ইউরোপের সবচেয়ে বাজে ক্লাব তারা, ৩৫ ম্যাচের একটিও জেতেনি

চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত কোনো ম্যাচ জেতেনি চেস্কে বুদেয়োভিৎসেইনস্টাগ্রাম

ইউরোপিয়ান ফুটবলে অপরাজিত থেকে মৌসুম শেষ করার অনেক দৃষ্টান্ত আছে। গত মৌসুমে জার্মান চ্যাম্পিয়ন বায়ার লেভারকুসেন যখন অপরাজিত মৌসুম শেষ করার অপেক্ষায় ছিল, তখন এই রেকর্ড নিয়ে অনেক মাতামাতিও হয়েছে।

তবে এবার লেভারকুসেনের উল্টো চিত্রই উপহার দিচ্ছে চেক প্রজাতন্ত্রের ক্লাব এসকে দিনামো চেস্কে বুদেয়োভিৎসে, যারা এখন পর্যন্ত চলতি মৌসুমে ৩৫ ম্যাচ খেলে কোনোটিতেই জিততে পারেনি। এখনো মৌসুমে ২ ম্যাচ বাকি আছে তাদের। এই দুই ম্যাচে জিততে না পারার ধারা বদলাতে পারে কি না, সেটাই দেখার অপেক্ষা।

চেক ফুটবলের শীর্ষ স্তরের লিগে চেস্কে বুদেয়োভিৎসের অবস্থান স্বাভাবিকভাবেই এখন সবার নিচে। ৩৩ ম্যাচে তাদের পয়েন্ট মাত্র ৬। পুরো মৌসুমে এখন পর্যন্ত একটা ম্যাচও জিততে পারেনি তারা। এমনকি ২৬ এপ্রিল ম্লাদা বোলেস্লাভের কাছে ২-১ গোলের হারের পর অবনমনও নিশ্চিত হয়ে যায় তাদের।

এরপরও অবশ্য থামেনি হারের ধারা। এমনকি গত বছরের জুনে সিলোন তাবোরস্কোর বিপক্ষে রেলিগেশন প্লে-অফে জয়ের পর এখন পর্যন্ত কোনো লিগ ম্যাচে জেতেনি চেস্কে বুদেয়োভিৎসে। লিগে ৩৩ ম্যাচে জয়হীন থাকার পাশাপাশি চেক কাপেও ২ ম্যাচ খেলে কোনোটিতে জিততে পারেনি তারা।

আরও পড়ুন

এমন পরিস্থিতিতে ইউরোপীয় ফুটবলে জয়হীন ধারার কথা উঠলে চেক প্রজাতন্ত্রের এই ক্লাবের দুর্দশার সঙ্গে তুলনা টানার মতো আর কোনো ক্লাব নেই। একুশ শতকে শীর্ষ স্তরের ফুটবলে আর কোনো দলের এত বেশি ম্যাচ জয়হীন থাকার রেকর্ডও খুঁজে পাওয়া যায়নি। প্রশ্ন হচ্ছে, কোথায় ভুল করেছে তারা?

চেক ফুটবলের ইতিহাসে এই মৌসুম নিঃসন্দেহে চেস্কে বুদেয়োভিৎসের জন্য অন্যতম ভয়াবহ এক মৌসুম হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ক্লাবটির জয়হীন মৌসুমের পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে। ট্রান্সফারমার্কেট-এর তথ্যবিশ্লেষক ও চেক ফুটবলবিশেষজ্ঞ আন্তোনিন শ্রায়ের বলেন, ‘গত মৌসুমে দিনামো কোনোমতে অবনমন প্লে-অফ জিতে লিগে টিকে ছিল। আর ট্রান্সফার উইন্ডোতে দলটি তাদের স্কোয়াড অনেকটাই দুর্বল করে ফেলে। তাই মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই তাদের অবনমন হওয়ার একটা আশঙ্কা ছিল। কিন্তু কেউই ভাবেনি যে তারা পুরো মৌসুমে একটা ম্যাচও জিততে পারবে না, এমন কিছু ঘটে যাওয়ার শঙ্কা সামান্যই ছিল।’

