নিষিদ্ধ হয়ে ‘প্রচণ্ড মর্মাহত’ মেসি, মায়ামি সহমালিক বললেন, নিষেধাজ্ঞার নিয়মটি ‘নির্মম’

ইন্টার মায়ামি তারকা লিওনেল মেসি ও জর্দি আলবাএএফপি

যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ সকার (এমএলএস) কর্তৃপক্ষ এক ম্যাচ নিষিদ্ধ করেছে ইন্টার মায়ামি তারকা লিওনেল মেসিকে। এই শাস্তিতে আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি ‘প্রচণ্ড মর্মাহত’ হয়েছেন বলে জানিয়েছেন মায়ামির সহমালিক হোর্হে মাস।

গত বুধবার প্রদর্শনী ম্যাচ এমএলএস অল-স্টার গেমে খেলেননি মেসি ও তাঁর মায়ামি সতীর্থ জর্দি আলবা। নিয়ম অনুযায়ী, লিগের কাছ থেকে আগেই অনুমতি না নিয়ে কোনো খেলোয়াড় যদি অল-স্টার গেমে অনুপস্থিত থাকেন, তাহলে তিনি তাঁর ক্লাবের পরের ম্যাচে নিষিদ্ধ হবেন। সেই অল-স্টার গেমে মেক্সিকোর লিগা এমএক্স অল-স্টারস দলকে ৩-১ গোলে হারায় এমএলএস অল-স্টারস। এরপর স্থানীয় সময় শুক্রবার বিকেলে মায়ামির পরের ম্যাচে মেসি ও আলবাকে নিষিদ্ধ করে এমএলএস কর্তৃপক্ষ। আগামীকাল বাংলাদেশ সময় ভোরে নিজেদের পরের ম্যাচে সিনসিনাটির মুখোমুখি হবে মায়ামি।

আরও পড়ুন

মায়ামির সহমালিক মাসের অবস্থান এই শাস্তির বিপক্ষে। মেসি ও আলবার পাশে দাঁড়িয়ে মাস বলেছেন, প্রদর্শনী ম্যাচে না খেলার জন্য শাস্তির এই নিয়ম পাল্টানো প্রয়োজন এবং শাস্তিটি ‘নির্মম’। এই শাস্তির ঘোষণা আসার পর সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন যুক্তরাষ্ট্রের এই ধনকুবের। মাস জানিয়েছেন, শাস্তির খবর মেসি ও আলবাকে জানানোর পর ‘প্রত্যাশানুযায়ী’ই প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন তাঁরা। মাসের ভাষায়, ‘অবশ্যই এটা ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া ছিল না। তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চায়, খেলতে চায়। এ জন্যই তারা এখানে এসেছে; খেলবে এবং জিতবে। আগামীকালের ম্যাচের তাৎপর্যটা তারা বোঝে। তাই প্রতিক্রিয়াটা আমরা যেমন আশা করেছিলাম তেমনই পেয়েছি, কারণ (শাস্তির) সিদ্ধান্তটা তারা বুঝতে পারছে না। তারা বুঝতে পারছে না, প্রদর্শনী ম্যাচে না খেলার জন্য কেন তাদের সরাসরি নিষিদ্ধ করা হবে। নিয়ম এটাই হলেও সেটা তাদের বোধগম্য নয়।’

ইন্টার মায়ামি সহমালিক হোর্হে মাস
মেজর লিগ সকার ওয়েবসাইট

২০২৫ সালের মৌসুম শেষ হওয়ার সঙ্গে মেসির সঙ্গে মায়ামির বর্তমান চুক্তির মেয়াদও ফুরোবে। সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, মেসির সঙ্গে এখন চুক্তি নবায়নের বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে মায়ামি। এর মধ্যে নিষিদ্ধ হওয়াটা মেসির ওপর ‘দীর্ঘ মেয়াদে কোনো প্রভাব ফেলবে না’ বলেই ‘আশা’ করছেন মাস, ‘যেমনটা মনে করেছিলাম, সে প্রচণ্ড মর্মাহত, খুব হতাশ হয়েছে। আশা করি, এটা দীর্ঘ মেয়াদে কোনো প্রভাব ফেলবে না। লিগ কীভাবে চলে সে বিষয়ে প্রাথমিকভাবে খেলোয়াড়দের মানসিকতায় কি এটা প্রভাব ফেলবে? কোনো সন্দেহ নেই সেটাই হবে।’

