জয়নবের পেনাল্টি–ব্যর্থতায় হাতছাড়া শিরোপা

শিরোপ হাতছাড়া করল বাংলাদেশছবি: বাফুফে

ম্যাচের তখন শেষ মিনিটের খেলা চলছে। নেপালের সঙ্গে ১-১ গোলে সমতায় ছিল বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৫ নারী দল। এমন সময়ে মেয়েদের সামনে আসে জয়ের সুবর্ণ সুযোগ, পেনাল্টি পেয়ে যায় তারা। গোল করতে পারলেই অনূর্ধ্ব-১৫ নারী সাফের শিরোপা জিতত বাংলাদেশ। পেনাল্টি কিকটি নিতে গেলেন ডিফেন্ডার জয়নব বিবি। সতীর্থরা কাছে এসে কয়েকবার সাহসও জোগাল জয়নবকে। কিন্তু আত্মবিশ্বাসের তলানিতে থাকা জয়নব বল তুলে দিল নেপালের গোলরক্ষক সুজাতা তামাঙের হাতে!

ম্যাচটি নিয়ে গ্যালারিতে উন্মাদনার কমতি ছিল না। পতাকা আর নানা রঙের প্ল্যাকার্ড হাতে কয়েক হাজার বাংলাদেশি দর্শক তো ছিলেনই, ছিলেন নেপালিরাও। ম্যাচের পুরোটা সময় গ্যালারি মাতিয়ে রাখেন তাঁরা। ম্যাচটি দেখতে বড় আকারের স্পিকার বক্স নিয়ে গ্যালারিতে এসেছেন নেপালিরা।

অনূর্ধ্ব-১৫ নারী সাফে শেষ পর্যন্ত হেসেছে নেপালের মেয়েরাই। কমলাপুর বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে আজ বাংলাদেশের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করেছে নেপাল। আর এই ড্রয়েই টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তারা। বাংলাদেশের গোলটি করেছে রুমা আক্তার। নেপালের গোলটি সমীক্ষা মাগারের।  

বাংলাদেশ দল
ছবি: বাফুফে

ভুটান, নেপাল, বাংলাদেশ—তিন দেশ নিয়ে হয়েছে এবারের অনূর্ধ্ব-১৫ সাফ টুর্নামেন্ট। রাউন্ড রবিন লিগ পদ্ধতিতে হয়েছে খেলা। টুর্নামেন্টে প্রতিটি দল একে অপরের সঙ্গে খেলেছে দুটি করে ম্যাচ। ৫ নভেম্বর প্রথম ম্যাচে নেপালের কাছে হারা বাংলাদেশ অবশ্য ভুটানকে দুটি ম্যাচেই হারিয়েছিল। ৩ ম্যাচে ২ জয়ে বাংলাদেশের পয়েন্ট ছিল ৬।

কিন্তু ৩ ম্যাচের সব কটিতেই জয়ী নেপালের পয়েন্ট ছিল ৯। আজকের ম্যাচটি তাই বাংলাদেশের জন্য হয়ে পড়ে অলিখিত ‘ফাইনাল’। জিতলেই চ্যাম্পিয়ন—এই সমীকরণ নিয়ে খেলতে নামে বাংলাদেশ। নেপালের প্রয়োজন ছিল শুধু একটি পয়েন্ট। লিগে ৪ ম্যাচে নেপালের পয়েন্ট ১০, বাংলাদেশের পয়েন্ট ৭।    

ভুটানের বিপক্ষে দুই ম্যাচে ১৭ গোল করে বাংলাদেশ। আর ওই ১৭ গোলের মধ্যে ৯টিই করে স্ট্রাইকার সুরভী আকন্দ। বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে বড় অস্ত্রকে আটকানোর সব রকমের পরিকল্পনাই ছিল নেপালের কোচ ভগবতী রানা মাগারের। ম্যাচের বেশির ভাগ সময়ই তিন ডিফেন্ডার সারাক্ষণ পাহারায় রাখে সুরভীকে। এরপরও সুরভী চেষ্টা করেছে, কিন্তু গোলমুখ আর খুলতে পারেনি। বল নিয়ে বাংলাদেশের ফরোয়ার্ডরা অ্যাটাকিং থার্ডে গিয়েছে কিন্তু ভালো ফিনিশিংয়ের অভাবে গোল আর পায়নি। ছিল গোল মিসের মহড়াও।  

বাংলাদেশ দল যেখানে আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলেছে, সেখানে রক্ষণ সামলে আক্রমণে ওঠা ছিল নেপালের কৌশল। পুরো ম্যাচে একটাই ভালো সুযোগ পেয়েছে নেপাল এবং সেই সুযোগটাই কাজে লাগিয়েছে।

ম্যাচের ১৪ মিনিটে বাংলাদেশের ডিফেন্ডার কানন রানী বাহাদুরের ভুল পাস থেকে বল পেয়ে যায় সমীক্ষা। গতিময় বলেই দারুণ শটে গোল দিল সমীক্ষা। বাংলাদেশ গোলরক্ষক সঙ্গীতার মাথার ওপর দিয়ে বল ঢোকে জালে (১-০)।

ম্যাচের ২২ মিনিটে গোল শোধের দারুণ সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু জয়নব বিবির কর্নার থেকে রুমার হেড গোললাইনে সেভ করে নেপালের সিমরান রাই। গোল শোধে মরিয়া বাংলাদেশ সমতায় ফেরে ৫৪ মিনিটে। কর্নার থেকে জয়নবের উড়ে আসা বলে মাথা ছুঁয়ে রুমা আক্তার করেছে ১-১। দ্বিতীয়ার্ধে বাংলাদেশ কোচ গোলাম রব্বানী বদলি হিসেবে তৃষ্ণা রানী ও উমেহ্লা মারমাকে মাঠে নামিয়েছিল। কিন্তু এরপরও ম্যাচের স্কোরলাইনে কোনো বদল হয়নি।