বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচ নিয়ে যুদ্ধ বাধিয়েছিল যে দুই দেশ
এল সালভাদরের কৃষকদের হন্ডুরাসে অভিবাসন নিয়ে আগেই থেকে সম্পর্কটা তিক্ত ছিল মধ্য আমেরিকার দুই প্রতিবেশী এল সালভাদর ও হন্ডুরাসের। সেই তিক্ততা ১৯৬৯ সালে বিশ্বকাপ ফুটবলের বাছাইপর্বের ম্যাচ ঘিরে রূপ নেয় আসল যুদ্ধে। ১৯৬৯ সালের জুনের শুরুতে বিশ্বকাপ ফুটবল বাছাইপর্বের প্রথম লেগের ম্যাচ খেলতে এল সালভাদর জাতীয় দল পাড়ি দেয় প্রতিবেশী হন্ডুরাসে। ম্যাচের আগের রাতে তেগুসিগালপায় এল সালভাদরের টিম হোটেলের জানালায় ছোড়া হয় ইট-পাথর। হোটেলের বাইরে হইচই করে খেলোয়াড়দের ঘুমাতেও দেয়নি হন্ডুরাসের সমর্থকেরা।
পরের দিন ম্যাচের শেষ মুহূর্তে হন্ডুরাসের রবার্তো ‘দ্য পিস্তল’ কারদোনা গোল করে জেতান দলকে। সেই হার সহ্য করতে পারেনি এল সালভাদরের ১৮ বছর বয়সী এক কিশোরী আমেলিয়া বোলানিওস। বাবার রিভলবার দিয়ে আত্মহত্যা করে সে।
পরদিন এল সালভাদরের শীর্ষ দৈনিক এল নাসিওনাল প্রথম পাতায় ছাপে খবরটি। ‘নিজ দেশের অপমান সহ্য করতে পারেনি মেয়েটি’—এমনই ছিল শিরোনাম। শবযাত্রায় আমেলিয়ার কফিন কাঁধে নিয়েছিলেন জাতীয় দলের খেলোয়াড়েরা। দেশটির প্রেসিডেন্ট ও তাঁর সঙ্গীরা আমেলিয়ার ছবি নিয়ে টেলিভিশন ক্যামেরার সামনে কাঁদলেন। এমন যখন পরিস্থিতি, দ্বিতীয় লেগের ম্যাচ খেলতে হন্ডুরাস যায় এল সালভাদরে। ম্যাচের দিন এল সালভাদরের একটি পত্রিকার প্রথম পাতায় আমেলিয়ার ছবি দিয়ে শিরোনাম দেয় ‘দেশের অপমান সইতে পারেনি সে।’
সান সালভাদরে ম্যাচের আগের রাতে হন্ডুরাস দলের হোটেলেও ছোড়া হয় ইটপাটকেল। ম্যাচের দিন হন্ডুরাস দলকে স্টেডিয়ামে নেওয়া হলো এল সালভাদর সেনাবাহিনীর ট্যাংকে করে। রাস্তায় হাজারো মানুষ হাতে আমেলিয়ার ছবি নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। স্টেডিয়ামের ভেতরে পোড়ানো হয় হন্ডুরাসের পতাকা আর হন্ডুরাসের পতাকার বদলে ওঠানো হয় ছেঁড়া কাপড়।। এমন পরিবেশে সালভাদর ম্যাচটি জেতে ৩-০ গোলে।
আর তারপরই শুরু হলো মৃত্যু। এল সালভাদর ছাড়ার সময় দুই হন্ডুরাস সমর্থককে কুপিয়ে হত্যা করা হলো। শত শত মানুষকে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে করা হয় আহত। হন্ডুরাস অভিযোগ জানালে মেক্সিকোতে নির্ধারণ করা হলো তৃতীয় ম্যাচ। সেই ম্যাচে ৩-২ গোলে জয় পেয়ে বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত করে এল সালভাদর।
সীমান্তের উত্তেজনা তত দিনে জ্বলে উঠেছে দাবানল। জুলাইয়ের শুরুতে শুরু হয় আসল যুদ্ধ, মাত্র ১০০ ঘণ্টার কিন্তু ভয়াবহ। ৬ হাজার মানুষ নিহত, ১২ হাজার আহত, ৫০ হাজার গৃহহীন হয়। কিংবদন্তি পোলিশ সাংবাদিক রিচার্ড কাপুশিনস্কি যুদ্ধটা কভার করে নাম দিলেন ‘ফুটবল যুদ্ধ’।