‘হোর্তালিজার জ্ঞানী’কে ৫০ বছর পর পেছনে ফেলে রেকর্ড গ্রিজমানের

গোল করে রেকর্ড গড়ে উদ্‌যাপন গ্রিজমানের। পাশে তাঁর সতীর্থ রদ্রিগো দি পলরয়টার্স

অসাধারণ ফুটবলমস্তিষ্কের জন্য তাঁকে বলা হয় ‘হোর্তালিজার জ্ঞানী’। কেউ কেউ ‘বিগ বুটস’ বলতেন। আতলেতিকো মাদ্রিদে তাঁর রেখে যাওয়া জুতা জোড়া এতই ‘বড়’যে অন্য কারও পায়ে লাগবে না—এই ভাবনা থেকে নামটি দেওয়া এবং তা মোটেও বাড়াবাড়ি নয়।

কিংবদন্তি নিজেই বলে গেছেন, ‘আতলেতিকো মাদ্রিদ আমার জীবন।’ কেউ কেউ বলেন, তাঁর এ কথার উল্টোটাও সত্য। ওয়ান্দা মেত্রোপলিতানো স্টেডিয়ামের বাইরে তাঁর ভাস্কর্য আতলেতিকো তো আর এমনি এমনি স্থাপন করেনি! ওহ হ্যাঁ, আসল কথাই বলা হয়নি, ভদ্রলোকের নাম লুইস আরাগোনেস।

সময়ই বলে দেবে, আমি কিংবদন্তি হতে পারব কি না। লুইস আরাগোনেস যেভাবে বছরের পর বছর সবার মনে থেকে গেছেন, তেমনটা পারব কি না, জানি না। আশা করি পারব। তিনি ক্লাবের ইতিহাসে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এক ব্যক্তিত্ব। আশা করি, তাঁর মতো হতে পারব।
আতোয়ান গ্রিজমান

আতলেতিকো মাদ্রিদের দুর্দান্ত মিডফিল্ডার, খেলেছেন স্ট্রাইকার পজিশনেও। আবার ওই ক্লাবেরই কিংবদন্তি কোচ ও কয়েক প্রজন্মের স্প্যানিশ ফুটবলারদের গুরু—এমন অনেক পরিচয়ই দেওয়া যাবে আরাগোনেসের।

নিশ্চয়ই আরও মনে পড়ছে, তাঁর কোচিংয়ে স্পেনের ২০০৮ ইউরো জয়। সেবার বড় প্রতিযোগিতায় স্পেনের ৪৪ বছরের শিরোপা–খরাই শুধু ঘোচাননি, আরাগোনেস ফুটবল–বিশ্বকে উপহার দিয়েছিলেন টিকিটাকার মতো নতুন এক ধারা। ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে ‘হোর্তালিজার জ্ঞানী’ পাড়ি জমান না–ফেরার দেশে। এত দিন পর কিংবদন্তির প্রসঙ্গ টেনে তোলার কারণ আতলেতিকোরই আরেক ফরোয়ার্ড আঁতোয়ান গ্রিজমান।

গ্রিজমানের প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে আরাগোনেসের ব্যাপারে আরেকটু খুলে বলা প্রয়োজন। আতলেতিকোয় ১০ বছর খেলে ১৯৭৪ সালে পেশাদার ফুটবলের ইতি টানার পর সে বছরই ক্লাবটির কোচের দায়িত্ব নেন আরাগোনেস। তিন বছর পর ১৯৭৭ সালে আতলেতিকোকে জেতান প্রথম বিভাগের শিরোপা। এর ২৫ বছর পর আতলেতিকোর যখন তাঁকে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, সে সময় (২০০১) কোচের দায়িত্ব নিয়ে প্রাণের ক্লাবকে দ্বিতীয় বিভাগে চ্যাম্পিয়ন বানিয়ে শীর্ষস্তরে তুলে এনেছিলেন। চারটি আলাদা দশকে চারবার ‘ম্যাট্রেস মেকার্স’দের কোচের দায়িত্বে ছিলেন।

তার আগে খেলোয়াড় হিসেবে মাদ্রিদের ক্লাবটির হয়ে তিনবার জিতেছেন লিগ। আর ১৯৭৪ ইউরোপিয়ান কাপের (এখনকার উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ) ফাইনালের অতিরিক্ত সময়ে ফ্রি কিক থেকে বল জড়িয়েছিলেন বায়ার্ন মিউনিখের জালে।

