হামজাকে দেখে আরও প্রবাসী আসবে, আশা বাফুফে সভাপতির

বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়ালছবি: বাফুফে

বাংলাদেশের ফুটবল এখন হামজা চৌধুরীময়। গতকাল সন্ধ্যায় ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই ফুটবলারকে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলে খেলার অনুমতি দিয়েছে ফিফা। হামজার জন্য দুয়ার উন্মুক্ত হওয়ার পর বাংলাদেশের ফুটবলে তাঁর প্রভাব কেমন হতে পারে, তা নিয়েও চলছে নানা জল্পনা। দুনিয়ার অন্যতম শীর্ষ ফুটবল লিগে খেলা এই ফুটবলার লাল–সবুজ জার্সিতে আদৌ কোনো বদল কি আনতে পারবেন?

বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল অবশ্য হামজার অন্তর্ভুক্তিকে বেশ ইতিবাচকভাবেই দেখছেন। তিনি মনে করেন হামজার দেখাদেখি অন্যান্য প্রবাসী বাংলাদেশি ফুটবলাররাও দেশের জার্সিতে খেলার ব্যাপারে অনুপ্রাণিত হবেন, ‘আশা করছি, হামজা চৌধুরীর মতো অন্য প্রবাসী যাঁরা খেলছেন, তাঁদের চিহ্নিত করে আমরা বাংলাদেশের হয়ে খেলার জন্য অনুপ্রাণিত করতে পারব।’ বাফুফে সভাপতি আজ সকালে নিজ বাড়িতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে হামজা চৌধুরীসহ দেশের ফুটবলের নানা প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলেন।

হামজা ও দেশের ফুটবল নিয়ে আজ সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন তাবিথ আউয়াল
ছবি: বাফুফে

হামজার অন্তর্ভুক্তি বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের জয়ের খিদে আরও বাড়িয়ে দেবে বলে আশা তাবিথের, ‘হামজা বাংলাদেশের হয়ে খেলবেন, আমরা অবশ্যই খুশি। হামজার মতো খেলোয়াড় কিংবা সামনে প্রবাসী ফুটবলারদের মধ্যে যাঁরা বাংলাদেশের হয়ে খেলবেন, তাঁরা জাতীয় দলের মান বাড়াবেন। হামজা অবশ্যই ব্র্যান্ড। তবে আমরা এটা নিয়ে আপাতত ভাবছি না। আমরা জাতীয় দলকে জিততে দেখতে চাই। দলকে জেতার মানসিকতায় নিয়ে যেতে চাই। ব্র্যান্ডটা সবাইকে নিয়েই তৈরি করতে পারব বলে আশা করি।’

হামজা খেললে জাতীয় দলের শক্তি অনেকটাই বাড়বে বলে আশা তাঁর, ‘দল অনেক শক্তিশালী হবে, এটা নিয়ে সন্দেহ নেই। হামজা যেহেতু ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার, তাই দলের রক্ষণটা অনেক গোছানো যাবে। পাশাপাশি অবশ্য আক্রমণভাগও ভালো হতে হবে। প্রবাসে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অনেকেই ভালো করছেন। আমি বিশ্বাস করি, হামজা তাঁদের অনুপ্রেরণা হবেন।’

হামজা চৌধুরী বাংলাদেশের হয়ে খেলা শুরু করার পর অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি ফুটবলারই লাল–সবুজ জার্সি পরে খেলার ব্যাপারে উৎসাহী হবে বলে মনে করেন বাফুফে সভাপতি
ইনস্টাগ্রাম