অনুশীলনে চেস্কে বুদেয়োভিৎসের খেলোয়াড়রা
ইনস্টাগ্রাম

শ্রায়েরের মতে, দিনামোর পতনের পেছনে কোনো একক কারণ নয়, বরং এটি ছিল একসঙ্গে ঘটে যাওয়া অনেকগুলো বিপর্যয়ের সমন্বয়। আর্থিক অস্থিরতা, নেতৃত্বের দুর্বলতা এবং স্কোয়াডের চরম অস্থিরতাই মূলত এমন পতন ডেকে এনেছে দলটির। শ্রায়ের বলেন, ‘গত দুই মৌসুম ধরেই ক্লাবটি আর্থিক সমস্যায় ভুগছিল। এই মৌসুমের প্রথম ম্যাচের পরই এক নতুন মালিক দায়িত্ব নেন এবং সঙ্গে সঙ্গেই ক্লাবের দুই কিংবদন্তি ও সাবেক খেলোয়াড় (ইজি) লেরচ এবং (ইজি) ক্লাদরুবস্কিকে কোচের পদ থেকে বরখাস্ত করে দেন।’

এই সিদ্ধান্তই ছিল মূলত বিশৃঙ্খলার সূচনা। নতুন প্রধান কোচ ফ্রান্তিসেক স্ট্রাকা আগের কোচদের আনা অনেক খেলোয়াড়কে উপেক্ষা করেন, বারবার দলে বড় রদবদল আনেন এবং প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে ৫১ জন আলাদা খেলোয়াড় ব্যবহার করেন। এর পর থেকেই ক্লাবের অবস্থা একেবারে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। মৌসুমের প্রথমার্ধ যাওয়ার পর দলের দুরবস্থা দেখে ক্ষুব্ধ সমর্থকেরা গ্যালারিতে ‘মৃত্যুসনদ’ও বিতরণ করেন এবং শহরজুড়ে ‘অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া মিছিলের’ পরিকল্পনাও করেন। যদিও জানুয়ারিতে মালিকানা ও কোচ বদলের পর সেই মিছিল বাতিল করা হয়। তবে এখন মৌসুম শেষে আবারও নতুন করে দানা বাঁধতে শুরু করেছে ক্ষোভ।

আরও পড়ুন

অবনমন নিশ্চিত হলেও মৌসুমটা জয় দিয়ে শেষ করার সম্ভাবনা এখনো শেষ হয়ে যায়নি। আজ রাতে রেলিগেশন লিগের ম্যাচে তেপলিৎসের মুখোমুখি হওয়ার পর আগামী সপ্তাহে তারা মুখোমুখি হবে ডুকলা প্রাগের। এই দুই ম্যাচ পরেই আনুষ্ঠানিকভাবে দ্বিতীয় বিভাগে নেমে যাবে দলটি। শ্রায়ের বলেন, ‘আমরা এখন দিনামোর শীর্ষ লিগে শেষ কয়েকটি ম্যাচের সাক্ষী হচ্ছি এবং কেউই জানে না, কবে তারা ঘুরে দাঁড়াবে বা আদৌ পারবে কি না, আবার শীর্ষ স্তরে ফিরে আসতে।’

এমন পরিস্থিতিতে বাকি থাকা দুটি ম্যাচে জয় পাওয়া কার্যত গুরুত্বহীন বলে মনে হতে পারে, তবু এটি ক্লান্ত ও দুঃখভারাক্রান্ত সমর্থকদের জন্য কিছুটা আনন্দের উপলক্ষ এনে দিতে পারে এবং সম্ভবত অবসান ঘটাতে পারে সেই দুর্ভাগ্যজনক রেকর্ডের—ইউরোপজুড়ে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলে একটি জয়ও না পাওয়া ক্লাব হিসেবে পরিচিত হওয়া থেকে।