ইতিহাসের প্রথম আন্তর্জাতিক ফুটবলের স্মৃতি ফেরাচ্ছে ইংল্যান্ড–স্কটল্যান্ড

ইতিহাসের প্রথম আন্তজার্তিক ম্যাচের স্মৃতিকে স্মরণ করে সার্ধশত পূর্তি পালন করবে ইংল্যান্ড ও স্কটল্যান্ডছবি: টুইটার

১৮৭২ সাল, অর্থাৎ আজ থেকে প্রায় ১৫০ বছর আগে ইতিহাসের প্রথম আন্তর্জাতিক ফুটবল ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল ইংল্যান্ড-স্কটল্যান্ড। গোলশূন্য ড্র হওয়া সেই ম্যাচ দিয়ে শুরু হয়েছিল আন্তর্জাতিক ফুটবলের রোমাঞ্চকর এক যাত্রা। সেদিনের সেই ম্যাচ না হলে কে জানে, ফুটবলের কত ঐতিহাসিক মুহূর্ত অলিখিতই থেকে যেত!

ভাবুন তো, ২০০৬ বিশ্বকাপ ফাইনালে মার্কো মাতেরাজ্জিকে জিনেদিন জিদানের মাথা দিয়ে আঘাত করা, ২০০২ সালে ফাইনালের আগে রোনালদো নাজারিওর সেই চুলের ছাট, ১৯৯৪ বিশ্বকাপ ফাইনালে রবার্তো বাজ্জ্যর পেনাল্টি মিস, ১৯৮৬ বিশ্বকাপে ৫ ফুট ৫ ইঞ্চি উচ্চতার ডিয়েগো ম্যারাডোনার কাছে ৬ ফুট উচ্চতার পিটার শিলটনের নাজেহাল হওয়া, পেলে নামের এক রাজার উত্থান এবং ১৯৩০ সালে উরুগুয়ের বিশ্বকাপ জেতার মতো কতশত গল্পের ভিত রচিত হয়েছিল সেই দেড় শ বছর আগে নভেম্বর মাসের ৩০ তারিখের দুপুর দুইটায় শুরু হওয়া ম্যাচটি দিয়ে। এবার সেই ম্যাচের স্মৃতিকে স্মরণ করে সার্ধশত পূর্তি পালন করবে গ্রেট ব্রিটেনের দুই প্রতিবেশী দেশ। আর ম্যাচটি সামনে রেখে নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগও।

আরও পড়ুন

ম্যাচটি সামনে রেখে ইংল্যান্ড অভিনব এক ওয়ার্ম-আপ জার্সি পরবে বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম মেইল অনলাইন। এই জার্সি মূলত ইংল্যান্ডের সেই প্রথম ম্যাচ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে বানানো। সীমিত সংস্করণের এই জার্সির নকশা করেছে বিশ্বখ্যাত ক্রীড়াসামগ্রী নির্মাতা প্রতিষ্ঠান নাইকি। পরে এই জার্সিগুলো নিলামে তোলা হবে এবং যার অর্থ যাবে এফএর অফিশিয়াল পার্টনার আলজেইমার সোসাইটিতে। একইভাবে স্কটল্যান্ডের জার্সিতেও থাকবে ঐতিহ্যের ছোঁয়া।

ইতিহাসের প্রথম ম্যাচটির মতো ১৫০ বছর পূর্তির ম্যাচটির আয়োজকও স্কটল্যান্ড। তবে ১৫০ বছর আগের ম্যাচটি খেলার জন্য কোনো ফুটবল মাঠই পাওয়া যায়নি। ম্যাচটি খেলতে হয়েছিল একটি ক্রিকেট মাঠে। হ্যামিল্টন ক্রিসেন্ট নামের ভেন্যুটি মূলত ওয়েস্ট অব স্কটল্যান্ড ক্রিকেট ক্লাবের ঘরের মাঠ ছিল। এ ম্যাচ খেলার জন্য ইংল্যান্ডের খেলোয়াড়েরা স্কটল্যান্ডে গিয়েছিল ট্রেনে করেন। এ যাত্রায় তাঁদের সময় লেগেছিল প্রায় সাড়ে ১২ ঘণ্টা। ইংল্যান্ড দলের খেলোয়াড়েরা এসেছিলেন অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি, কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি, সারে রাইফেলস ও ক্রিস্টাল প্যালেস থেকে।

অন্যদিকে স্কটল্যান্ডের দলটি ছিল মূলত কুইন্স পার্ক ক্লাবের নকল। গোটা একাদশই এসেছিল সেই ক্লাব থেকে। ধারণা করা হয়, ম্যাচটি দেখার জন্য উপস্থিত ছিলেন ২ হাজার ৫০০ থেকে ৪ হাজার দর্শক। ম্যাচের টিকিটের দাম ছিল এক শিলিং। আর টিকিটের গায়ে লেখা ছিল—‘ইন্টারন্যাশনাল ফুটবল ম্যাচ (অ্যাসোসিয়েশনস রুলস)’।

