামনা। সতীর্থ আর সমর্থকদের এই শুভেচ্ছা ও শুভকামনা হামজা চৌধুরীর জন্মদিনের জন্য। আজ ১ অক্টোবর হামজার ২৮তম জন্মদিন। বাংলাদেশের লাল–সবুজ জার্সি গায়ে চড়ানোর পর এবারই প্রথম।
লেস্টার সিটিতে খেলা এই ফুটবলারকে ঘিরে দেশের ফুটবলাঙ্গনে যখন শুভেচ্ছা–শুভকামনার ঢেউ, তখন ইংল্যান্ডে থাকা হামজার দিনটি কাটছে কেমন আবহে? জানতে চাইলে হামজার বাবা মোরশেদ দেওয়ান চৌধুরী ইংল্যান্ড থেকে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আসলে আমরা তো জন্মদিন ওভাবে পালন করি না। উইশ করা হয় আর উপহার দেওয়া হয়। ওই রকম জাঁকজমকভাবে কিছু করছি না।’
১৯৯৭ সালের ১ অক্টোবর ইংল্যান্ডের লাফবরোতে জন্ম হামজার। আনুষ্ঠানিকভাবে ফুটবল শেখার শুরু সাত বছর বয়সে লেস্টার সিটির একাডেমিতে যোগ দেওয়ার মাধ্যমে। অল্প সময়েই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডে নিজের অবস্থান তৈরি করে নেন।
শক্তিশালী ট্যাকল, প্রতিপক্ষের আক্রমণ ভাঙার দক্ষতা এবং পরিশ্রম করার মানসিকতা তাঁকে বয়সভিত্তিক ফুটবলে দ্রুত এগিয়ে দেয়। লেস্টারের কোচরা হামজাকে ‘টাফ মিডফিল্ডার’ হিসেবে দেখতেন, যে কিনা প্রতিপক্ষের খেলা নষ্ট করতে দক্ষ।
২০১৫ সালে লেস্টার সিটির সিনিয়র দলে সুযোগ পান হামজা। শুরুর দিকে ধারে খেলেছেন বার্টন অ্যালবিয়নের হয়ে। সেখান থেকে ফিরে লেস্টারের হয়ে প্রিমিয়ার লিগে অভিষেক ২০১৭ সালে। মাঝে ওয়াটফোর্ড আর শেফিল্ডে খেললেও এখনো তাঁর ঠিকানা লেস্টারই। দলটি এ বছর ইংলিশ ফুটবলের দ্বিতীয় স্তর চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে খেলছে।
হামজার বাবা জানালেন, এখন ফুটবল নিয়েই কাটে হামজার সময়। ছোটবেলায় জন্মদিনে খুব ধুমধাম করে কেক কাটা হতো। পাড়া-পড়শিরাও আসতেন। এখনকার চিত্র ঠিক উল্টো। আজকের বিশেষ দিনেও হামজা ব্যস্ত ক্লাবের অনুশীলন নিয়ে। মোরশেদ দেওয়ান বলেন, ‘ছোটবেলায় ওর জন্মদিন পালন করতাম। এখন তো হামজার বাচ্চাদেরই জন্মদিন পালন করতে হয়। তারটা আর সেভাবে হয় না। আজও তার ট্রেনিং আছে।’
গত ২৫ মার্চ ভারতের বিপক্ষে এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের ম্যাচ দিয়ে বাংলাদেশের জার্সিতে অভিষেক হয় হামজার। সেই ম্যাচে দল না জিতলেও হামজার খেলা প্রশংসিত হয়েছিল। পরে খেলেছেন ভুটানের বিপক্ষে প্রীতি এবং সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের ম্যাচেও। তিন ম্যাচে হামজা ১ গোল করেছেন, ১টি গোল সতীর্থকে দিয়ে করিয়েছেন।
ভারত ম্যাচের পর থেকেই হামজাকে ঘিরে বাংলাদেশে বাড়তি উন্মাদনা। ৯ অক্টোবর ঢাকার জাতীয় স্টেডিয়ামে হংকংয়ের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। সেই দলের প্রস্তুতি চলছে। তবে হামজা এখনো দলের সঙ্গে যোগ দেননি।
৪ অক্টোবর সোয়ানসি সিটির সঙ্গে ম্যাচ খেলে ৬ অক্টোবর ঢাকায় পা রাখার কথা রয়েছে হামজার। তাঁর বাবা মোরশেদ দেওয়ান বলেন, ‘আমাদেরও আসার চিন্তা আছে। তবে কবে যাব, সেটা এখনো বলতে পারছি না। ওর একটা ম্যাচ আছে ৪ তারিখ। মনে হয় ওই ম্যাচের পর যেতে হবে। এখনো কিছু নিশ্চিত হয়নি।’
দেশে না এলেও ইংল্যান্ড বসেই হংকং ম্যাচের উত্তাপ টের পেয়েছে হামজার পরিবার। কয়েক দিন আগে টিকিট ছাড়ার পর ৩০ মিনিটের মধ্যে সাধারণ গ্যালারির ১৮ হাজার টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। বিষয়টি অবাক করেছে হামজার বাবাকেও, ‘৩০ মিনিটে ১৮ হাজার টিকিট বিক্রি শেষ। এটা কি সত্যি! কীভাবে হলো। আমার কিছু লোকজন আছে, তাদের বলেছি অনলাইনে টিকিট কিনো, ওরা কিনতে কিনতেই নাকি শেষ। কাল রাতে একজন ফোন করেছে ব্রাক্ষণবাড়িয়া থেকে। বলল, “টিকিট পাইনি।”’
জুনে সিঙ্গাপুর ম্যাচেও টিকিট পাননি অনেকে। তখন বাংলাদেশে এসে মধুর এক অভিজ্ঞতা হয়েছে মোরশেদ দেওয়ানের। স্টেডিয়ামে ঢোকার পথে সমর্থকেরা তাঁর থেকে টিকিট চেয়ে বসেন। সেই স্মৃতি রোমন্থন করে হামজার বাবা বলেন, ‘আগের বার যখন আমি খেলা দেখার জন্য গিয়েছিলাম, মানুষ আমাকে এমনভাবে ধরেছে, “আঙ্কেল, আঙ্কেল একটা টিকিট”। শেষমেশ আমি ওখানে দাঁড়াতেই পারিনি। হামজার খেলা দেখতে এত আগ্রহ, আমি তো অবাক। কেউ মধ্যপ্রাচ্য থেকে এসেছে, কেউ ইউরোপ থেকে। অনেকে টিকিট পায়নি…খুব খারাপ লেগেছে।’
এবারও হামজাকে ঘিরে আলোচনা। মানুষের এত আগ্রহ, এত ভালোবাসা মোরশেদ দেওয়ানকে দারুণভাবে রোমাঞ্চিত করে, ‘হামজা যাওয়ার পর মানুষের মধ্যে ফুটবল খেলা নিয়ে যে একটা আগ্রহ জন্মেছে, এটা সত্যি দারুণ। সিঙ্গাপুর ম্যাচেও টিকিট পায়নি মানুষ। এবারও শুনছি একই অবস্থা। এই যে মানুষের ভালোবাসা, এটা অনেক বড় পাওয়া।’