কোন দেশি বলবেন তাঁকে। কোডি গাকপোর দেশের পরিচয়টা একটু অদ্ভুতই বটে। বাবার জন্ম টোগোতে। কিন্তু বাবার ধমনিতে ঘানাইয়ান রক্ত। সেদিক তিনি ঘানাইয়ান বংশোদ্ভূত। কিন্তু মায়ের দেশ আবার নেদারল্যান্ডস। সব মিলিয়ে গাকপো যখন ফুটবলে নিজের প্রাথমিক পাঠ নিয়ে আরও ওপরে ওঠার জন্য তৈরি, তাঁর সামনে তিনটি জাতীয় দলে খেলার পথ খোলা—নেদারল্যান্ডস, ঘানা ও টোগো!
আইন্দহোভেনে বেড়ে ওঠা গাকপো অবশ্য নিজের পরিচিত পরিমণ্ডলই বেছে নেন। খেলতে শুরু করেন নেদারল্যান্ডসের বয়সভিত্তিক দলে। নেদারল্যান্ডস অনূর্ধ্ব ১৮, ১৯, ২০ দলে খেলেছেন গত বছর পর্যন্ত। পিএসভি আইন্দোহোভেনের সঙ্গে ডাচদের বয়সভিত্তিক দলেও দুর্দান্ত খেলে যাচ্ছিলেন গাকপো। সহজেই চোখে পড়ে যান নেদারল্যান্ডসের কোচ লুই ফন গালের। তাঁকে ২০২০ সালের ইউরোর দলে ডাকেন ফন গাল।
কিন্তু ইউরোতে তেমন কিছু করে দেখাতে পারেননি কোচকে। এরপরও বিশ্বকাপে তাঁর ওপর ভরসা রাখেন ফন গাল। এবার অবশ্য কোচের আস্থার প্রতিদান দিয়ে যাচ্ছেন পিএসভির উইঙ্গার। প্রথম তিন ম্যাচে তিনটি গোল করে গ্রুপসেরা হয়ে নেদারল্যান্ডসের শেষ ষোলোতে ওঠায় বড় ভূমিকা রাখেন গাকপো। যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে আজ শেষ ষোলোর ম্যাচেও ডাচদের আশার আবর্তন অনেকটাই তাঁকে ঘিরে।
এমনিতে তিনি লেফট উইংয়ে খেলেন। কিন্তু অন্য বেশির ভাগ উইঙ্গারের চেয়ে গাকপোকে আলাদা করেছে ডান পায়ের কারিকুরি দিয়ে তাঁর ভেতরে ঢুকে যাওয়ার সামর্থ্য। এভাবে তিনি উইং থেকে কখনো কখনো সেন্ট্রাল ফরোয়ার্ডের ভূমিকায়ও আবির্ভূত হন। এ ছাড়া দুর্দান্ত গতির সঙ্গে ড্রিবলিংয়ের ক্ষমতা তো আছেই। জটলার মধ্যেও জায়গা তৈরি করে নিতে পটীয়সী বলে মাঠে সব সময়ই আলাদাভাবে তাঁকে চোখে পড়ে।
মাঠে পারফরম্যান্স দিয়ে ফুটবলপ্রেমীসহ ইউরোপের বড় বড় ক্লাবের নজর কাড়লেও মাঠে প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারদের পক্ষে তাঁকে চোখে চোখে রাখাটা সহজ কাজ নয়। দ্রুত পজিশন বদলাতে পারেন, এর সঙ্গে তীব্রগতিতে দিশাহারা করে দিতে পারেন মার্কারকে। সব মিলিয়ে শেষ ষোলোর ম্যাচের আগে যুক্তরাষ্ট্রের মিডফিল্ডার ক্রিস্টিয়ান পুলিসিক তাঁকে নিয়ে সতীর্থদের সতর্ক করে দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের কোচও গ্রেগ বারহল্টারও গাকপোর কথা বলেছেন আলাদা করে।
২৩ বছর বয়সী গাকপো গ্রুপপর্বেই অসাধারণ খেলে অনেকটাই এগিয়ে গেছেন এবারের বিশ্বকাপের সেরা তরুণ ফুটবলার হওয়ার দৌড়ে। মেম্ফিস ডিপাই, ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ংয়ের মতো প্রতিষ্ঠিত তারকা দলে থাকার পরও যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে গাকপোর ওপর নির্ভর করার কথা বলছেন ফন গাল।
তাঁকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত ডাচ কোচ বলেছেন, ‘কোডি খুবই তরুণ একজন খেলোয়াড়। তার বয়স এখন মাত্র ২৩ বছর। সে কখনো ক্লাবে ১০ নম্বর জার্সি পরতে চায়নি, সেন্টার ফরোয়ার্ডে খেলতে চায়নি। কিন্তু আমার জন্য সে (জাতীয় দলে) এ ভূমিকায় খেলছে।’
ফন গাল এখানেই থামেননি। গাকপোকে নিয়ে তিনি কতটা আশাবাদী, সেটা বোঝা যায় তাঁর পরের কথায়, ‘তারকা হওয়ার মতো সবকিছুই আছে কোডির।’ দেখা যাক, ফন গালের কথা সত্যি প্রমাণ করে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে আজ তারকা হতে পারেন কি না গাকপো!