৭১ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বাজে সময়ের ঘূর্ণিপাকে লিভারপুল, উত্তর নেই স্লটের কাছেও

লিভারপুল তারকা মোহাম্মদ সালাহর হতাশ চাহনিই বলে দিচ্ছে সবকিছু। বাজে সময় যাচ্ছে লিভারপুলেরএএফপি

কথায় আছে না, ‘সকালের সূর্য দেখেই বোঝা যায় দিনটি কেমন যাবে।’ এই কথা চলতি মৌসুমে লিভারপুলের ক্ষেত্রে অন্তত খাটে না। টানা সাত জয়ে মৌসুম শুরু করেছিল যে লিভারপুল, সেই দলটাই এখন ৭১ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বাজে সময়ের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে!

চ্যাম্পিয়নস লিগে গতকাল রাতে ঘরের মাঠ অ্যানফিল্ডে পিএসভি আইন্দহফেনের কাছে ৪-১ গোলে হেরেছে লিভারপুল। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে সর্বশেষ ১২ ম্যাচে এটি তাদের নবম হার। ১৯৫৩-৫৪ মৌসুমের পর এবারই প্রথম এতটা বাজে সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে অ্যানফিল্ডের ক্লাবটি। সর্বশেষ তিন ম্যাচেই অন্তত তিনটি করে গোল হজম করে হার—লিভারপুল এবারের আগে সর্বশেষ এমন কিছু দেখেছে ১৯৫৩ সালের ডিসেম্বরে। যে অ্যানফিল্ড তাদের জন্য দুর্গ, হাতের তালুর মতো চেনা, সেই মাঠেই পাঁচ দিনের মধ্যে দুই ম্যাচে লিভারপুল হজম করেছে ৭ গোল!

কেন এমন হচ্ছে—সেই প্রশ্নের যে কোনো উত্তর নেই লিভারপুলের কারও কাছে, সেটা বোঝা গেল পিএসভি ম্যাচের পর কার্টিস জোনসের কথা শুনে। ‘আরটিই’কে লিভারপুল মিডফিল্ডার বলেন, ‘সত্যি বলতে, এর উত্তর আমার কাছে নেই। এটা স্রেফ মেনে নেওয়া যায় না। ভেতরে-ভেতরে রাগের পর্যায়টাও পেরিয়ে গেছি। এমন অবস্থায় আছি যে বলার মতো আর কিছুই নেই।’

১২ ম্যাচে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে প্রিমিয়ার লিগ টেবিলে ১২তম গতবারের শিরোপাজয়ী লিভারপুল। লিগে সর্বশেষ দুই ম্যাচে হারলেও প্রতিযোগিতাটি চ্যাম্পিয়নস লিগ হওয়ায় লিভারপুলের আশার জায়গাও ছিল। কারণ, পিএসভির মুখোমুখি হওয়ার আগে এই প্রতিযোগিতায় সর্বশেষ তিন ম্যাচেই তারা জিতেছে। এই ম্যাচের আগে ঘরের মাঠে ইউরোপের শীর্ষ এ প্রতিযোগিতার গ্রুপ পর্বে সর্বশেষ ১৪ ম্যাচেই তারা অপরাজিত ছিল।

কিন্তু ডাচ ক্লাবটির বিপক্ষে সবকিছু তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়তে শুরু করে ম্যাচের ৬ মিনিট সময় থেকে। তখন কর্নার থেকে উড়ে আসা বল ভার্জিল ফন ডাইক ঠিক কী ভেবে লাফিয়ে উঠে হাত দিয়ে ঠেকালেন, তা তিনিই ভালো বলতে পারবেন। ফাউলের শিকার হওয়ার আবেদন করেছিলেন রেফারির কাছে। উল্টো ফন ডাইকের হ্যান্ডবলের অপরাধে পেনাল্টি হজম করতে হয় আর্নে স্লটের দলকে। আর পিএসভি উইঙ্গার ইভান পেরিসিচের স্পটকিক থেকে গোল করতে কোনো অসুবিধাই হয়নি।

