‘গোলকিপার’ হামজাকে কেমন দেখলেন

ভারতের বিপক্ষে মাঠজুড়েই খেলেন হামজাহামজা চৌধুরীর ফেসবুক পেজ

নেপালের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে কথাটা উঠেছিল—হামজা চৌধুরীর শুধু গোলকিপিং করাটাই বাকি! কেন এমন কথা, সেটিও সবার জানা। গত ১৩ অক্টোবরের সেই ম্যাচে হামজার দুর্দান্ত দুটি গোলে ম্যাচে ২–১–এ এগিয়ে থেকেও শেষ মুহূর্তে গোল হজম করে ড্র করে বাংলাদেশ। সেই ম্যাচে হামজা কী করেননি—গোল করা থেকে গোল ঠেকানো, এমনকি মাঝমাঠে খেলাও তৈরি করেছিলেন। এ কারণে সমর্থকেরা সেদিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে হামজাকে নিয়ে ওই কথা বলেছিলেন।

মজার বিষয়, সমর্থকদের সেই কথা যেন মাটিতে পড়ার আগেই হামজা বুঝিয়ে দিলেন, পোস্টের নিচে দাঁড় করিয়ে দিলেও তিনি একেবারে খারাপ করবেন না! নেপালের বিপক্ষে ড্রর পরের ম্যাচেই কাল রাতে ভারতের বিপক্ষে এমন ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হয়েছিল হামজাকে।

ম্যাচটি ছিল এশিয়ান কাপের বাছাই। দুই দলই চূড়ান্ত পর্বে ওঠার সুযোগ হারানোয় বলতে পারেন কাগজে–কলমে নিয়ম রক্ষার ম্যাচ; কিন্তু প্রতিপক্ষ যেহেতু ভারত—ম্যাচটি তাই মর্যাদার লড়াই হয়ে উঠেছিল বাংলাদেশের জন্য। সে লড়াইয়ে ১–০ গোলের জয়ে অবশ্যই উচ্ছ্বাসে ভেসেছেন দেশের ফুটবলপ্রেমীরা। তবে জয় হাতছাড়া হওয়ার শঙ্কা ছিল, যদি ৩১ মিনিটে গোলকিপারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে গোল না ঠেকাতেন হামজা।

বল দেওয়া–নেওয়া করতে গিয়ে অকারণে পোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন বাংলাদেশের গোলকিপার মিতুল মারমা। কর্নারের কাছাকাছি গিয়ে বল হারান মিতুল। সেখান থেকে বল পেয়ে যান ভারতের উইঙ্গার লালিয়ানজুয়ালা চাংতে। ফাঁকা পোস্ট দেখে শট নেন। তবে এমন কিছু ঘটতে পারে, সেটা আগেই আঁচ করতে পেরেছিলেন হামজা। দৌড়ে পোস্টের মাঝমাঝি এসে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন তিনি। তখন তাঁর আরেক সতীর্থও পোস্ট পাহারায় থাকলেও পজিশনটা সুবিধাজনক ছিল না।

আরও পড়ুন

লালিয়ানজুয়ালার বাঁকানো শট পোস্টে ঢোকার আগেই লাফিয়ে করা হেডে বল ‘ক্লিয়ার’ করেন হামজা। নইলে নিশ্চিত গোল!

গোলকিপারের কাজ গোল ঠেকানো। সে জন্য দুই হাত ব্যবহারের সুবিধাটা পান; কিন্তু হামজা তো গোলকিপার নন, ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার। সে বিচারে ম্যাচের ওই মূহূর্তে গোলকিপারের ভূমিকায় তাঁর কাজটি গোলকিপারের চেয়েও কঠিন ছিল। কারণ, গোলকিপার অনায়াসেই দুই হাতের ব্যবহারে লালিয়ানজুয়ালার শটটি থামাতে পারতেন। হামজা একই কাজ করলে পেনাল্টি পেত ভারত, হামজাকে হয়তো কার্ডও দেখতে হতো; কিন্তু পাকা ডিফেন্ডারের মতোই মাথার ব্যবহারে গোলকিপারের বিকল্প কাজটা করে দেন হামজা।

জয়ের পর সতীর্থদের সঙ্গে উদ্‌যাপন হামজার
প্রথম আলো

হামজাকে গোটা ম্যাচেই বিভিন্ন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন ভূমিকায় দেখা গেছে। কখনো ডিফেন্ডার, কখনো আবার মিডফিল্ডার, আবার কখনো কখনো আক্রমণেও উঠেছেন। মোটকথা, দলের প্রয়োজনে যখন যেখানে প্রয়োজন, সেখানেই থাকার চেষ্টা করেছেন লেস্টার সিটির এই ফুটবলার। তাতে ২২ বছর পর ভারতের বিপক্ষে জয় পাওয়ার পথটা সুগম হয়েছে বাংলাদেশের। জয়ের পর হামজার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে লেখা হয়, ‘ঐতিহাসিক! ২২ বছর! আমাদের দেশের জন্য দারুণ একটা দিন। এর অংশ হতে পেরে খুব গর্বিত। ইনশা আল্লাহ, সামনে আরও আসবে।’

আরও পড়ুন