আরও পড়ুন

গত ৩০ এপ্রিল থেকে মায়ামির প্রতিটি ম্যাচেই ৯০ মিনিট করে খেলেছেন ৩৮ বছর বয়সী মেসি। গত ১৪ জুন থেকে খেলেছেন ৯ ম্যাচ, এর মধ্যে ৪ ম্যাচ খেলেছেন ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপে। সর্বশেষ গত ২৭ এপ্রিল মায়ামির ম্যাচে মেসিকে দেখা যায়নি। কিন্তু তার পর থেকে মায়ামির কোনো ম্যাচ মিস করেননি আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি।

আরেকটু পিছিয়ে হিসাব করলে গত ২ এপ্রিল থেকে মায়ামির খেলা ২৩টি ম্যাচের মধ্যে ২২ ম্যাচেই প্রতিটি মিনিট মাঠে ছিলেন মেসি। এর মধ্যে ৩৫ দিনের ব্যবধানে খেলেছেন ৯ ম্যাচ। সংবাদমাধ্যম তখন জানিয়েছিল, বিশ্রাম নিতেই এমএলএস অল-স্টার গেমে খেলেননি মেসি।

আগামীকাল মায়ামির ম্যাচে খেলা হচ্ছে না মেসি ও আলবার
এএফপি

মাস সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, এমএলএস অল-স্টার গেমে মেসি ও আলবার না খেলার সিদ্ধান্তটি ক্লাবের। আলবা মায়ামির সর্বশেষ ম্যাচে চোট পেয়েছেন বলেও জানিয়েছেন মাস, ‘বছরের এই সময় পর্যন্ত আমরা ৩৩ ম্যাচ খেলেছি। এই সপ্তাহে তাদের (এমএলএস অল-স্টার ম্যাচে) বসে থাকার সিদ্ধান্তটা ক্লাবের এবং মেসি ও আলবার প্রতি আমার পূর্ণ সমর্থন আছে। তারা ৩৫ দিনের মধ্যে ৯টি ম্যাচ খেলেছে। সব কটিই কঠিন ম্যাচ...আমাদের আগামীকাল ম্যাচ আছে এবং আগামী ৩৪ দিনের মধ্যে আছে ১০টি ম্যাচ।’

আরও পড়ুন

মাস নিষেধাজ্ঞার নিয়মের সমালোচনা করে বলেন, ‘এমএলএসে একটি নিয়ম আছে, অল-স্টার গেমে খেলতে না পারলে এক ম্যাচ নিষিদ্ধ হবে। আমি মনে করি এটা বাজে নিয়ম, তবে এরপরও এটা তো নিয়মই। আমি এটাকে বাজে নিয়ম মনে করি কারণ, এটা খেলোয়াড়কে এমন অবস্থানে ঠেলে দেয়, যেখানে উৎসবমুখর অল-স্টার প্রদর্শনী ম্যাচ নাকি নিয়মিত মৌসুমের ম্যাচ—এর মধ্যে যেকোনো একটি বেছে নিতে হয়। আমার মতে, নিয়মিত মৌসুমের ম্যাচই গুরুত্বপূর্ণ এবং ক্লাবকে সব সময় সবকিছুর ওপরে রাখার জন্য আমি মেসি ও আলবার প্রশংসা করছি।’

মাস আরও জানান, এই নিয়মে ‘ক্লাব, সমর্থক ও স্পনসর’রা মর্মাহত হয়েছেন। এমএলএসকে তিনি অল-স্টার গেম খেলার সূচি এমনভাবে ঠিক করতে বলেছেন, যেন তা খেলোয়াড়দের বেকায়দায় না ফেলে। মাস সরাসরি বলেছেন, ‘সরাসরি বললে, আমার মতে এই নিয়মের অধীনে শাস্তিটি নির্মম।’