ফাইনালে হেরে সংঘর্ষে জড়ানোর পর নিরাপত্তা পরিচালকের মুখে থুতু মারলেন সুয়ারেজ

লিগস কাপের শৃঙ্খলা কমিটি ভিডিও ফুটেজ দেখে সুয়ারেজের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে। টুর্নামেন্টের নিয়ম অনুযায়ী, তাঁকে ছয় ম্যাচ নিষিদ্ধ করা হতে পারে।

ফাইনালে হারার পর প্রতিপক্ষের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান লুইস সুয়ারেজছবি: এএফপি

ট্রফিছোঁয়া দূরত্ব থেকে ফিরে আসতে কার ভালো লাগে? লুইস সুয়ারেজও ব্যাপারটি হয়তো মেনে নিতে পারেননি।

বাংলাদেশ সময় আজ ভোরে লিগস কাপের ফাইনালে সিয়াটল সাউন্ডার্সের কাছে ৩-০ গোলে হেরেছে ইন্টার মায়ামি। এতে মায়ামির হয়ে প্রথম শিরোপা জয়ের অপেক্ষা বেড়েছে সুয়ারেজের। কিন্তু ফাইনালে হারের জ্বালা মেটাতে এই তারকা ফরোয়ার্ড প্রতিপক্ষের সঙ্গে যা করেছেন, তা নিয়ে সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে।

লুমেন ফিল্ডে সিয়াটলের কোচিং স্টাফ তখন সবে শিরোপা উৎসবে মেতেছিল। এমন সময় দুই দলের খেলোয়াড়েরা মাঝমাঠে তর্কে জড়ান। মুহূর্তেই তা যুদ্ধংদেহী পরিস্থিতিতে রূপ নেয়। খেলোয়াড়দের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি ও সংঘর্ষ বেধে যায়। ফাইনালে লিওনেল মেসির দলের অসহায় আত্মসমর্পণ ছাপিয়ে এটিই এখন বেশি আলোচিত ঘটনা।

মেসি–সুয়ারেজদের মায়ামিকে হারিয়ে লিগস কাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে সিয়াটল
ছবি: এএফপি

উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি করেন দুই উরুগুইয়ান লুইস সুয়ারেজ ও মাক্সি ফালকন। রেফারি শেষ বাঁশি বাজানোর পরপরই সুয়ারেজ প্রতিপক্ষ সিয়াটল দলের মেক্সিকান মিডফিল্ডার ওবেদ ভার্গাসের ঘাড় খাবলে ধরেন। কয়েক সেকেন্ড পর সের্হিও বুসকেতস এসে ভার্গাসের মুখে ঘুষি মারেন।

মায়ামির আর্জেন্টাইন সেন্টারব্যাক তোতো আভিলেস তো সিয়াটলের মার্কিন ডিফেন্ডার জ্যাকসন রাগেনের সঙ্গে ঘুষাঘুষি শুরু করে দেন। মায়ামির বেঞ্জামিন ক্রেমাশি ও সিয়াটলের রিড বেকার-হোয়াইটিং সবার মেজাজ শান্ত করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন।

এরপরই বড় কেলেঙ্কারির জন্ম দেন সুয়ারেজ, যা ধরা পড়ে টিভি ক্যামেরায়। ভিডিওতে দেখা যায়, সিয়াটলের বয়োজ্যেষ্ঠ এক সদস্যের সঙ্গে চেঁচামেচি করছেন সুয়ারেজ। তবে সেই ব্যক্তি একবারের জন্যও সুয়ারেজের দিকে তাকাননি, এমনকি কোনো কথাও বলেননি। কিন্তু সুয়ারেজ ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁর মুখে সরাসরি থুতু মারেন। পরে জানা যায়, ওই ব্যক্তি সিয়াটল দলের নিরাপত্তা পরিচালক জিনি রামিরেজ।

এত কিছুর পরও রেফারি কাউকে লাল কার্ড দেখাননি। মাঠে শৃঙ্খলা ফেরাতে রেফারি বেশি সময় নিয়ে ফেলেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। আর সুয়ারেজকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বইয়ে যাচ্ছে।

আরও পড়ুন

উরুগুইয়ান তারকার থুতু দেওয়ার ভিডিওতে একজন মন্তব্য করেছেন, ‘এ ধরনের ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। প্রতিপক্ষ স্টাফের দিকে থুতু নিক্ষেপ করা তাঁকে বিতর্কিত খেলোয়াড় হিসেবে চিহ্নিত করেছে। যদি ফিফা ও কনকাকাফ (উত্তর ও মধ্য আমেরিকা এবং ক্যারিবীয় অঞ্চলের ফুটবল নিয়ন্ত্রক সংস্থা) ন্যায়বিচার করে, তাহলে এটিই লুইস সুয়ারেজের পেশাদার ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ হওয়া উচিত।’

ফাইনাল শেষে দুই দলের খেলোয়াড়েরা এভাবেই সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন
ছবি: এএফপি

সুয়ারেজের বিতর্কিত কর্মকাণ্ড নিয়ে ইন্টার মায়ামি কোচ হাভিয়ের মাচেরানো বলেছেন, ‘আমি ঘটনার সময় দূরে ছিলাম। তাই মন্তব্য করতে পারছি না। তবে এ ধরনের ঘটনা কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। যদি কোনো প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়ে থাকে, তা সম্ভবত উসকানির ফল।’

স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম এএস জানিয়েছে, মাঠে কোনো কার্ড না দেখলেও সুয়ারেজ হয়তো বড় বিপদেই পড়তে যাচ্ছেন। লিগস কাপের শৃঙ্খলা কমিটি ভিডিও ফুটেজ দেখে তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারে। টুর্নামেন্টের নিয়ম অনুযায়ী, এ ধরনের অপরাধের জন্য একজন খেলোয়াড়কে কমপক্ষে ছয় ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।

মাঠে বিতর্কিত ঘটনার জন্ম দিয়ে সুয়ারেজের আলোচনায় আসা নতুন কোনো বিষয় নয়। বরং বলা যায়, এ ধরনের কাজে তিনি সিদ্ধহস্ত।

২০০৭ সালে আয়াক্সে এবং ২০১১ সালে লিভারপুলে থাকতেও তিনি প্রতিপক্ষ দলের খেলোয়াড় ও প্রতিপক্ষের গ্যালারির দিকে থুতু মারেন। বর্ণবাদী মন্তব্য করায় নিষিদ্ধ হওয়ার পাশাপাশি জরিমানাও গুনেছিলেন। আর তাঁর কয়েক দফা কামড়কাণ্ড তো ফুটবল মাঠের অন্যতম কুখ্যাত ঘটনা হয়ে আছে।