এখনো কি সর্বকালের সেরা নিয়ে বিতর্কটা আছে, লিনেকারের জিজ্ঞাসা

আর্জেন্টাইন অধিনায়ক লিওনেল মেসিরয়টার্স

কোনো একটি বিষয়ে গ্যারি নেভিল আর রয় কিনের একমত হওয়াটা বিস্ময়কর ব্যাপার। একজনের অবস্থান উত্তরে হলে আরেকজন থাকেন দক্ষিণে। নিজ অবস্থানে অটল থেকে টক শোতে বিবাদে জড়িয়ে পড়ার ঘটনাও অতি সাধারণ।

তবে দুই প্রান্তের দুই বিশ্লেষককে এবার এক প্রান্তে নিয়ে এসেছেন লিওনেল মেসি। আনবেন নাই–বা কেন, ৩৫ বছর বয়সী আর্জেন্টাইন অধিনায়ক কাতার বিশ্বকাপে যা করে চলেছেন, ‘বাঘে-মহিষের’ও এক ঘাটে জল খাওয়ার কথা। বিশেষ করে সেমিফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে আর্জেন্টিনার তৃতীয় গোলটি যেভাবে বানিয়ে দিয়েছেন, তাতে মুগ্ধ আলোচক-সমালোচকদের সবাই।

ইংল্যান্ডের সাবেক স্ট্রাইকার গ্যারি লিনেকার তো সবচেয়ে বড় আলাপটিই তুলেছেন। ১৯৮৬ বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোলদাতা টুইট করেছেন, ‘এখনো কি বিতর্কটা আছে? আমি সর্বকালের সেরার কথা জিজ্ঞেস করছি।’

প্রায় দেড় দশক ধরে বিশ্ব ফুটবলে দারুণ সব কীর্তি গড়ে যাচ্ছেন মেসি ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। এই দুজনের মধ্যে কে সেরা—এ নিয়ে প্রায়ই বিতর্ক ওঠে। কিংবদন্তি ডিয়েগো ম্যারাডোনা ও পেলেকে জড়িয়েও প্রশ্ন ওঠে—ফুটবলে সর্বকালের সেরা কে?

আরও পড়ুন

খেলার ধরন, ব্যক্তিগত কীর্তি, ক্লাব ও দেশের হয়ে অবদান—এমন নানা মানদণ্ডে ‘সর্বকালের সেরা’ প্রশ্নে একেকজনের ভোট একেকজনকে। কেউই সর্বজনবিদিত নন। যাঁরা মেসিকে এগিয়ে রাখেন না, তাঁদের প্রশ্ন মেসির আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে দলগত অর্জন নিয়ে। ২০১৪ থেকে টানা তিন বছর বিশ্বকাপ ও মহাদেশীয় টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলার পরও যা তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে।

গত বছর আর্জেন্টিনাকে কোপা আমেরিকায় চ্যাম্পিয়ন করে কিছুটা ‘শাপমোচন’ করেছেন মেসি। তবে বিশ্বকাপ মঞ্চে ব্যক্তিগত নৈপুণ্য এবং দলগত সাফল্যের ঘাটতি ছিল। কাতারে ক্যারিয়ারের শেষ বিশ্বকাপ খেলতে এসে সেই ঘাটতি প্রায় মিটিয়ে ফেলার পথে মেসি।

এরই মধ্যে দলকে নিয়ে গেছেন ফাইনালে, যে ফাইনালের পথে ৫ গোল ও ৩ অ্যাসিস্ট করে আরেকবার মঞ্চায়ন করেছেন নিজের শ্রেষ্ঠত্বেরও। মঙ্গলবার রাতের সেমিফাইনালে আর্জেন্টিনার তৃতীয় গোলটি যার মোক্ষম প্রমাণ। ইওস্কো গাভারদিওলকে কাটিয়ে সীমানার কাছাকাছি পৌঁছে কাট ব্যাক করে হুলিয়ান আলভারেজকে পাস দেওয়ার পুরো খেলায় অভিভূত ফুটবল–বিশ্ব, যা দেখে লিনেকারের ওই টুইট—বোঝাতে চাইলেন সর্বকালের সেরার বিতর্ক মীমাংসা হয়ে গেছে।

ইংল্যান্ডের আরেক সাবেক ফুটবলার নেভিলও মেসির ওই ‘অ্যাসিস্টে’ মুগ্ধ। আইটিভির টক শোতে এই ধারাভাষ্যকার বলেন, ‘তৃতীয় গোলটি ছিল বিস্ময়কর মুহূর্ত! এই বিশ্বকাপে সে একটা লক্ষ্য নিয়ে এসেছে। ওটা মেসিময় মুহূর্তের একটা।’

আরও পড়ুন

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে সতীর্থের সঙ্গে কিনকে একমত হতে দেখা বিরল ঘটনা। মেসির বেলায় ঘটল সেটিই। সাবেক এই আইরিশ ফুটবলার নেভিলের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বলেন, ‘ওর খেলা দেখাটা চোখের শান্তি। সত্যিই তা–ই। এই বয়সেও যে মানের খেলছে, ভালো খেলোয়াড়দের বিপক্ষে যা করছে, সত্যিই আশা করি, সে এবার বিশ্বকাপ জিতবে।’

মেসির হাতে বিশ্বকাপ ট্রফি দেখতে চান ব্রাজিল কিংবদন্তি রিভালদো পেরেইরাও। ২০০২ বিশ্বকাপজয়ী এই তারকা ইনস্টাগ্রাম পোস্টে মেসির জন্য শুভকামনা জানিয়ে লেখেন, ‘ব্রাজিল আর নেইমার না থাকায় আমি এখন আর্জেন্টিনাকে সমর্থন করছি। মেসি, আরও আগেই বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়াটা তোমার প্রাপ্য ছিল। তবে স্রষ্টা সব জানেন, রোববারেই তোমার মাথায় উঠবে সেই মুকুট। তুমি যে ধরনের ব্যক্তিত্ব আর সব সময় যে সুন্দর ফুটবল খেলে এসেছ, এ ট্রফি তোমার প্রাপ্য। তোমাকে টুপিখোলা অভিনন্দন। স্রষ্টা তোমার মঙ্গল করুন।’

আরও পড়ুন

মেসির হাতে বিশ্বকাপ ট্রফি দেখার অপেক্ষায় তাঁর বন্ধু ও সাবেক সতীর্থ লুইস সুয়ারেজও। সাবেক বার্সেলোনা ফরোয়ার্ড ইনস্টাগ্রাম পোস্টে লিখেছেন, ‘তুমি যে বিশ্বসেরা, সেটি দেখাতে কখনো ক্লান্তি বোধ করোনি। এই ছেলে ফুটবলকে যা দিয়েছে, গোটা বিশ্ব তাকে উঠে দাঁড়িয়ে হাততালি দিক।’