⚪ বাংলাদেশ ১–২ সিঙ্গাপুর 🔴
বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীদের চোখে ছিল জয়ের ছবি। ছিল উত্তেজনা আর প্রত্যাশার চাপ। মাঠে ছিল চ্যালেঞ্জ, সেই চ্যালেঞ্জ শেষ পর্যন্ত উতরাতে পারেনি বাংলাদেশ দল।
হার মানতে হলো সিঙ্গাপুরের কাছে। ঘরের মাঠে ২-১ ব্যবধানে হার, যা প্রত্যাশার সঙ্গে প্রাপ্তির যোগসূত্র ঘটাতে পারেনি। এই ম্যাচটাকে মনে করা হচ্ছিল দেশের ফুটবলের বাঁকবদলের একটা উপলক্ষ। কিন্তু স্বপ্ন আর বাস্তবতার মধ্যে থেকে গেল ব্যবধান।
কতটা আগ্রহ ছিল এই ম্যাচ নিয়ে? টিকিট পাওয়ার জন্য ছিল হাহাকার। গ্যালারিতে ছিল ২১ হাজার ৩১৭ জন দর্শক, এরপরও কিছু আসন ছিল ফাঁকা। দুপুর থেকেই দলে দলে ফুটবলপ্রেমীরা আসতে থাকেন স্টেডিয়ামের দিকে। অনেক বছর পর বাংলাদেশের ফুটবলে এমন উত্তেজনার পরশ। কিন্তু সিঙ্গাপুরের জয় সেই উত্তেজনায় ঢেলে দিয়েছে পানি, যে দলের বেশির ভাগ খেলোয়াড়ই মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডের লিগে খেলেন।
শুরু থেকে বাংলাদেশ নিজেদের রেখেছে খোলসবন্দী করে। ৫৮ মিনিটের মধ্যে ২ গোল খাওয়ার পর বেরিয়েছে সেই খোলস ছেড়ে। অন্তত ৫-৬টি গোলের সুযোগ এসে গিয়েছিল বাকি সময়ে।
সুযোগ পেয়েছেন বাংলাদেশের ফুটবলের নতুন পোস্টার বয় হামজাও। তাঁর শট গেছে বাইরে। শেষ মুহূর্তে শাহরিয়ার ইমনের হেড রক্ষা করেছেন সিঙ্গাপুরের গোলকিপার। দুর্ভাগ্য, সমতাসূচক গোলটা এলে না অনেক চেষ্টার পরও। এই খেলাটাই বাংলাদেশ দল প্রথমার্ধে খেললে হয়তো ম্যাচের ফল অন্য রকম হতে পারত।
সিঙ্গাপুরের ফিফা র্যাঙ্কিং ১৬১, বাংলাদেশের ১৮৩। এই ব্যবধান কমাতে বাংলাদেশ চেষ্টা করেছে প্রবাসী ফুটবলারদের শক্তিতে বলীয়ান হয়ে। হামজা ও ফাহামিদুলের দিকে ছিল চোখ, তবে সবচেয়ে বেশি প্রত্যাশা ছিল অভিষিক্ত শমিত সোমের ওপর।
শমিত প্রথমার্ধের শেষ এবং দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম দিকে সিঙ্গাপুরের রক্ষণে আতঙ্ক ছড়িয়েছেন দারুণ কিছু নিখুঁত পাসে। হামজা উজ্জ্বল ছিলেন দ্বিতীয়ার্ধের শেষ দিকে। কিন্তু রাতটা তাঁদের কিংবা বাংলাদেশের হয়নি।
ঘরের মাঠে ২-১ ব্যবধানে সিঙ্গাপুরের কাছে হারের পর ২০২৭ এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্বে খেলার স্বপ্ন ঝুঁকিতে পড়েছে বাংলাদেশের। চার দলের গ্রুপে সিঙ্গাপুর ও হংকং দুই ম্যাচে করে খেলে পেয়েছে ৪ পয়েন্ট। বাংলাদেশ ও ভারতের সমান ১ পয়েন্ট করে।
আজ হংকংয়ের কাছে যোগ করা সময়ের চতুর্থ মিনিটে পেনাল্টিতে গোল খেয়ে হেরেছে ভারত। গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশ ও ভারতের সামনে তাই আরও কঠিন পরীক্ষা।
বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর বহুল প্রতীক্ষিত ম্যাচের প্রথমার্ধ গোলশূন্য ড্রয়ের দিকে এগোচ্ছিল। তবে ৪৫ মিনিটে লম্বা থ্রো থেকে বল বাংলাদেশের বক্সে আসে। গোলকিপার মিতুল মারমা বল পাঞ্চ করলেও তা বিপদমুক্ত হয়নি। এক সতীর্থের পাস থেকে সিঙ্গাপুরের মিডফিল্ডার সং উই–ইয়াংয়ের বল জালে পাঠিয়ে দলকে ১-০ গোলে এগিয়ে নেন।
৫৬ মিনিটে হামি শাহীনের শটে গোলকিপার মিতুল বল পাঞ্চ করেন। কিন্তু সেটি পড়ে সিঙ্গাপুরের তারকা স্ট্রাইকার ইখসান ফান্দির পায়ের কাছে। ফান্দি তাঁর সামনে থাকা হৃদয়কে ফাঁকি দিয়ে সহজে গড়ানো শটে দ্বিতীয় গোল করেন। জাতীয় দলের হয়ে ৪০ ম্যাচ খেলে এটি তাঁর ২১তম গোল।
৬৭ মিনিটে বাংলাদেশ ১টি গোল শোধ করেছে। হামজার থ্রু পাস ধরে রাকিব দুই সিঙ্গাপুর খেলোয়াড়ের মাঝ দিয়ে ঢুকে গোলকিপারের পায়ের ফাঁক দিয়ে জালে জড়ান। এই গোল বাংলাদেশকে নতুন প্রাণশক্তি জোগায় এবং কোচ দলে কিছু পরিবর্তন আনেন। এই পরিবর্তনের পর বাংলাদেশের খেলায় গতি এলেও কাঙ্ক্ষিত গোল পাওয়া হয়নি।
ম্যাচের শুরুতে ১০ মিনিটে থ্রো থেকে সিঙ্গাপুর গোলের জন্য বিপজ্জনক একটা সুযোগ সৃষ্টি করে। ১৭ মিনিটে সিঙ্গাপুরের স্ট্রাইকার ফান্দির হেড বাইরে চলে যায়। ৩০ মিনিটে আবার তাঁর কাছ থেকে প্রায় গোলের সুযোগ এলেও মিতুল এক হাতে শটটি সেভ করেন।
মিতুলের সেই সেভ থেকে উৎসাহ পেয়ে বাংলাদেশ পাল্টা আক্রমণ করে, সিঙ্গাপুরের গোলকিপারকে একা পেয়ে যান রাকিব। তবে বলের গতি বেশি হওয়ায় সিঙ্গাপুরের গোলকিপার আগে হাত দিয়ে বল আটকে দেন।
এরপর বাংলাদেশের হামজা ফ্রি-কিক পান, যা অল্পের জন্য সিঙ্গাপুরের বার উঁচিয়ে বাইরে চলে যায়। একটা সময় টানা পাঁচটি কর্নার এসেছে, কিন্তু দ্বিতীয় গোলটা আর ধরা দেয়নি।
হামজাকে প্রথমার্ধে বেশি সময় নিচের দিকে দেখা গেছে। কারণ, সিঙ্গাপুর ছোট ছোট পাসে আক্রমণ তৈরি করছিল এবং বাংলাদেশের রক্ষণে ফাঁক দেখা দিচ্ছিল। তবে গোল খাওয়ার পর হামজাকে ওপরে পাঠানো হয়। আক্রমণে ভূমিকা রাখেন, কিন্তু সেভাবে জাদুকরি কিছু করতে পারেননি।
বাংলাদেশ কোচ ভুটান ম্যাচের একাদশ থেকে তিনটি পরিবর্তন আনেন। রাইটব্যাকে তাজ উদ্দিনের জায়গায় শাকিল তপু, মাঝমাঠে জামাল ও সোহেল রানার পরিবর্তে মোহাম্মদ হৃদয় ও শমিত সোম।
তবে এ ম্যাচেও প্রথাগত স্ট্রাইকার না থাকার অভাব আরও স্পষ্ট হয়েছে। গোল করার জন্য একজন নাম্বার নাইন থাকা প্রয়োজন, যা এই ম্যাচে খুব ভালোভাবেই বোঝা গেছে। হারের এমন রাতে সান্ত্বনা আসলে নেই। জয়ের স্বপ্নে বিভোর হয়ে হার, একটু তো হতাশারই বাংলাদেশের জন্য।
বাংলাদেশ দল
মিতুল মারমা, তপু বর্মণ, তারিক কাজী, সাদ উদ্দিন, শাকিল তপু (শেখ মোরছালিন), হামজা চৌধুরী, শমিত সোম, মোহাম্মদ হৃদয় (আল আমিন), ফাহামিদুল ইসলাম (ফয়সাল হোসেন ফাহিম), কাজেম শাহ (শাহরিয়ার ইমন), রাকিব হোসেন।