মোহনবাগানের কাছে আবারও হেরে আবাহনীর বিদায়

অস্ট্রেলিয়ান ফুটবলার কামিংসের পেনাল্টি গোলে মোহনবাগানের সমতায় ফেরাছবি: মোহনবাগান সুপারজায়ান্টসের ফেসবুক পেজ থেকে

হলো না এবারও। কলকাতা মোহনবাগানের কাছে হেরেই এএফসি কাপে টানা দ্বিতীয়বার গ্রুপ পর্বে উঠতে ব্যর্থ ঢাকা আবাহনী।

এই ব্যর্থতার দায় কিছুটা আবাহনী নিজেদেরই। আগে গোল করেও তারা জিততে পারেনি। হারের ব্যবধান সেই ৩-১। ২০১৭ সালে এএফসি কাপের গ্রুপ পর্বে মোহনবাগান নিজেদের মাঠে ৩-১ গোলে হারায় আবাহনীকে। একই বছর দুই দলের ফিরতি ম্যাচ ঢাকায় ১-১। গত বছরও এএফসি কাপের গ্রুপে জায়গা পেতে দুই দলে প্লেঅফে মুখোমুখি হয়েছিল। মোহনবাগান নিজেদের মাঠে জেতে ৩-১ গোলে। এবারও সেই প্লেঅফে গল্পটা বদলায়নি।

যুব ভারতী ক্রীড়াঙ্গনে স্পষ্ট প্রাধান্য নিয়েই আজ খেলেছে ধারেভারে এগিয়ে থাকা মোহনবাগান। আবাহনী অনেকটা খেলার ধারার বিরুদ্ধে গোলকিপারের ভুলে সৌভাগ্যপ্রসূত গোল পেয়ে গেছে ১৭ মিনিটে। বক্সের একটু কোনা থেকে আবাহনীর নাইজেরিয়ান ফরোয়ার্ড এমেকা বাঁ পায়ে শট নেন। সেই বল ঠিকমতো ধরতে পারেনি মোহনবাগান গোলকিপার বিশাল কাইত। বল তাঁর সামনেই পড়ে। কিন্তু আলতো টোকায় জালে পাঠান আবাহনীর গ্রানাডিয়ান ফরোয়ার্ড কর্নেলিয়াস স্টুয়ার্ট। সিলেটে প্রাথমিক রাউন্ডের ম্যাচেই যিনি গোল করেছিলেন মালদ্বীপের ইগলসের বিপক্ষে।

কিন্তু ৩৭ মিনিটে শোধ হয়ে যায় সেই গোল। আবাহনীর বক্সে রাইট ব্যাক সুশান্ত ত্রিপুরা ফাউল করেন মোহনবাগানের এক খেলোয়াড়কে। পেনাল্টিতে সহজেই গোল করেন ২০২২ কাতার বিশ্বকাপে খেলা অস্ট্রেলিয়ান ফরোয়ার্ড জেসন কামিংস। সুশান্ত ত্রিপুরা এক মৌসুম আগে বসুন্ধরা কিংসের হয়ে লাল কার্ড দেখেছিলেন এই মোহনবাগানের বিপক্ষেই। আজ আবার আরেকটি ফাউল করে প্রতিপক্ষকে দিলেন পেনাল্টি।

মোহনবাগানের তৃতীয় গোলটি এল আর্মেনিয়ান ফরোয়ার্ড আর্মান্দু সাদিকুর পা থেকে
ছবি: মোহনবাগান সুপারজায়ান্টসের ফেসবুক পেজ থেকে

তবে আবাহনী বিরতিতে যেতে পারত ২-১ স্কোরলাইন নিয়ে। ৪৫ মিনিটের সময় গড়িয়ে গড়িয়ে বল প্রায় বল ঢুকেই যাচ্ছিল বাগানের গোলে। কিন্তু পোস্টে লেগে শেষ মুহূর্তে রক্ষা। তবে বিরতির দুই মিনিটের ব্যবধানে ভোজবাজির মতো পাল্টে গেছে ম্যাচের ছবি। ৫৮ মিনিটে আত্মঘাতী গোলে আবাহনী পিছিয়ে পড়ে। ইরানি ডিফেন্ডার মিলাদ শেখ বল ক্লিয়ার করার চেষ্টা করছিলেন, কিন্তু বল তাঁর পায়ে লেগে জালে জড়ায়। দুই মিনিট পরই স্কোরলাইন হয়েছে ৩-১। তখনই ম্যাচটা পকেটে পুরে ফেলেছে সবুজ মেরুন জার্সিধারীরা।

তবে এ ম্যাচে আবাহনী স্বপ্ন দেখছিল ছয় বিদেশি নিয়ে। গ্রানাডার কর্নেলিয়াস স্টুয়ার্ট, উজবেকিস্তানের মোজাফ্ফরভ, নাইজেরিয়ার দুই ফুটবলার ওজুকো ডেভিড ও এমেকা, ইরানি মিলাদ শেখ ও সিনিয়ার ডিফেন্ডার ইউসেফকে নিয়ে শক্তিও বাড়ে আকাশি নীলের। তবে ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে আবাহনীর বিদেশি প্রসঙ্গে মোহনবাগানের কোচ হুয়ান ফেরান্দো কূটনৈতিক উত্তর দিয়েছিলেন, ‘আমরা শুধু আমাদের নিজেদের নিয়েই ভাবছি। জয় ছাড়া ভাবছি না অন্য কিছুই।’

প্রথমার্ধে আবাহনীকে এগিয়ে দেন কর্নেলিয়াস স্টুয়ার্ট
ফাইল ছবি

সেই জয় তারা ঠিকই পেয়েছে পিছিয়ে পড়েও। তবে মোহনবাগান যে মানের দল, তাতে সহজেই জেতার কথা তাদের। আবাহনীর জন্য বড় হুমকি ছিলেন মোহনবাগানের অস্ট্রেলিয়ান ফুটবলার জেসন কামিংস, ২০১৬ ইউরোতে খেলা আর্মেনিয়ান ফরোয়ার্ড আর্মান্দু সাদিকু কম যাননি। তৃতীয় গোলটা করেছেন তিনি। আবাহনী মাঠে নেমেছিল পাঁচ ডিফেন্ডার নিয়ে। যাতে রক্ষণ জমাট রাখা যায়। কিন্তু রক্ষণের ভুলে পেনাল্টি, আত্মঘাতী গোল সবই প্রতিপক্ষকে উপহার দিয়ে হেরেছে মারিও লেমোসের দল।

মোহনবাগানের বিপক্ষে বাংলাদেশের কোনো ক্লাবের সর্বশেষ জয় প্রায় এক দশক আগে। ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে আইএফএ শিল্ডের ম্যাচে মোহনবাগানকে হারিয়েছিল শেখ জামাল ধানমন্ডি। সেই থেকে দশ বছরেও মোহনবাগানকে আর হারাতে পারল না বাংলাদেশের কোনো ক্লাব। গত বছর তো বসুন্ধরা কিংস মোহনবাগানের সামনে উড়ে যায় ৪-০ গোলে। এবার ইগলসকে হারিয়ে আশা জাগিয়েও শেষ পর্যন্ত নিরাশার গল্পও লিখল আবাহনী।