আগামী মার্চে এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে ভারতের বিপক্ষে অ্যাওয়ে ম্যাচ বাংলাদেশের। হামজা সে ম্যাচেই দেশের জার্সিতে অভিষিক্ত হবেন বলে আশা সবার। বাফুফে সভাপতি জানিয়েছেন এশিয়ান কাপ নিয়ে বাফুফে নাকি এরই মধ্যে পরিকল্পনা শুরু করে দিয়েছে। তবে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের প্রস্তুতি কিছুটা সতর্কতার সঙ্গেই বাংলাদেশ নেবে বলে জানালেন তিনি, ‘আমরা ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ নিয়ে পরিকল্পনা শুরু করে দিয়েছি। আমরা ওই ম্যাচের আগে প্রীতি ম্যাচ বা প্রস্তুতি ম্যাচ যা–ই খেলি না কেন, সেটা ক্লোজড ডোর খেলব। বাইরের কাউকে ম্যাচ দেখার অনুমতি দেব না। এশিয়ান কাপের বাছাইপর্ব থেকে একটি দল যাবে গ্রুপ সেরা হয়ে। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচটি অনেক গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। প্রথম ম্যাচ ভালো করতে পারলে গ্রুপ সেরা হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়িত করার সুযোগ থাকবে।’ তাবিথ জানিয়েছেন আগামী ২৫ জানুয়ারি প্রিমিয়ার লিগের প্রথম পর্ব শেষ হওয়ার পর জাতীয় দলের অনুশীলন ক্যাম্প শুরু হবে। সেটি হবে চার সপ্তাহের।

কাবরেরা থাকবেন কিনা, নিশ্চিত করেননি তাবিথ আউয়াল
প্রথম আলো

জাতীয় দলের কোচ হিসেবে কে থাকবেন? স্প্যানিশ কোচ হাভিয়ের কাবরেরার চুক্তি শেষ হচ্ছে ৩১ ডিসেম্বর। কাবরেরাই এশিয়ান কাপে কোচ হিসেবে থাকবেন, নাকি নতুন কেউ আসবেন, সে ব্যাপারে এখনো বাফুফে সিদ্ধান্ত নেয়নি বলেই জানিয়েছেন সভাপতি, ‘কোচের সঙ্গে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চুক্তি আছে। ১ জানুয়ারি থেকে কোচ নিয়ে কথা বলব। সিদ্ধান্ত যেটাই হোক, আপনাদের জানিয়ে দেওয়া হবে। বর্তমান কোচের পারফরম্যান্স মূল্যায়ন এখনো শেষ হয়নি। আমি বিভিন্ন পরিসংখ্যান সংগ্রহ করছি।’

মাঠ নিয়ে হতাশা

ঘরোয়া ফুটবল যে ধরনের মাঠে খেলা হচ্ছে, সেগুলি যে শীর্ষ পর্যায়ের ফুটবলের জন্য একেবারেই অনুপযুক্ত সেটি স্বীকার করেছেন বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল। শিগগিরই চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়াম পুরোপুরি ফুটবলের জন্য সরকারের কাছ থেকে বরাদ্দ মিলবে বলেও আশা তাঁর।

চট্টগ্রামের এম এ আজিজ স্টেডিয়াম পুরোপুরি ফুটবলের জন্য পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী বাফুফে সভাপতি
প্রথম আলো

কুমিল্লার ভাষা সৈনিক ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে একেবারেই অপ্রস্তুত অবস্থায় হাতে পেয়েছে বাফুফে। ফেডারেশন কাপ শুরুর দুই দিন আগেও সেই মাঠে ক্রিকেট অনুষ্ঠিত হয়েছে। ফুটবল মাঠের মাঝখানে ক্রিকেট পিচ রেখেই চলছে ঘরোয়া ফুটবলের খেলা। এর মধ্যেই খবর বেরিয়েছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ স্থানীয় অন্য একটি অনুষ্ঠানের জন্য মাঠ ফেরত চাচ্ছে। এটি বাফুফে সভাপতির কাছে অগ্রহণযোগ্যই মনে হয়েছে, ‘আমি আমার হতাশা ক্রীড়া পরিষদের সঙ্গে ভাগাভাগি করেছি। এভাবে মাঠ দিয়ে আবার একদিনের জন্য ফেরত নিতে চাইছে। এটা কেমন কথা!’

চট্টগ্রামের এম এ আজিজ স্টেডিয়াম প্রসঙ্গে তাঁর কথা, ‘চট্টগ্রামের এম এ আজিজ স্টেডিয়াম পুরোপুরি ফুটবলের জন্য পাওয়ার ব্যাপারে সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে। আশা করছি শিগগিরই স্টেডিয়ামটি শুধুমাত্র ফুটবল স্টেডিয়াম হিসেবে পাব আমরা। তখন সেটিকে আন্তর্জাতিক ফুটবলের উপযোগী করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।’