ক্লেমেন্তে আগেই জানতেন চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা

তিন যুগের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে বিশ্বকাপ ট্রফি জিতেছে আর্জেন্টিনারয়টার্স

নামটা মনে রাখুন—জোয়াকিম ক্লেমেন্তে। তিনি লন্ডনভিত্তিক লিবেরাম ক্যাপিটালের একজন বিশ্লেষক ও কৌশল নির্ধারক। কাজ করেন শেয়ারবাজার নিয়ে। শেয়ারবাজারের গতিপ্রকৃতি বিশ্লেষণে ২০ বছরের অভিজ্ঞ। পূর্বাভাস দেওয়ার ক্ষেত্রে অর্থনীতিবিদদের সুনাম খুব একটা নেই। বরং যথেষ্ট সতর্কই থাকেন তাঁরা। কিন্তু সেই কঠিন কাজটাই করেছিলেন জোয়াকিম ক্লেমেন্তে, তা–ও আবার বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে।

গত ২০ সেপ্টেম্বর জোয়াকিম ক্লেমেন্তে ১২ পাতার একটি লেখা প্রকাশ করেছিলেন। ‘স্ট্র্যাটেজি, অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড সাসটেইনিবিলিটি: ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপ প্রেডিকশনস’ শিরোনামের সেই লেখায় তিনি মূলত এবারের কাতার বিশ্বকাপে কে চ্যাম্পিয়ন হবে, সেই পূর্বাভাসই দিয়েছিলেন। পরিষ্কারভাবে বলেছিলেন, এবার বিশ্বকাপ যাবে আর্জেন্টিনায় এবং মেসি এমন এক কাপ জিতবেন, যা রোনালদো কখনোই হাতে নিতে পারবেন না।

আরও পড়ুন

মজার ব্যাপার হচ্ছে জোয়াকিম ক্লেমেন্তে গত দুই বিশ্বকাপ নিয়েও পূর্বাভাস দিয়েছিলেন এবং তাঁর পূর্বাভাস সম্পূর্ণ সঠিকও হয়েছিল। এবার সঠিক পূর্বাভাসের হ্যাটট্রিক করলেন জোয়াকিম ক্লেমেন্তে।

এবারের আসর নিয়ে ক্লেমেন্তের সব কথা যে মিলেছে, তা নয়। যেমন তিনি বলেছিলেন এবার ফাইনাল খেলবে ইংল্যান্ড। ফ্রান্সকে তিনি দ্বিতীয় পর্বেই বিদায় দিয়ে দিয়েছিলেন। তবে জার্মানি গ্রুপ পর্বেই বাদ পড়বে, এমন একটি ধারণাও তিনি দিয়ে রেখেছিলেন।

বিশ্বকাপ শিরোপায় চুমু খাচ্ছেন মেসি
ছবি: রয়টার্স

জোয়াকিম ক্লেমেন্তে একটি গাণিতিক মডেল তৈরি করে পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। মূলত চারটি বিষয় সামনে রেখে এই মডেল করা। ১. মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি)—বিশ্বের সর্বত্রই ফুটবল খেলা হয়। তবে বিশ্বকাপের মতো আসরে সফল হতে হলে অবশ্যই ফুটবল অবকাঠামোর প্রয়োজন। আর সে জন্য বিনিয়োগ করতে হবে। ভালো মাঠ লাগবে, যেখানে তরুণ খেলোয়াড়েরা নিয়মিত খেলতে পারে। দরিদ্র দেশগুলো এই বিনিয়োগ করতে পারে না বলেই বড় আসরে সফল হয় না। আবার বেশি ধনী হলেও সমস্যা। তখন ধনী পরিবারের তরুণেরা ফুটবলে আকৃষ্ট হয় না। ২. জনসংখ্যা—অধিক জনসংখ্যা একটি বড় পূর্বশর্ত। যে দেশের জনসংখ্যা বেশি, তাদের তরুণ প্রতিভার সংখ্যা বেশি। তবে ব্যতিক্রমও আছে।

যেমন চীন ও ভারত। যদিও বিশাল জনসংখ্যা নিয়েও ভারতের প্রধান খেলা ক্রিকেট। সুতরাং বেশি মানুষ থাকলেই হবে না, দেশটির প্রধান খেলাও হতে হবে ফুটবল। এ দিক থেকেই এগিয়ে দক্ষিণ আমেরিকা। তাদের জনসংখ্যা বেশি, ফুটবল সেখানে ধর্মের মতো, প্রায় প্রতিটি তরুণই অলিগলিতে ফুটবল খেলে। ৩. তাপমাত্রা—বেশি ঠান্ডা বা বেশি গরমের দেশগুলো ফুটবলে খুব বেশি সফল নয়। ফুটবল খেলার জন্য যে আদর্শ গড় তাপমাত্রা, তা হলো ১৪ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। মূলত ইউরোপের দক্ষিণাঞ্চল এবং দক্ষিণ আমেরিকার তাপমাত্রা ফুটবলের জন্য ভালো। ৪. সমর্থকদের উপস্থিতি—স্টেডিয়ামে যে দলের সমর্থক বেশি থাকে, তারা বিশেষ সুবিধা পায়। খেলার জয়-পরাজয়েও এর প্রভাব পড়ে।

আরও পড়ুন

জোয়াকিম ক্লেমেন্তের পূর্বাভাসের ক্ষেত্রে আরেকটি বড় উপাদান ছিল এবারের বিশ্বকাপের সময়কাল। সাধারণত লম্বা ফুটবল মৌসুম শেষ হওয়ার পরে বিশ্বকাপ শুরু হয়। টানা ৫০টি ম্যাচ খেলার পর আবার বিশ্বকাপ খেলতে হয়। অনেকেই ক্লান্ত থাকেন। কিন্তু এবার বিশ্বকাপ হয়েছে মৌসুম শুরু হওয়ার পরে। সবাই গড়ে ১৫টির মতো ম্যাচ খেলেছেন।

ক্লান্তি কম ছিল। আবার মৌসুমের মাঝপথে বিশ্বকাপ হয়েছে বলে দলগুলোও নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া ঠিকঠাক করতে পারেনি। নিজেরা একসঙ্গে বেশি অনুশীলনও করতে পারেনি। ফলে টিমওয়ার্কের ঘাটতি থাকবে বলে জানিয়েছিলেন জোয়াকিম ক্লেমেন্তে। তাঁর মনে হয়েছিল, ব্যক্তিগত নৈপুণ্য যারা বেশি দেখাবে, যে দলে প্রতিভাবান খেলোয়াড়ের সংখ্যা বেশি, তারাই বেশি সফল হবে। আর এখানেই এগিয়ে থাকবেন মেসির মতো খেলোয়াড়েরা।

আরও পড়ুন

তবে ক্লেমেন্তে ছাড়াও বিশ্বকাপ নিয়ে সঠিক পূর্বাভাস দিয়েছিল বিসিএ রিসার্চ নামে কানাডাভিত্তিক একটি বিনিয়োগ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান। তারা বলেছিল, এবার বিশ্বকাপ নেবে মেসির আর্জেন্টিনা, তারা ফাইনালে টাইব্রেকারে হারাবে পর্তুগালকে। পর্তুগাল ফাইনালে উঠবে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে।

তবে ইএ স্পোর্টস আরও এগিয়ে। এটি মূলত গেমিং কোম্পানি। তারাও এ নিয়ে চার বিশ্বকাপে পূর্বাভাস দিয়ে চারবারই সফল। যদিও ইএ স্পোর্টস বলেছিল, ফাইনাল হবে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের মধ্যে, ফ্রান্স হবে তৃতীয়।