আন্তর্জাতিক বিরতি শেষে ফিরল ক্লাব ফুটবল: কোন লিগে কোন দল এগিয়ে
আন্তর্জাতিক বিরতি কাটিয়ে আবারও বাজতে শুরু করেছে ক্লাব ফুটবলের দামামা। ইউরোপের লিগগুলোয় মৌসুমের এক–তৃতীয়াংশ ম্যাচ হয়ে গেছে। পয়েন্ট তালিকায় শিরোপার লড়াইটা একটু একটু করে পরিষ্কার হতে শুরু করেছে। এখন লিগ যত এগোবে, তত বেশি বোঝা যাবে, কারা থাকছে শিরোপার লড়াইয়ে। ইউরোপের শীর্ষ ৫ লিগে কোন দলের কী অবস্থান, চলুন দেখে নেওয়া যাক।
আর্সেনালের সামনে ‘সুবর্ণ সুযোগ’
গত কয়েক মৌসুমে বেশ কয়েকবার তীরের খুব কাছে গিয়েও তরি ডুবেছে আর্সেনালের। তবে এবার গানারদের সামনে দুই দশকের শিরোপা–খরা কাটানোর দারুণ সুযোগ। আর্সেনাল নিজেরা যেমন ছন্দে আছে, তেমনি প্রতিদ্বন্দ্বীরাও তাদের পথটা সহজ করে দিচ্ছে।
বর্তমান চ্যাম্পিয়ন লিভারপুল তো পথ হারিয়ে ধুঁকছে! ১১ ম্যাচের ৫টিতেই হেরে তারা নেমে গেছে আট নম্বরে। ম্যানচেস্টার সিটি ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও তাদের সেই খুনে মেজাজটা এখনো অনুপস্থিত।
আর্সেনালের রাস্তা তাই অনেকটাই পরিষ্কার। এখন শুধু গুরুত্বপূর্ণ সময়ে স্নায়ুচাপে ভেঙে পড়ার পুরোনো অভ্যাসটা ফিরে না এলেই হয়। নিজেদের অবস্থান শক্ত করার লক্ষ্যে রোববারই বড় পরীক্ষা দিতে হবে তাদের। ঘরের মাঠে তারা লড়বে পাঁচে থাকা টটেনহামের বিপক্ষে। নর্থ লন্ডন ডার্বি জিতলে শিরোপার পথে আরেক ধাপ এগিয়ে যাবে তারা। এদিকে দুইয়ে থাকা ম্যান সিটি লড়বে লিডস ইউনাইটেডের বিপক্ষে। এ ছাড়া চেলসি নামবে বার্নলির বিপক্ষে এবং লিভারপুলের প্রতিপক্ষ নটিংহাম ফরেস্ট।
রিয়ালের ঘাড়ে বার্সার নিশ্বাস
রিয়াল মাদ্রিদ আন্তর্জাতিক বিরতিতে গিয়েছিল কিছুটা অস্বস্তি নিয়েই। দুর্দান্ত ফর্মে থেকেও রায়ো ভায়েকানোর বিপক্ষে গোলশূন্য ড্র করে বসে তারা। এই হোঁচটে বার্সেলোনার সঙ্গে পয়েন্টের ব্যবধানটা ৫-এ নিয়ে যাওয়ার সুযোগ হাতছাড়া হয়। ওদিকে সেল্তা ভিগোকে হারিয়ে বার্সা এখন রিয়ালের ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলছে।
১২ ম্যাচ শেষে রিয়ালের পয়েন্ট ৩১, আর সমান ম্যাচে বার্সার ২৮। ব্যবধান এতটাই সামান্য যে একটু পা হড়কালেই সিংহাসন উল্টে যেতে পারে। তাই জয়ের ধারায় ফেরাটা রিয়ালের জন্য খুবই জরুরি। রোববার রাতে রিয়াল লড়বে এলচের বিপক্ষে। তার আগে আগামীকাল রাতে বার্সা নামবে অ্যাথলেটিক বিলবাওয়ের পরীক্ষায়।
বুন্দেসলিগায় সেই বায়ার্নই রাজা
জার্মানির গল্পটা সেই পুরোনো। বুন্দেসলিগার চাবিটা বায়ার্ন মিউনিখের হাতেই। দ্বিতীয় স্থানে থাকা লাইপজিগের চেয়ে তারা ৬ পয়েন্টে এগিয়ে। বায়ার্নের ২৮ পয়েন্ট, লাইপজিগের ২২। বায়ার্ন যেন জার্মান লিগটাকে নিজেদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি বানিয়ে ফেলেছে! আগামীকাল লিগ ম্যাচে বায়ার্ন লড়বে ফ্রেইবুর্গের বিপক্ষে। আর দুইয়ে থাকা লাইপজিগ খেলবে ভেরডার ব্রেমেনের সঙ্গে। কোনো অলৌকিক বিপর্যয় না ঘটলে বায়ার্নই যে মৌসুম শেষে হাসবে, সেটা এখনই বাজি ধরে বলে দেওয়া যায়।
ইতালিতে লড়াই সেয়ানে সেয়ানে
ইতালিয়ান সিরি ‘আ’-র চিত্রটা অবশ্য জার্মানির মতো একপেশে নয়, বেশ জমজমাট। সেখানে কেউ কাউকে ছাড়ছে না। ১০ ম্যাচ শেষে ২৪ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে ইন্টার মিলান। কিন্তু স্বস্তিতে নেই তারা; কারণ, সমান পয়েন্ট নিয়ে ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলছে এএস রোমা।
এসি মিলান আর নাপোলিও খুব একটা পিছিয়ে নেই, ২২ পয়েন্ট নিয়ে তারা আছে তিন ও চারে। এই সপ্তাহে ইন্টারের জন্য অপেক্ষা করছে অগ্নিপরীক্ষা। রোববার রাতে হাইভোল্টেজ ‘মিলান ডার্বি’তে এসি মিলানের মুখোমুখি হবে তারা। চোখ রাখতে হবে নাপোলি ও আতালান্তার ম্যাচের দিকেও।
পিএসজির রাজত্বে হানা
ফ্রেঞ্চ লিগ ‘আঁ’-তে সচরাচর পিএসজির একচ্ছত্র দাপটই দেখা যায়। গতবারও তারা হেসেখেলে শিরোপা জিতেছিল। কিন্তু এবার রাস্তাটা বেশ কণ্টকাকীর্ণ। পিএসজি শীর্ষে থাকলেও মার্শেই ও লাঁস তাদের ভালোই চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে। ১২ ম্যাচ শেষে পিএসজির পয়েন্ট ২৭। সমান ম্যাচে মার্শেই ও লাঁসের পয়েন্ট ২৫ করে। পিএসজি এই সপ্তাহে খেলবে লা হাভরের বিপক্ষে, আর আজ রাতে মার্শেইয়ের প্রতিপক্ষ নিস।
সব মিলিয়ে ইউরোপিয়ান ফুটবলের এই সপ্তাহটা হতে যাচ্ছে বারুদে ঠাসা। ফুটবলপ্রেমীরা প্রস্তুত তো?
*সব পরিসংখ্যান ২১ নভেম্বর রাতের ম্যাচগুলোর আগ পর্যন্ত