হারের ক্ষোভে খেলোয়াড়দের গাড়ি পোড়ালেন আর্জেন্টিনার সমর্থকেরা

আতলেতিকো আলদোসিভি ক্লাবের সামনে খেলোয়াড়দের গাড়ি পোড়ান সমর্থকেরাছবি: টুইটার

আর্জেন্টাইন ফুটবলপ্রেমীরা সম্ভবত অবাক হননি। তাঁদের দেশের ঘরোয়া ফুটবলে এসব তো প্রায় নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা! প্রিয় দল হারলে ভক্তরা আর ভক্ত থাকেন না। খেলোয়াড়দের প্রাণনাশের হুমকি থেকে গুলি করার ঘটনাও ঘটে। পৃথিবীতে ফুটবলের জন্য উন্মাদ সমর্থক বলে যদি কিছু থেকে থাকে, তাহলে সেসব সমর্থকের সংখ্যা আর্জেন্টিনাতেই বেশি হওয়ার কথা। আতলেতিকো আলদোসিভি ক্লাবের কিছু সমর্থকের কথাই ধরুন। আর্জেন্টিনার প্রিমিয়ার ডিভিশনের এই দল কাল গদয় ক্রুজের কাছে ২-০ গোলে হেরে যায়। এরপর আলদোসিভির সমর্থকেরা কি না তাঁদের প্রিয় ক্লাবটির খেলোয়াড় ও কোচিং স্টাফদের গাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দিলেন!

আর্জেন্টাইন সংবাদমাধ্যম ‘ক্লারিন’ জানিয়েছে, আতলেতিকো আলদোসিভির খেলোয়াড় ও কোচিং স্টাফদের মোট পাঁচটি গাড়ি আগুনে পুড়িয়েছেন সমর্থকেরা। এর মধ্যে চারটি গাড়ি খেলোয়াড়দের—হাভিয়ের ইরিতিয়ের, ব্রায়ান মার্তিনেজ, হোসে দেভেচ্চি ও ফ্রান্সিসকো চেরো। কোচিং স্টাফের সদস্য লুকাস রদ্রিগেজ পাগানোর গাড়িও আগুনে পুড়িয়েছেন সমর্থকেরা। আর গাড়িগুলোও সাধারণ গাড়ি নয়—পেউজিওত ৩০৮, ভি ডব্লিউ পোলো, টয়োটা এতিওস, মার্সিডিজ বেঞ্জ এ২০০ এবং ভিডব্লিউ সুরান মডেলের গাড়ি, তবে এই ঘটনায় কেউ আহত হননি।

ম্যাচটি ছিল মেন্দোজায়। সাধারণত অন্য মাঠে ম্যাচ থাকলে মার দেল প্লাতা অঞ্চলে ক্লাবের স্টেডিয়ামের পাশে নিজেদের গাড়ি পার্কিং করে বাসে চেপে খেলতে যান আলদোসিভির খেলোয়াড়েরা। কালও ঠিক তাই করা হয়। মেন্দোজায় হারের পর খেলোয়াড়েরা ফেরার আগেই কিছু উন্মাদ সমর্থক গুলি ছুড়তে ছুড়তে ক্লাবের সীমানায় ঢুকে পড়েন। ক্লাবের কর্মী ও নিরাপত্তারক্ষীরা এ সময় ভয়ে তটস্থ ছিলেন বলে জানিয়েছে আর্জেন্টিনার সংবাদমাধ্যম ‘ওলে।’ স্থানীয় প্রতিবেশীরা দ্রুত পুলিশে খবর দেওয়ার পর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে আগুন নিভিয়েছেন। এই ঘটনার তদন্ত চলছে।

তদন্তের সূত্র মারফত ‘ক্লারিন’ জানিয়েছে, এই ঘটনার সঙ্গে আর্জেন্টিনার উগ্র ফুটবল সমর্থকগোষ্ঠী ‘বারা ব্রাভা’র যোগসূত্র রয়েছে। আর্জেন্টিনার বিভিন্ন ক্লাবের উগ্র সমর্থকদের নিয়ে এই সংগঠন। পুলিশ থেকে প্রতিপক্ষ দলের সমর্থক—কাউকেই ছেড়ে কথা বলে না এই সমর্থকগোষ্ঠী। সাম্প্রতিক সময়ে আলদোসিভির ম্যাচে গ্যালারিতেই বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনার ঘোষণা দিয়েছিলেন ক্লাবটির উগ্র সমর্থকেরা। শেষ চার ম্যাচের তিন হার—আলদোসিভির এমন পারফরম্যান্স মেনে নিতে পারেননি সেসব সমর্থকেরা।

আলদোসিভির পক্ষ থেকে সমর্থকদের এই কাজের নিন্দা জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ক্লাবে সমর্থকদের হিংসাত্মক কাজ কোনোভাবেই অনুমোদন করে না আলদোসিভি। সহিংস কোনো কাজই সমাধান বয়ে আনে না। আমরা ক্লাবের প্রতি দায়বদ্ধতা, সম্মান ও ভালোবাসা বাড়ানোর কাজ করে যাব।’

আর্জেন্টাইন ফুটবলে ‘বারা ব্রাভা’ সমর্থকগোষ্ঠীর উৎপত্তি গত শতকের বিশের দশকে। তখন উগ্র সমর্থকেরা বিচ্ছিন্নভাবে নিজ নিজ পছন্দের দলের খেলে দেখতে যেতেন। ধীরে ধীরে তাঁরা সংঘটিত হয়ে পঞ্চাশের দশকে বেশ শক্তিশালী হয়ে ওঠেন এবং সমগ্র লাতিন আমেরিকায় ছড়িয়ে পড়েন। বিভিন্ন সমীক্ষায় জানা গেছে, পুরো পৃথিবীতে ফুটবলের সংঘবদ্ধ সমর্থকগোষ্ঠীদের মধ্যে আর্জেন্টিনার এই সমর্থকগোষ্ঠীই সবচেয়ে বিপজ্জনক। ২০১২ থেকে এখন পর্যন্ত সমর্থকদের সহিংস কর্মকাণ্ডে প্রায় ২০০ মৃত্যু দেখেছে আর্জেন্টিনার ঘরোয়া ফুটবল। ২০১৩ সাল থেকে আর্জেন্টিনার প্রথম বিভাগ ফুটবলে প্রতিপক্ষের মাঠে অন্য দলের ভক্তদের খেলা দেখতে যাওয়া নিষিদ্ধ।

সমর্থকদের দেওয়া আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত গাড়ি
ছবি: ওলে

তবে প্রতিপক্ষ দলের সমর্থকদের ওপর চড়াও হওয়া ছাড়াই সহিংস কাজ চালাতে পটু আর্জেন্টাইন সমর্থকেরা। ২০১৮ সালে আর্জেন্টিনার তৃতীয় বিভাগের দল আলমিরান্তে ব্রাউন খুব বাজে খেলে পয়েন্ট টেবিলের তলানিতে নেমে যাওয়ার পর ক্লাবটির সভাপতির বাড়িতে গুলি চালান সমর্থকেরা। গাড়িও পুড়িয়ে দেন। ২০১৭ সালে আর্জেন্টিনার তৃতীয় বিভাগের আরেকটি দল দেপোর্তিভো মোরোনের দুই খেলোয়াড়কে অস্ত্র দেখিয়ে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছিলেন সমর্থকেরা।