চেলসিতে ফিরে মরিনিও বললেন, কেউ চারটি লিগ না জেতা পর্যন্ত আমিই সেরা
পোর্তোকে চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতানোর পর ইউরোপের শীর্ষ ৫ লিগে যাত্রাটা চেলসিকে দিয়েই শুরু করেছিলেন জোসে মরিনিও। তাঁর হাত ধরে দুই মেয়াদে রেকর্ড তিনটি প্রিমিয়ার লিগ জিতেছিল চেলসি, ক্লাবের ইতিহাসে যা কোনো কোচের সর্বোচ্চ লিগ জয়।
সম্প্রতি আবার চেলসিতেই ফিরছেন মরিনিও। তবে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবটির কোচ হিসেবে নয়, মরিনিও এবার স্টামফোর্ড ব্রিজে ফিরলেন বেনফিকার কোচ হয়ে। চ্যাম্পিয়নস লিগে আজ বাংলাদেশ সময় রাত একটায় চেলসির মুখোমুখি হবে বেনফিকা।
এই ম্যাচ সামনে রেখে মরিনিও দাবি করেছেন, তিনি এখনো চেলসির ইতিহাসে সেরা কোচ। এর আগে ২০১৭ সালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কোচ হিসেবে স্টামফোর্ড ব্রিজে ফেরার ম্যাচে দর্শকেরা তাঁকে ‘জুডাস’ (বিশ্বাসঘাতক অর্থে) বলে কটাক্ষ করেছিলেন, জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘জুডাস এখনো নাম্বার ওয়ান।’
সেই কথা এখনো বিশ্বাস করেন কি না, জানতে চাইলে মরিনিও বলেন, ‘আমার আগে চেলসি সামান্য কিছু জিতেছিল, কিন্তু আমি আসার পর জয়ের ধারাবাহিকতা পেয়েছে। এরপর নতুন দল ও নতুন কোচের আগমন ঘটে, আরও ট্রফি আসে, ইউরোপিয়ান ট্রফিও জিততে থাকে আর সবচেয়ে বড় অর্জন হলো চ্যাম্পিয়নস লিগ। চেলসি এখন জয়ের মেশিন। তবে যতক্ষণ না কেউ চারটি লিগ জেতে, আমিই “বিগেস্ট ওয়ান” (সবার সেরা)।”’
মরিনিওর ফেরা নিয়ে আগ্রহের চাপ সামলাতে চেলসি গতকাল স্ট্যামফোর্ড ব্রিজের টেড ড্রেক স্যুইটে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সেখানে দেয়ালে ঝুলানো আছে দুটি ছবি—একটি মরিনিওর ২০০৬ সালের প্রিমিয়ার লিগ ট্রফি উঁচিয়ে ধরার এবং অন্যটি ২০১৫ সালের তৃতীয় শিরোপা জেতানোর পর তিন আঙুল তুলে দেখানোর। মরিনিও বসার কয়েক ঘণ্টা আগে একই জায়গায় বসেছিলেন চেলসির বর্তমান কোচ এঞ্জো মারেসকা, তবে তখন সেখানে তাঁর ছবি ছিল না।
মরিনিও এখনো ফুটবলের অন্যতম আকর্ষণীয় ও বিতর্কিত চরিত্র। ২৫ মিনিটের সংবাদ সম্মেলনের শেষে তিনি কিছু সাংবাদিকের সঙ্গে করমর্দন করেন এবং ক্লাবের দীর্ঘদিনের কর্মী থ্রেসা কনিলিকে জড়িয়ে ধরেন।
পুরো পরিবেশটা এমন ছিল যে মনে হচ্ছিল এটা প্রতিপক্ষ দলের কোচের সংবাদ সম্মেলন নয় বরং একান্ত সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠান। এর মাঝে মরিনিও একজনকে তথ্যও সংশোধন করে দিলেন। প্রশ্ন করার সময় এক সাংবাদিক বলেন, ২০০৪ সালে চেলসি কোচ হিসেবে আত্মপ্রকাশের সময় মরিনিও নিজেকে ‘দ্য স্পেশাল ওয়ান’ বলেছেন। তখন মরিনিও বাধা দিয়ে বলেন, ‘অ্যা স্পেশাল ওয়ান।’
চেলসির সমর্থকেরা যে এখনো তাঁকে ভালোবাসেন, সেটিও মরিনিও উল্লেখ করেন। পাশাপাশি চাপের মুখে থাকা মারেসকার প্রশংসাও করেন। তবে খানিকটা স্বভাববিরোধী হয়ে নিজেদের আন্ডারডগ বলেও দাবি করেন মরিনিও। তাঁর মতে, এই প্রতিযোগিতায় বেনফিকার সূচি অন্য ক্লাবের তুলনায় কঠিন।
মরিনহো চেলসিতে দুই ভিন্ন মেয়াদে (২০০৪-০৭, ২০১৩-১৫) তিনটি লিগসহ মোট আটটি ট্রফি জিতেছেন। তবে চ্যাম্পিয়নস লিগে কখনো সেমিফাইনালের গণ্ডি পেরোতে পারেননি। এবার তিনি চতুর্থ ক্লাবের কোচ হিসেবে অষ্টমবার স্টামফোর্ড ব্রিজে ফিরছেন। এর আগে প্রথমবার ইন্টার মিলানের হয়ে ফিরে জয় পেয়েছিলেন। তবে ইউনাইটেড ও টটেনহামের হয়ে ছয় ফেরায় দুই ড্র করলেও হেরেছে চারবার।
স্টামফোর্ড ব্রিজের সঙ্গে মরিনিওর সম্পর্ক এতই গভীর যে এই স্টেডিয়ামের কাছে তাঁর একটি বাড়িও আছে। যেখানে মরিনিওর ছেলে জোসে জুনিয়র থাকেন। সেখান থেকে হেঁটে ম্যাচ দেখতে আসা যায়। ফলে এখানকার দর্শকদের সঙ্গে একটা আত্মিক সম্পর্ক অনুভব করেন মরিনিও, ‘বিভিন্ন দলের হয়ে এখানে ফিরেছি, তাই কোনো বৈরিতা অনুভব করি না। আমি এ পরিস্থিতি থেকে নিজেকে আলাদা রাখতে পারি। (মাঠে নামলে) তারা ভুলে যাবে আমি কে, আমি ভুলে যাব ওরা কে। শুধু জয়ই তখন শেষ কথা। আমি এখন আর নীল নই, আমি লাল এবং জিততে চাই।”
মরিনিও যোগ করেন, ‘তবে হ্যাঁ, আমি চিরকালই নীল। আমি তাদের ইতিহাসের অংশ, তারা আমার ইতিহাসের অংশ। আমি চেলসিকে বড় হতে সাহায্য করেছি, তারা আমাকে বড় করেছে। দেয়ালে যে ছবিগুলো আছে, সব ক্লাব তা করে না। অনেক ক্লাব ইতিহাস মুছে দিতে চায়। আমার কাছে চেলসি সব সময়ই চেলসি থাকবে—খেলার আগে বা খেলার পর।’