চেলসিতে পটারের ফুটবল দর্শনের ভবিষ্যৎ কী

চেলসি কোচ গ্রাহাম পটারছবি: এএফপি

ফুটবলে একটা আপ্তবাক্য আছে—কোচদের ব্যাগটা সব সময় গোছানোই থাকে। ক্লাব বা জাতীয় দল—কোচের অনেক ক্ষমতা। কিন্তু চাকরির কোনো নিশ্চয়তা নেই—আজ আছেন তো কাল নেই! এই যেমন টমাস টুখেলের কথাই ধরুন, হঠাৎ করেই চেলসির কোচের চাকরিটি হারিয়েছেন তিনি।

মৌসুম শুরুর পর মাস না পেরোতেই নতুন চাকরির সন্ধান করতে হচ্ছে জার্মান কোচকে। অথচ এই টুখেলই এক মৌসুম আগে চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতিয়েছিলেন চেলসিকে। তাঁর জায়গায় এখন কোচের দায়িত্ব নিচ্ছেন গ্রাহাম পটার। প্রশ্ন হচ্ছে, পটার কি পারবেন চেলসির দুরবস্থার অবসান ঘটিয়ে পথে ফেরাতে? তাঁর কোচিং কৌশলই–বা কেমন?

দর্শন বদলাতে হবে গ্রাহামকে

নির্দিষ্ট একটি শৈলীতে দলকে সংগঠিত করে খেলানোয় অভ্যস্ত পটার। তবে চেলসিতে সম্ভবত নিজের সৃষ্টিশীলতা ভুলে যেতে হবে পটারকে। চেলসিতে এমন খেলোয়াড় অবশ্য আছেন, যাঁরা কিনা পটারের পাসিং ফুটবলের দর্শনকে ধারণ করতে পারেন। তবে চেলসি মালিকের ছটফট মানসিকতা, পটারকে থিতু হয়ে নিজের দর্শনে দল পরিচালনার জন্য যথেষ্ট সময় দেওয়ার কথা নয়।

পটার গত মৌসুম থেকে ব্রাইটনকে ৩–৪–২–১ ফরমেশনে খেলিয়ে আসছেন। এই ফরমেশনে সাধারণত দুজন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার খেলিয়ে থাকেন তিনি। যেখানে এই দুই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার ডিফেন্ডারদের সহায়তার পাশাপাশি সামনে থাকা দুই মিডফিল্ডারের সঙ্গেও কাজ করেন। এই কৌশল উইং–ব্যাককে ওপরে উঠে আক্রমণভাগকে সহায়তা করার পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়। একপর্যায়ে উইং–ব্যাক সরাসরি ফরোয়ার্ড লাইনেও ভূমিকা রাখতে শুরু করে। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে ২–১ ব্যবধানের জয়ে জোড়া গোল করেছেন ব্রাইটনের পাসকাল গ্রোস। তাঁর দুটি গোলই এসেছে এই কৌশলে প্রতি–আক্রমণ থেকে।

তবে চেলসিতে নিজের দর্শনকে এত সহজে এগিয়ে নেওয়ার সময় ও সুযোগ কোনোটাই ঠিকঠাক হয়তো পাবেন না পটার। এর আগে ফ্রাঙ্ক ল্যাম্পার্ডের জায়গায় দায়িত্ব নিয়ে টুখেল তাৎক্ষণিভাবে দলের ওপর নিজের প্রভাব রাখতে শুরু করেন। ক্লাব–মালিকদের প্রত্যাশা কেমন হবে, তা নিশ্চয় অজানা নয় পটারেরও। তাই শুরুতে দলকে সংগঠিত করে খেলানোর পরিবর্তে ইতিবাচক ফল আনার দিকেই বেশি নজর দিতে হবে তাঁকে।

রক্ষণ সমস্যার সমাধান চাই

স্টামফোর্ড ব্রিজে প্রথম কয়েক মাসে টুখেলের সাফল্যের প্রধান কারণ ছিল জমাট রক্ষণ। তবে রক্ষণভাগ থেকে আন্তোনিও রুডিগার ও আন্দ্রেস ক্রিস্টেনসেনের বিদায় মারাত্মক সমস্যায় ফেলেছে চেলসিকে। নতুন মৌসুমে কালিদু কুলিবালি ও ওয়েসলে ফোফানার আগমন এখনো ফলপ্রসূ হয়নি। ডিফেন্ডার হিসেবে এ দুজনের সামর্থ্য নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। তবে এখনো স্টামফোর্ড ব্রিজে পায়ের নিচে মাটি খুঁজে পাননি তাঁরা। আপাতত তাই কিছু সময়ের জন্য অভিজ্ঞ থিয়াগো সিলভার ওপরই বেশি নির্ভর করতে হবে পটারকে। সঙ্গে লেফট–ব্যাক বেন চিলওয়েল এবং মার্ক কুকুরেল্লাকে কীভাবে ব্যবহার করবেন, সেই উপায়ও খুঁজে বের করতে হবে নতুন কোচকে।

সঠিক ফরমেশন খুঁজে পাওয়া

ব্রাইটনের খেলোয়াড়েরা পটারের কৌশলের সঙ্গে দারুণভাবে মানিয়ে নিয়েছিলেন। যার ফল মাঠের পারফরম্যান্সেও দেখা গেছে। অন্যদিকে ৩–৪–৩ ফরমেশনে দলকে খেলিয়ে চেলসিতে শেষ বেলায় এসে ফল পাননি টুখেল। এখন পটারকে খেলোয়াড়দের সামর্থ্য বিবেচনা করেই নিজের কৌশল বাস্তবায়ন করতে হবে। যেখানে ফল লাভের পাশাপাশি দেখার সৌন্দর্যের দিকেও নজর দিতে হবে। বিশেষ করে উইং–ব্যাক থেকে সর্বোচ্চটা বের করে আনার ব্যাপারেও কৌশলী হতে হবে এই ইংলিশ কোচকে।

মাঝমাঠ নিয়ে কৌশলী হতে হবে

মাঝমাঠে এনগুলো কান্তের চোট গত মৌসুম থেকে বেশ ভোগাচ্ছে চেলসিকে। আশ্চর্যজনকভাবে দলবদলে কাঁড়ি কাঁড়ি অর্থ খরচ করলেও এ দিকটা একেবারেই এড়িয়ে গেছে চেলসি কর্তৃপক্ষ। আর এই দিকটা ভোগাতে পারে পটারকে। লিগে ব্রাইটনের আলো ছড়ানোর মূল কারণই ছিল বল দখলে আধিপত্য দেখানো। এমনকি প্রিমিয়ার লিগের একাধিক বড় ক্লাবের বিপক্ষেও এ জায়গায় দাপট দেখাতে পেরেছে তারা। তাই মাঝমাঠে জর্জিনিও, কোভাচিচ, রুবেন লুফটাস–চেক আর কনর গালাগহারকে এখন কীভাবে ব্যবহার করবেন, সে কৌশলও খুঁজে বের করতে হবে তাঁকে।