পেনাল্টি মিস করে চিরদুঃখগাথার ‘খলনায়কেরা’

বিশ্বকাপ ফাইনালে পেনাল্টি মিসের পর ইতালিয়ান কিংবদন্তি রবার্তো বাজ্জিওফাইল ছবি: রয়টার্স

‘আমি অনুভব করছিলাম যেন নৈঃশব্দ্যের ভেতর দিয়ে পৃথিবীর শেষ প্রান্তের দিকে হেঁটে যাচ্ছি’—১৯৯০ বিশ্বকাপে পশ্চিম জার্মানির বিপক্ষে টাইব্রেকারে শট নিতে যাওয়ার সময় ইংল্যান্ডের মিডফিল্ডার ক্রিস ওয়াডলের অনুভূতিটা ছিল এ রকম। তাঁর পেনাল্টি মিসেই সেদিন হেরে শেষ চার থেকে বিদায় নিতে হয়েছিল ইংল্যান্ডকে। পেনাল্টি ফুটবলের ভাগ্য নির্ধারণে রহস্যময় এক খেলা। গোলটা হয়ে গেলে কৃতিত্ব সামান্য। তবে কোনোভাবে মিস হয়ে গেলে হয়ে যেতে হতে পারে চিরন্তন খলনায়ক।

বিশ্বকাপ ফাইনালে টাইব্রেকারে পেনাল্টি নিতে গিয়ে আকাশের ঠিকানায় বল পাঠিয়ে ট্র্যাজেডির নায়ক হয়ে আছেন ইতালিয়ান কিংবদন্তি রবার্তো বাজ্জিও। গোলের সুযোগ হাতছাড়া যেমন হতে পারে প্রতিপক্ষের ভুলে পাওয়া সুযোগ কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে, তেমনি হতে পারে টাইব্রেকারেও।

গত পরশু রাতে যেমন বাঁচা–মরার ম্যাচে পোল্যান্ডের বিপক্ষে পেনাল্টি মিস করে বসলেন মেসি। ম্যাচটা আর্জেন্টিনা জিততে না পারলে নিশ্চিত খলনায়ক হয়ে যেতেন তিনি। সতীর্থদের কল্যাণে পাওয়া ২–০ গোলের জয়ে বেঁচে গেছেন আর্জেন্টাইন তারকা। তবে সবার ভাগ্য মেসির মতো না–ও হতে পারে। বিশ্বকাপের তেমনই কিছু পেনাল্টি মিসের ঘটনা তুলে ধরা হলো এখানে—

জিকো, ব্রাজিল–ফ্রান্স

কোয়ার্টার ফাইনাল, ১৯৮৬

সর্বকালের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়দের একজন ‘সাদা পেলে’ জিকো। ১৯৮৬ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে পেনাল্টিতে গোল মিস না করলে সেদিন ব্রাজিল ম্যাচটা জিতেই গিয়েছিল। সেই ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে বদলি হিসেবে নামেন জিকো। ১–১ গোলে সমতায় থাকা ম্যাচে ৭৫ মিনিটে পেনাল্টি থেকে দলকে এগিয়ে দেওয়ার সুযোগ এসেছিল তাঁর সামনে। তবে ব্রাজিলকে এগিয়ে দিতে ব্যর্থ হন জিকো। পরে টাইব্রেকারে গড়ায় ম্যাচ। সেখানে জিকো অবশ্য ঠিকই গোল করেন। যদিও তাতে শেষ রক্ষা হয়নি। হেরে বিদায় নিতে হয় ব্রাজিলকে।

রবার্তো বাজ্জিও, ব্রাজিল-ইতালি

ফাইনাল, ১৯৯৪

টাইব্রেকার শুটআউট তো বটেই, ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম ট্র্যাজিক ঘটনাই হয়ে আছে ১৯৯৪ বিশ্বকাপের ফাইনালে রবার্তো বাজ্জিওর পেনাল্টি মিস। গোটা টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত খেলা বাজ্জিও ব্রাজিলের বিপক্ষে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে পেনাল্টি মিস করে ফুটবলের চিরদুঃখগাথার গল্পে নিজের জায়গা করে নেন। সেই ট্র্যাজেডি নিয়ে পরে বাজ্জিও বলেছিলেন, ‘সেই যন্ত্রণা এখনো একই রকম। এটা কখনো যাবে না।’

ল্যাম্পার্ড, জেরার্ড এবং ক্যারেগার; ইংল্যান্ড–পর্তুগাল

কোয়ার্টার ফাইনাল, ২০০৬

২০০৬ বিশ্বকাপের ইংল্যান্ডকে বলা হচ্ছিল সোনালি প্রজন্মের দল। যেখানে কোয়ার্টার ফাইনালে আরেক সোনালি প্রজন্মের দল পর্তুগালের মুখোমুখি হয়েছিল ‘থ্রি লায়নস’রা। পর্তুগাল দলে ছিলেন লুইস ফিগো ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর মতো দুই তারকা। নির্ধারিত ৯০ মিনিট এবং পরের ৩০ মিনিটেও সেদিন কেউ কাউকে গোল দিতে পারেনি। ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। তবে পেনাল্টি শুটআউটে ইংলিশ ফুটবলের অন্যতম তিন সেরা তারকা একসঙ্গে সুযোগ হাতছাড়া করেন। গোল করতে ব্যর্থ হন ফ্রাঙ্ক ল্যাম্পার্ড, স্টিভেন জেরার্দ ও জেমি ক্যারেঘার। আর ৩–১ গোলে হেরে বিদায় নেয় ইংলিশরা।

ডেভিড থ্রেজেগে, ফ্রান্স–ইতালি

ফাইনাল, ২০০৬

ফ্রান্সের ২০০০ সালের ইউরো জয়ের নায়ক ছিলেন ডেভিড থ্রেজেগে। তাঁর করা গোল্ডেন গোলে ইতালিকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল ফরাসিরা। তবে সেই থ্রেজেগে খলনায়ক হয়েছিলেন ২০০৬ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালে। জিদানের ঢুসের কারণে কিছুটা চাপা পড়ে গেলেও সেদিন ফ্রান্সের হারের বড় কারণ ছিল থ্রেজেগের পেনাল্টি মিস। দুই দলের সবাই টাইব্রেকারে গোল করলেও পারেননি শুধু থ্রেজেগে। আর তাঁর ভুলেই দ্বিতীয় বিশ্বকাপটা হাতছাড়া হয় ফ্রান্সের।

লিওনেল মেসি, আর্জেন্টিনা–আইসল্যান্ড

গ্রুপ পর্ব, ২০১৮

এবারের পোল্যান্ড ম্যাচের আগে ২০১৮ বিশ্বকাপেও পেনাল্টিতে গোল করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন মেসি। সেবার প্রতিপক্ষ ছিল আইসল্যান্ড। শেষ পর্যন্ত ১–১ গোলে আর্জেন্টিনাকে রুখে দেয় আইসল্যান্ড। সেই ড্র পরের ম্যাচগুলোতে বেশ ভুগিয়েছিল আর্জেন্টিনাকে।