আরও পড়ুন

সেই ম্যাচ ১-১ গোলে ড্র হয় এবং পরে রিপ্লে ফাইনালে জিতেছিল বায়ার্নই। কিন্তু আরাগোনেস যে গোলটি করেছিলেন, সেটি ৫০ বছর পর আলোচনায় উঠে আসছে গ্রিজমানের কারণে। আতলেতিকোর হয়ে সেটি ছিল আরাগোনেসের ১৭৩তম গোল। ক্লাবটির হয়ে এত দিন ‘হোর্তালিজার জ্ঞানী’ই ছিলেন সর্বোচ্চ গোলদাতা। ৫০ বছর পর গত রাতে স্প্যানিশ সুপার কাপ সেমিফাইনাল ম্যাচে ৩৭ মিনিটের পর থেকে অবশ্য কথাটি ভুল। ম্যাচের ওই সময়ে আঁতোয়ান গ্রিজমানের করা গোলটি ছিল আতলেতিকোর হয়ে তাঁর ১৭৪তম গোল। হ্যাঁ, গ্রিজমানই এখন আতলেতিকোর ১২০ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলদাতা।

গত ২০ ডিসেম্বর লা লিগায় হেতাফের বিপক্ষে পেনাল্টি থেকে গোল করে আরাগোনেসকে ছুঁয়ে ফেলেছিলেন গ্রিজমান। গত রাতে একক প্রচেষ্টায় তাঁর রেকর্ড গড়া গোলটিও মনে রাখার মতো। ম্যাচ শেষে ফরাসি তারকা বলেছেন, ‘এটা আমার জন্য অবিশ্বাস্য ব্যাপার। গর্ব হচ্ছে, বিরতির সময় অনেক আবেগ ছুঁয়ে গেছে। তবে আমি আরও উন্নতির চেষ্টা করব।’

ইএসপিএন জানিয়েছে, আতলেতিকো মাদ্রিদের হয়ে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৩৬৮ ম্যাচে ১৭৪ গোল করলেন গ্রিজমান। আরাগোনেস ১৭৪ গোল করতে ফরাসি তারকার চেয়ে আরও দুটি ম্যাচ বেশি খেলেছিলেন।

আরও পড়ুন

আতলেতিকোয় অবশ্য গ্রিজমানের দুই অধ্যায়—২০১৪ থেকে ২০১৯ এবং ২০২১ থেকে বর্তমান সময়; মাঝে ছিলেন বার্সেলোনায়। আতলেতিকোয় আরাগোনেসের মতো কিংবদন্তি হতে পারবেন কি না, এ প্রশ্নের উত্তর গত ডিসেম্বরেই ইএসপিএনকে দিয়ে রেখেছেন গ্রিজমান, ‘সময়ই বলে দেবে, আমি কিংবদন্তি হতে পারব কি না। লুইস আরাগোনেস যেভাবে বছরের পর বছর সবার মনে থেকে গেছেন, তেমনটা পারব কি না, জানি না। আশা করি পারব। তিনি ক্লাবের ইতিহাসে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এক ব্যক্তিত্ব। আশা করি, তাঁর মতো হতে পারব।’

আতলেতিকো মাদ্রিদ কিংবদন্তি লুইস আরাগোনেস
এএফপি

আতলেতিকো কোচ ডিয়েগো সিমিওনে কিন্তু গ্রিজমানকে আরাগোনেসের মতোই মনে করেন। নইলে হেতাফের বিপক্ষে সেই ম্যাচে গ্রিজমানের পেনাল্টি নেওয়া নিয়ে আর্জেন্টাইন কোচ এই কথা বলতেন না, ‘পেনাল্টিটি নেওয়ার সময় আরাগোনেসও তার সঙ্গে ছিলেন। আতলেতিকোর ইতিহাসে অন্যতম সেরাকে তিনি সঙ্গ দিয়েছেন।’ গ্রিজমান অবশ্য এ মৌসুমে ক্যারিয়ারের সেরা ফর্মে। লা লিগায় ১৯ ম্যাচে করেছেন ১১ গোল। চ্যাম্পিয়নস লিগে ৬ ম্যাচে করেছেন ৫ গোল। এই ফর্ম গ্রিজমান কত দূর টেনে নিতে পারেন, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

আরও পড়ুন