ভালোবাসার ভিলায় কাঁদলেন মার্তিনেজ, গন্তব্য অজানা
এমিলিয়ানো মার্তিনেজ আবেগপ্রবণ মানুষ। হৃদয়ের ডাকে সাড়া দিয়ে অনেক পাগলামিও করেন, আবার কেঁদেও ফেলেন। তবে ভেজা চোখের মার্তিনেজকে খুব বেশি দেখা যায়নি। ২০২২ সালে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের পর মাঠেই তাঁর উৎসবমিশ্রিত কান্নার ছবিটি সযত্নে বুকে আগলে রেখেছেন দলটির সমর্থকেরা। এমনই এক দৃশ্য গতকাল রাতে দেখলেন অ্যাস্টন ভিলার সমর্থকেরাও। শেষ বাঁশি বাজার পর বাঁ হাত দিয়ে একবার চোখ মুছলেন মার্তিনেজ। অশ্রুর ঢল ঠেকানোর চেষ্টা করতে হিমশিম খাচ্ছিলেন সেটা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছিল ভেজা চোখে দর্শকদের উদ্দেশে তাঁর করতালি দেওয়ার সময়।
ভিলা পার্কে কাল রাতে টটেনহামকে ২–০ গোলে হারিয়েছে স্বাগতিকরা। এ জয়ে প্রিমিয়ার লিগ টেবিলে পাঁচে উঠে এসে চ্যাম্পিয়নস লিগের আগামী মৌসুমে খেলার সম্ভাবনা আরও উজ্জ্বল করলেও সেই আলোচনা মিলিয়ে গেছে মার্তিনেজের কান্নায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, এই কান্নার কি হেতু? আর যাঁরা আন্দাজ করে নিয়েছেন কারণটা, তাঁরা দিয়েছেন ইঙ্গিত—ভিলার ঘরে এটাই কি শেষ ম্যাচ মার্তিনেজের?
গত বছর আগস্টে ভিলার সঙ্গে ২০২৯ সাল পর্যন্ত চুক্তি নবায়ন করেন ৩২ বছর বয়সী মার্তিনেজ। এই দৃষ্টিকোণ থেকে চলতি মৌসুমে (গতকাল রাতে) ঘরের মাঠে ভিলার শেষ ম্যাচে শেষ বাঁশি বাজার পর কাঁদার কথা নয় মার্তিনেজের। কিন্তু চলতি মাসের শুরুতে মেইল অনলাইন জানিয়েছিল, প্রিমিয়ার লিগের খরচনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে মার্তিনেজকে বিক্রি করে দিতে পারে ভিলা। আর্জেন্টিনার সংবাদমাধ্যম টিওয়াইসি স্পোর্টস জানিয়েছে, সৌদি আরব থেকে প্রস্তাব আছে মার্তিনেজের জন্য। এ ছাড়া ইউরোপের বড় দুটি ক্লাবও নাকি মার্তিনেজকে কিনতে আগ্রহী, যদিও এ দুটি ক্লাবের নাম এখনো জানা যায়নি। তবে টিওয়াইসি স্পোর্টস জানিয়েছে, খেলাধুলা–সংক্রান্ত কারণেই সৌদির প্রস্তাবে সাড়া দেবেন না মার্তিনেজ। বাকি রইল ইউরোপের দুটি ক্লাব।
ট্রান্সফারমার্কেটের তথ্য অনুযায়ী, মার্তিনেজ এ মুহূর্তে বিশ্বের ১০ম সর্বোচ্চ দামি গোলকিপার। টিওয়াইসি স্পোর্টস জানিয়েছে, প্রিমিয়ার লিগের চেয়ে নিম্নস্তরে কোনো লিগের দলে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা নেই মার্তিনেজের। মেইল অনলাইন ও টেলিগ্রাফের খবর অনুযায়ী, ভিলা নাকি নতুন মৌসুমের কথা ভেবে স্কোয়াড ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা করছে। গোলপোস্টের নিচে মার্তিনেজের বদলি হিসেবে এস্পানিওলের হোয়ান গার্সিয়ার নামই বেশি শোনা যাচ্ছে সংবাদমাধ্যমে।
