আবারও জেলে যেতে পারেন রোনালদিনিও

এর আগে ২০২০ সালে পাসপোর্ট ছাড়া প্যারাগুয়েতে প্রবেশ করে জেলে গিয়েছিলেন রোনালদিনিওছবি: এএফপি

আবারও বিতর্কের কেন্দ্রে রোনালদিনিও। একটি ক্রিপ্টোকারেন্সির মামলায় তাঁকে সাক্ষ্য দিতে ডেকেছিল ব্রাজিলের পার্লামেন্টারি কমিশন অব ইনকোয়ারি (সিপিআই)। তবে সাবেক এই ফুটবলার সেই ডাকে সাড়া দেননি। সিপিআই জানিয়েছে, পরবর্তী সমনে উপস্থিত না হলে রোনালদিনিওকে আটক করার নির্দেশ দেওয়া হবে। বিশ্বকাপজয়ী তারকাকে স্থানীয় সময় ২৪ আগস্ট সকালে হাজির হতে বলা হয়েছে।

রোনালদিনিওকে সাক্ষ্য দিতে ডাকা হয়েছে ‘১৮কেরোনালদিনিও’ নামের একটি কোম্পানির বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলায়। কোম্পানিটির বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা মানুষের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করেছে। ক্ষতিগ্রস্তদের পক্ষ থেকে ৬ কোটি ১২ লাখ মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণের একটি মামলা করছে সিপিআই।

ব্রাজিলের পাবলিক প্রসিকিউটর অফিসের অভিযোগ,  ‘১৮কেরোনালদিনিও’ ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহার করে আর্থিক পিরামিড স্কিমে জড়িয়ে পড়েছিল। তারা বিনিয়োগকারীদের বলেছিল, ন্যূনতম ৩০ মার্কিন ডলার ভার্চ্যুয়াল মুদ্রা বিনিয়োগ করলে প্রতিদিন ২ শতাংশ লাভ দেওয়া হবে। আরেকজন ব্যক্তিকে যুক্ত করলে এই লাভের পরিমাণ দাঁড়াবে ৭ শতাংশ।

আরও পড়ুন
যুক্তরাষ্ট্রের অরলান্ডোতে কিংবদন্তি ও বর্তমান তারকাদের এক প্রদর্শনী ম্যাচে এভাবেই ক্যামেরাবন্দী হয়েছিলেন ব্রাজিলের দুই সাবেক ফুটবলার রোনালদো ও রোনালদিনিও
ছবি: ইনস্টাগ্রাম

ব্রাজিলের পোর্তো অ্যালেগ্রাভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘জিরো হোরা’র খবরে বলা হয়, সিপিআই ‘১৮কেরোনালদিনিও’র সঙ্গে রোনালদিনিওর সম্পৃক্ততার বিষয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসা করতে চায়। এ জন্য মঙ্গলবার তাঁকে উপস্থিত থাকার জন্য ডাকা হলেও তিনি সাড়া দেননি। এর আগের দিন ফেডারেল সুপ্রিম কোর্টে রোনালদিনিওর আইনজীবীরা আবেদন জানান, তাঁকে যেন সাক্ষ্য প্রদান থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তবে আদালত তাঁর আবেদনটি প্রত্যাখ্যান করে বলেন, রোনালদিনিওকে উপস্থিত হতে হবে। তবে তিনি চাইলে তাঁকে দোষারোপের বিষয়ে চুপ থাকতে পারেন। এরপরও সিপিআই–এর সামনে উপস্থিত না হওয়ায় এর চেয়ারম্যান অরিও রিবেইরো বলেন, বৃহস্পতিবার হাজির না হলে পুলিশ দিয়ে জোর করে ডেকে আনা হবে।

রোনালদিনিও কীভাবে জড়িত?

মার্কার খবরে বলা হয়, ‘১৮কেরোনালদিনিও’ নামের কোম্পানিটির সঙ্গে রোনালদিনিও জড়িত নন বলে দাবি করেছেন তাঁর আইনজীবী। প্রতিষ্ঠানটি তাঁদের ব্যবসা পরিচালনায় রোনালদিনিওর নাম ও ছবি ব্যবহার করতে চেয়েছে। সেই সূত্রে তিনি প্রতিষ্ঠানটির ‘শুভেচ্ছা দূত’ হিসেবে যুক্ত হয়েছিলেন। এর বেশি সংশ্লিষ্টতা নেই।  

‘জিরো হোরা’র খবরে বলা হয়, ২০১৯ সালে ব্রাজিলের পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান সিভিএম ‘১৮কেরোনালদিনিও’ নামের প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে। প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্যমতে, ২০১৫ সালে একটি স্পোর্টস ওয়াচ ব্র্যান্ড হিসেবে তাদের যাত্রা শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে রোনালদিনিও তাদের শুভেচ্ছা দূত হন। একপর্যায়ে বহু ধাপ বিপণন বা এমএলএম মডেলে তারা ক্রিপ্টোকারেন্সি, স্টক এক্সচেঞ্জে কেনাবেচনা এবং অংশগ্রহণকারীদের লভ্যাংশ বণ্টনের কার্যক্রম শুরু করে।

আরও পড়ুন
প্যরাগুইয়ান আদালতে রোনালদিনহো।
ছবি: রয়টার্স

ওই বছরই রোনালদিনিওর আইনজীবী সের্হিও কুইরোজ জানান, রোনালদিনিওর সঙ্গে কোম্পানিটির চুক্তি বাতিল করা হয়েছে। তবে তাদের ওয়েবসাইটে ‘১৮কেরোনালদিনিও’ ব্র্যান্ডের কার্যক্রম চলমান ছিল। কুইরোজ জানান, শুধু ঘড়ি বিক্রিতে রোনালদিনিওর ছবি ব্যবহার করার অনুমতি ছিল, ‘ঘড়ি ও পণ্য বিক্রি বাদে বিটকয়েন বা এ–জাতীয় কিছুতে রোনালদিনিওর ছবি ব্যবহারের অনুমতি নেই। এ কারণে চুক্তি বাতিল করা হয়।’

২০২০ সালে ‘১৮কেরোনালদিনিও’র বিরুদ্ধে নৈতিক ও বস্তুগত ক্ষতির অভিযোগে ৩০০ মিলিয়ন ব্রাজিলিয়ান রিয়াল বা ৬ কোটি ১২ লাখ মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা হয়, যেখানে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে যুক্ত হিসেবে রোনালদিনিওকেও বিবাদী করা হয়। এই মামলাতেই সাক্ষ্য দিতে হাজির না হয়ে বিপাকে পড়েছেন দুবারের ফিফা বর্ষসেরা খেলোয়াড়।

এর আগে ২০২০ সালে পাসপোর্ট ছাড়া প্যারাগুয়েতে প্রবেশ করে জেলে গিয়েছিলেন রোনালদিনিও।

আরও পড়ুন