১০ মিনিট পর ডমিনিক সোবোসলাইয়ের গোলে লিভারপুল সমতায় ফিরলেও বিরতির পর রীতিমতো দুঃস্বপ্নের ভেতর দিয়ে যেতে হয়। এই অর্ধে স্লটের দল হজম করেছে তিন গোল—জোড়া গোল করেন পিএসভি ফরোয়ার্ড কৌহাইব ড্রিউয়েচ, ৭৩ ও ৯১ মিনিটে। তার আগে ৫৬ মিনিটে গোল করে পিএসভিকে আবারও এগিয়ে দেন অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার গাস টিল। ২০০৮ ইউরোপা লিগে টটেনহামকে হারানোর পর এই ১৭ বছরে কোনো ইংলিশ ক্লাবের বিপক্ষে এটাই প্রথম জয় পিএসভির। শুধু তাই নয়, ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায় ইংল্যান্ডের মাটিতে কোনো ডাচ ক্লাবের এটাই সবচেয়ে বড় জয়।

আর লিভারপুল? ৫ ম্যাচে ৩ জয় ও ২ হারে ৯ পয়েন্ট নিয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগের লিগ পর্বে ১৩তম স্থানে নেমে গেছে লিভারপুল। ৫ ম্যাচে ৮ পয়েন্ট নিয়ে ১৫তম পিএসভি। স্মরণ করিয়ে দেওয়া ভালো, লিগ পর্বে দলগুলোর আটটি করে ম্যাচ শেষে শীর্ষ আট দল স্বয়ংক্রিয়ভাবে শেষ ষোলোয় উঠবে।

ব্যর্থতা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে পারছেন না লিভারপুল কোচ আর্নে স্লট
এএফপি

ম্যাচ শেষে স্লটের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল লিভারপুলে নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি চিন্তিত কি না? লিভারপুল কোচের উত্তর, ‘আমি ভাবছি না। বোঝাতে চাইছে যে নিজের অবস্থান নিয়ে দুশ্চিন্তার বদলে আমার মনোযোগ অন্য সব বিষয়ে।’

স্লট আরও বলেছেন, ‘(বাজে পারফরম্যান্সের) এই ধারাটা সবার জন্যই ধাক্কা। খেলোয়াড় এবং আমার জন্যও। আমি সহজে বিস্মিত হই না, কিন্তু এটা খুবই অপ্রত্যাশিত। আমরা সবাই আরও ভালো করতে পারি। তবে কথাটা আমিসহ সবার জন্যই প্রযোজ্য।’

সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে লিভারপুল সর্বশেষ এতটা বাজে পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গিয়েছিল ১৯৫৩ সালের নভেম্বর থেকে ১৯৫৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত। সেই সময়ে ১২ ম্যাচের মধ্যে দলটি হেরেছিল ৯টিতেই। এবারও তেমন হওয়ায় ক্লাবটিতে স্লটের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক। কিন্তু স্লটের সাফ জবাব, ‘আমি নিরাপদ। ভালো আছি। ওপর থেকে আমার অনেক সমর্থন আছে। একটি জয়ে পরিস্থিতি ঘুরিয়ে দিতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু সেটা করতে না পারলে প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক।’

দাপটের সঙ্গে বায়ার্নকে হারায় আর্সেনাল
এএফপি

শতভাগ সফল আর্সেনাল

এমিরেটস স্টেডিয়ামে গতকাল রাতে বায়ার্ন মিউনিখকে ৩-১ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগে জয়ের শতভাগ ধারা বজায় রেখেছে আর্সেনাল। ৫ ম্যাচে ১৫ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে মিকেল আরতেতার দল। ইংলিশ ক্লাবটির হয়ে গোল করেন জুরিয়েন টিম্বার, ননি মাদুয়েকে ও গ্যাব্রিয়েল মার্তিনেল্লি। বায়ার্নের হয়ে গোল করেন লেনার্ট কার্ল। চ্যাম্পিয়নস লিগের এবারের মৌসুমে এটাই প্রথম গোল হজম আর্সেনালের।