গুন্দোয়ানের জোড়া গোলে সিটির ‘ডাবল’

এফএ কাপের শিরোপা জয়ের পর ট্রফি নিয়ে ম্যানচেস্টার সিটির খেলোয়াড়দের উচ্ছ্বাসছবি: রয়টার্স

দুটি গোল—একটি ১, আরেকটি ৫১ মিনিটে। দুটি ভলি, প্রথমটি বক্সের ডান পাশ থেকে ডান পায়ের। যে ভলিটি থামানোর জন্য কোনো সময়ই পেলেন না ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের গোলকিপার দাভিদ দে হেয়া। ৫১ মিনিটে দ্বিতীয় গোলটিকে দেখে মনে হলো প্রথম গোলটিই যেন আয়নায় দেখাচ্ছে—বক্সের বাঁ প্রান্ত থেকে বাঁ পায়ের ভলি। এবারও দর্শকের মতো তাকিয়ে বলটিকে ইউনাইটেডের জালে ঢুকে যেতে দেখেছেন দে হেয়া।

ইলকায় গুন্দোয়ানের এ দুটি গোলেই ইউনাইটেডকে ২-১ ব্যবধানে হারিয়ে ওয়েম্বলিতে আজ এফএ কাপের শিরোপা জিতেছে ম্যানচেস্টার সিটি। স্বপ্নের ট্রেবল জয়ের পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল পেপ গার্দিওলার দল। আরাধ্য তিন ট্রফির দুটি জেতা হয়ে গেছে সিটির। ১০ জুন ইন্টার মিলানের বিপক্ষে জিতলেই ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ক্লাব হিসেবে ট্রেবল জয়ের কীর্তি গড়বে ম্যান সিটি।

ইংল্যান্ডের প্রথম ক্লাব হিসেবে ট্রেবল জয়ের কীর্তিটা ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডেরই ছিল। যাঁর কোচিংয়ে ১৯৯৮-৯৯ মৌসুমে ইউনাইটেড এই কীর্তি গড়েছিল, সেই অ্যালেক্স ফার্গুসন আজ গ্যালারিতে ছিলেন। ফার্গুসনের সামনে তাঁরই সাবেক দলের বিপক্ষে ম্যাচের প্রথম সেকেন্ড থেকেই যেন উড়তে শুরু করে ম্যান সিটি। কোনোভাবেই যেন বল ইউনাইটেডের খেলোয়াড়দের পায়ে দিতে চাচ্ছিলেন না কেভিন ডি ব্রুইনা-ইলকায় গুন্দোয়ানরা!

এফএ কাপের ট্রফি হাতে ফাইনালে জয়ের নায়ক ইলকায় গুন্দোয়ান
ছবি: রয়টার্স

ট্রেবল জয়ের নেশায় মত্ত ম্যান সিটি ম্যাচের ১৩ সেকেন্ডেই এগিয়ে যায়। এটা রেকর্ড। এফএ কাপের ফাইনালে এটাই দ্রুততম গোল। এর আগে রেকর্ডটি ছিল লুইস সাহার। ২০০৯ সালে এভারটনের হয়ে চেলসির বিপক্ষে ২৫ সেকেন্ডে গোল করেছিলেন তিনি।

গুন্দোয়ানের রেকর্ড গড়া গোলটি সিটি পেয়েছে মাত্র চারটি স্পর্শে। নিয়মিত গোলকিপার এদেরসনের বদলে আজ সিটির গোলবার আগলাতে নামা স্টেফান ওরতেগা লম্বা করে বল বাড়ান মাঝমাঠে। সেখান থেকে একজনের পাস চলে যায় ডি ব্রুইনার কাছে। তাঁর থেকে বল চলে যায় গুন্দোয়ানের কাছে। দুর্দান্ত ভলিতে বল জালে পাঠান গুন্দোয়ান।

ম্যান সিটির খেলোয়াড়দের গোল উদ্‌যাপনের দৃশ্য দেখানোর পর ক্যামেরা ঘুরে যায় গ্যালারিতে ফার্গুসনের দিকে। অবিশ্বাসের ভঙ্গিতে গালে হাত দিয়ে ছিলেন তিনি। গোলটি দিয়ে ম্যান সিটি যেন আরও ভয়ংকর হয়ে ওঠে। মিনিট ১৫ উড়তে থাকে তারা। এরপর মাঝমাঠটা গুছিয়ে ফেলে সিটির গতি কিছুটা রোধ করে ইউনাইটেড। ম্যান সিটির আক্রমণের পাল্টাও দিতে থাকে তারা।

এরই ধারাবাহিকতায় পেনাল্টি পেয়ে যায় তারা ৩১ মিনিটে। ৩৩ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করে ইউনাইটেডকে সমতায় ফেরান পর্তুগিজ প্লেমেকার ব্রুনো ফার্নান্দেজ। ক্যামেরা আবার ঘুরে যায় ফার্গুসনের দিকে। তাঁর মুখে তখন মৃদু হাসি। হয়তো ভাবছিলেন, তাঁর সময়ে এমন অনেকবারই তো ঘুরে দাঁড়িয়ে জিতেছে ইউনাইটেড! এবারও হয়তো টেন হাগের ইউনাইটেড তেমন কিছু করবে! ফার্নান্দেজের গোলেও হয়ে যায় আরেকটি রেকর্ড। এই প্রথম এফএ কাপের ফাইনালের দুই দলের অধিনায়কই গোল পেলেন।

কিন্তু সেটা আর হতে দিলেন কই গুন্দোয়ান-ডি ব্রুইনারা। ‘গোলমেশিন’ আর্লিং হলান্ডকে ইউনাইটেড বোতলবন্দী করে রাখলেও বিরতির পর নেমেও একের পর এক আক্রমণ করে যেতে থাকেন ডি ব্রুইনা-গ্রিলিশ-গুন্দোয়ানরা। এর ফল পেতে খুব বেশি দেরি হয়নি। ৫১ মিনিটে বাঁ পায়ের ভলিতে দলকে এগিয়ে দেন গুন্দোয়ান। এবারও তাঁর গোলের জোগানদাতা ডি ব্রুইনা।

দ্বিতীয়বার এগিয়ে যাওয়ার পর একটু যেন রক্ষণে মন দেয় ম্যান সিটি। বল দখলে রেখে নিজেদের অর্ধেই বেশি খেলার চেষ্টা করে। তবে মাঝেমধ্যেই পাল্টা আক্রমণে গেছে তারা। এমন একটি আক্রমণ থেকে ইউনাইটেডের জালে আরও একবার বল পাঠিয়েছিল তারা। কিন্তু গুন্দোয়ানের গোলটি অফসাইডের কারণে বাতিল করেন রেফারি। শেষ পর্যন্ত তাই ২-১ গোলের জয়ে নিয়েই মাঠ ছাড়ে ম্যান সিটি।

ম্যাচ শেষে আরেকবার ক্যামেরায় দেখা যায় ফার্গুসনকে। এবার হতাশ মুখ নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন তিনি!