আর্জেন্টিনার সংবাদমাধ্যম ক্লারিন জানিয়েছে, অ্যাস্টন ভিলা কোচ উনাই এমেরি মার্তিনেজকে বিক্রি করে দেওয়ার বিষয়ে সবুজ সংকেত দিয়েছেন। দুবার করে ফিফার ‘বেস্ট’ গোলকিপার ও গোলকিপারদের ব্যালন ডি’অরজয়ী মার্তিনেজের ভিলায় ভবিষ্যৎ নিয়ে কাল রাতের ম্যাচ শেষে সংবাদমাধ্যমকে কোনো প্রতিশ্রুতি দেননি কোচ এমেরি, ‘দেখা যাক কী হয়। অবশ্যই এখানে (ভিলা পার্কে) এটাই শেষ ম্যাচ (চলতি মৌসুমে) এবং আমি আসলে জানি না।’
আর্সেনাল থেকে ২০২০ সালে ২ কোটি পাউন্ডে ভিলায় যোগ দেন মার্তিনেজ। এরপরই তাঁর ভাগ্যের চাকা ঘুরতে শুরু করে। ডাক পান আর্জেন্টিনা জাতীয় দলে। দুবার কোপা আমেরিকা জয়ের পাশাপাশি বিশ্বকাপ ও ফিনালিসিমাও জেতেন। আর্জেন্টিনার ২০২২ বিশ্বকাপ জয়ে সেই টুর্নামেন্টের সেরা গোলকিপারও হয়েছেন মার্তিনেজ। কিন্তু আর্সেনালে থাকতে শুধু অপেক্ষাতেই দিন কেটেছে তাঁর। ২০১০ সালে ক্লাবটির বয়সভিত্তিক দলে যোগ দিয়ে দুই বছর পর সুযোগ পান মূল দলে। পরের ৮ বছরে আর্সেনালের হয়ে মাত্র ১৫ ম্যাচ খেলার সুযোগ পান। বেশির ভাগ সময়ই তাঁকে বিভিন্ন ক্লাবে ধারে পাঠিয়ে রেখেছিল আর্সেনাল।
ভিলায় যোগ দেওয়ার পর নিয়মিত খেলার সুযোগ পান মার্তিনেজ। ক্লাবটির প্রতি নিজের ভালোবাসাও তিনি বুঝিয়েছেন ২০২৩ সালের মার্চে। আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের পর টটেনহাম তাঁকে পাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। কিন্তু মার্তিনেজ জানিয়ে দিয়েছিলেন, ভিলায় তিনি সুখেই আছেন। এই ক্লাব ছেড়ে কোথাও যাবেন না। শুধু তা–ই নয়, ভিলার এ মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলা এবং কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠাতেও বড় অবদান মার্তিনেজের। ভালোবাসার সেই ক্লাব এখন তাঁকে বেচে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় মার্তিনেজের চোখ ভেজাই স্বাভাবিক।
ভিলার হয়ে ২১১ ম্যাচ খেলেছেন মার্তিনেজ। ক্লাবটির হয়ে কোনো শিরোপা জিততে না পারলেও সমর্থকদের অকুণ্ঠ ভালোবাসা পেয়েছেন। পাশাপাশি ভিলার হয়ে ১৮ হাজার মিনিটের বেশি মাঠে থাকার পাশাপাশি ৬৯ ম্যাচে ক্লিন শিটও আছে তাঁর।
৩৭ ম্যাচে ৬৬ পয়েন্ট নিয়ে প্রিমিয়ার লিগ টেবিলের পাঁচে ভিলা। সমান ম্যাচে ৬৬ পয়েন্ট নিয়ে চতুর্থ চেলসি গোল ব্যবধানে ভিলার চেয়ে এগিয়ে। ৩৬ ম্যাচে ৬৬ পয়েন্ট নিয়ে তিনে নিউক্যাসল ইউনাইটেড। ভালোবাসার ভিলা যদি ছাড়তেই হয়, তবে চলে যাওয়ার আগে মার্তিনেজ নিশ্চয়ই লিগে শেষ ম্যাচে ভিলাকে চ্যাম্পিয়নস লিগের টিকিট পাইয়ে দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টাই করবেন।