তবে এ ম্যাচ দেখার জন্য নারী দর্শকদের বিনা মূল্যে আসার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।
সেই ম্যাচে মাঝমাঠ পর্যন্ত গোলরক্ষকদের হাত দিয়ে বল ধরার অনুমতি ছিল। এ ছাড়া কোনো পেনাল্টি, হলুদ কার্ড কিংবা লাল কার্ডের নিয়মও ছিল না। এমনকি খেলোয়াড়দের সুরক্ষার জন্য কোনো শিনগার্ডও ছিল না। এ ছাড়া প্রতিটি গোলের পর অর্ধ পরিবর্তনের নিয়ম ছিল।

ইউরোতে ইংল্যান্ডের সঙ্গে সমানে সমান লড়াই করেছিল স্কটল্যান্ড
ছবি: এএফপি

তবে গোল না হলে বিরতির সময় অর্ধ পরিবর্তনের নিয়ম রাখা হয়েছিল। আর মাঠে দুজন আম্পায়ার ছিলেন, যাঁরা মাঠের দুই অর্ধে অবস্থান করতেন এবং দুজন দুই দলকে প্রতিনিধিত্ব করতেন। আম্পায়াররা কোনো সিদ্ধান্তে একমত না হলে রেফারি সেই বিষয়ের সমাধান দিতেন। ব্যাপারটা এমন ছিল যে গ্রায়েম সোনেস ও রয় কিন লিভারপুল ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের প্রতিনিধিত্ব করছেন। কিন্তু তারা যদি সিদ্ধান্তে একমত না হন, তবে মাইক ডিনকে বিচার দেবেন। এসবের বাইরে আরও এমন কিছু নিয়ম এতে ছিল, যার সঙ্গে আধুনিক ফুটবলের কোনো মিল নেই।

আরও পড়ুন

দেড় শ বছর আগের ম্যাচটি ক্রিকেট মাঠে হলেও এবারেরটি হবে স্কটল্যান্ড ফুটবল দলের ঘরের মাঠ হ্যাম্পডেন পার্কে। তবে এ ম্যাচ সামনে রেখে বিশেষ জার্সি পরে ইতিহাসের প্রথম ম্যাচটির ভেন্যু পরিদর্শনে গেছেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক হ্যারি কেইন ও স্কটল্যান্ডের অ্যান্ডি রবার্টসন। দুই দলের লড়াই শুরু হবে আজ রাত ১২টা ৪৫ মিনিটে।

এটা প্রীতি ম্যাচ হলেও ইউরো বাছাইয়ের প্রস্তুতির জন্য আলাদা গুরুত্ব পাচ্ছে। ইংল্যান্ড নিজেদের সর্বশেষ ম্যাচে ১-১ গোলে ড্র করেছে ইউক্রেনের সঙ্গে। যদিও এ ড্রয়ের পরও গ্রুপ ‘সি’তে শীর্ষে আছে তারা। অন্যদিকে দুর্দান্ত ছন্দে আছে স্কটিশরাও। ইউরো বাছাইয়ে ৫ ম্যাচের সব কটি জিতেছে তারা। এই ম্যাচগুলোতে ১২ গোল করার বিপরীতে হজম করেছে মাত্র ১ গোল। পাশাপাশি ঐতিহ্যের কারণে এ ম্যাচ মর্যাদার লড়াইও বটে।

ইংল্যান্ড অধিনায়ক হ্যারি কেইন
ছবি: এএফপি

এ লড়াইকে প্রীতি ম্যাচ হিসেবে না দেখার কথা বলেছেন ইংলিশ ডিফেন্ডার কাইল ওয়াকারও। স্কাই স্পোর্টসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ওয়াকার বলেছেন, ‘অবশ্যই এ ম্যাচকে প্রীতি ম্যাচ হিসেবে দেখছি না। আমি এ ধরনের খেলাগুলো খেলতে পছন্দ করি। বিশেষ করে এ ধরনের ম্যাচ আয়োজনের পেছনে যে গল্প আছে, তা বিবেচনা করে।’

স্কটল্যান্ড দারুণ ছন্দে থাকায় কঠিন চ্যালেঞ্জও প্রত্যাশা করছেন ওয়াকার, ‘আশা করি, আমরা এ ম্যাচে ভালো পারফরম্যান্স দেখাতে পারব। তাদের সাম্প্রতিক ফল খুব ভালো। এ কারণে ম্যাচটি কঠিন হবে। সর্বশেষ তাদের মাঠে গিয়ে আমরা ড্র করতে পেরেছিলাম। তা–ও শেষ মিনিটে গিয়ে হ্যারি (কেইন) গোল করেছিল। আশা করছি, আমরা সেখানে গিয়ে ভালো পারফরম্যান্স দেখাতে পারব। তবে এটুকু বলতে পারি, এটা নিছক একটি প্রীতি ম্যাচ হবে না।’