কেউ দাগেন কামান, কারও শটে বল ফেটে যায়; ফুটবলে সবচেয়ে জোরালো শট কার
ফুটবলে জোরালো শট রোমাঞ্চকর এক ব্যাপার। আলাদা উত্তেজনা তৈরি করে। এ কারণে সংবাদমাধ্যম থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ আলোচনা প্রায়ই চোখে পড়ে—ফুটবলে সবচেয়ে জোরালো শটটি কার? হরেক রকম তালিকা আছে, আছে বিতর্কও। জার্মান লেখক ও সাংবাদিক উলরিখ হেসে এবং ফুটবল সাময়িকী ফোর ফোর টুর সাবেক সম্পাদক পল সিম্পসনের লেখা ‘হু ইনভেন্টেড দ্য বাইসাইকেল কিক: সকার’স গ্রেটেস্ট লেজেন্ডস অ্যান্ড লোর’ বইয়ে আছে এ প্রশ্নের উত্তর।
উত্তর দেওয়ার আগে একটি বিষয় বোঝা জরুরি। একটি জোরালো শট ঠিক কতটা জোরালো কিংবা শক্তিশালী?
এ জন্য আইস হকিতে তাকানো যায়, যেটা বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগতির দলীয় খেলা। কারণ, আমরা একটি শটকে ‘জোরালো’ বলতে আসলে বোঝাই, সেটা বাতাসের মধ্যে খুব ‘দ্রুত’ যায়।
আইস হকিতে সবচেয়ে জোরালো শটটি রুশ ডিফেন্ডার অ্যালেক্স রিজানেৎসেভের। ২০১২ সালে এক স্কিলস প্রতিযোগিতায় রিজানেৎসেভ শটের গতি ছিল ঘণ্টায় ১১৪.১৫ মাইল (১৮৩.৭ কিমি/ঘণ্টা)। আইস হকির ডিস্কগুলো বেশ ছোট, খুব শক্ত ও নিরেট। খেলোয়াড় এটিকে কাঠের লাঠির মতো স্টিক দিয়ে আঘাত করেন। স্টিকটির ভূমিকা এখানে অনেকটা ক্যাটাপুল্টের মতো। একেকটি আঘাতে যেন একেকটি গুলি, ডিস্ক তিরবেগে ছুটে চলে বাতাস ভেদ করে।
কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় কী জানেন, এই ছোট্ট, শক্ত, নিরেট ডিস্কের তুলনায় তুলনামূলক হালকা একটা ফুটবলের গতি বেশি! শুধু একটাই শর্ত, সেটা হতে হবে মানুষের পায়ের ভালো একটা শট। আইস হকির ডিস্ককে ফুটবলের গতির ধারেকাছে আসতে ঘণ্টায় অন্তত ১২৫ মাইল (২০২ কিমি/ঘণ্টা) গতিতে ছুটতে হবে।
২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে গার্ডিয়ান একটি তালিকা প্রকাশ করে। সবচেয়ে জোরালো শট নেওয়া ফুটবলারদের সেই তালিকার শীর্ষে শেফিল্ড ওয়েনসডের স্ট্রাইকার ডেভিড হার্স্ট। ১৯৯৬ সালে তাঁর ঘণ্টায় ১১৪ মাইল গতিতে শট নেওয়ার রেকর্ড আছে। অন্য সূত্র থেকে জানা গেল, মিলেনিয়াম (২০০০) দশকের শুরুতে রবার্তো কার্লোসের একটি শটের গতি ছিল ঘণ্টায় ১২৫ মাইল। এক সপ্তাহ পর গার্ডিয়ানেরই এক পাঠক একটি গোলের ভিডিও খুঁজে পান। ২০০৬ সালের নভেম্বরে নাভালের বিপক্ষে স্পোর্তিং লিসবনের ম্যাচে গোলটি করেন ব্রাজিলের রোনি হেবারসন ফুর্তাদো দে আরাউহো। সম্পাদকেরা হিসাব কষে বের করলেন, রোনির শটের গতি ছিল ঘণ্টায় ১৩১.৮২ মাইল (২১০.৯ কিমি/ঘণ্টা)।
তবে আমরা কখনোই জানব না কার শটের গতি সবচেয়ে বেশি।
কারণ, কন্ডিশন এক নয়।
উদাহরণস্বরূপ, খেলার যেসব উপকরণ, সেসব তো পাল্টাচ্ছে। এমন দাবি আছে, লুইজি রিভা এখনকার ফুটবল পেলে তাঁর শটের গতি হতো ঘণ্টায় ১২৪ মাইল। রিভা বুলেট গতির শটের জন্য বিখ্যাত ছিলেন। ১৯৭০ সালের অক্টোবরে তাঁর শটে ক্যালিয়ারির অনুশীলন দেখতে আসা এক ছেলের হাত ভেঙে গিয়েছিল।
শুধু তা–ই নয়, অতীতের অনেক ফুটবলারের শটের গতিই অজানা।
ষাটের দশকে আইনট্রাখট ফ্রাঙ্কফুর্টের বার্নার্ড নিকেল ভয়ংকর গতির শটের জন্য ‘ড. হ্যামার’ নামে পরিচিত ছিলেন। নিকেলের শৈশবের বেশির ভাগ সময় কেটেছে বড় একটা শেডের দরজায় বল মেরে। তাঁর শটের গতি কখনো মাপা হয়নি। পুসকাসেরও তা–ই। তাঁকে খেলতে দেখা যে কেউ বলবেন, আর কেউ কখনো তাঁর মতো এত জোরে শট নেয়নি। স্পেনে এ কারণে তাঁর অন্য নাম ‘ক্যানোচিতো পাম’ (বুমিং ক্যানন)।
শেষ কথা, কখনো কখনো শটের গতিই মাপতে পারবেন না। ওয়াল্টার বাসেজ্জিওর কথাই ধরুন। ২০০৪ সালের নভেম্বরে বেলজিয়ান লিগে লা লুভিয়েরের বিপক্ষে আন্ডারলেখটের হয়ে ভলিতে তাঁর একটা গোল আছে।। বলটা এত জোরে মেরেছিলেন যে ফেটে যায় এবং গোললাইন পার হওয়ার সময় ভেতরকার ব্ল্যাডার বেরিয়ে এসেছিল।
রেফারি গোলের বাঁশি বাজান। অ্যান্ডারলেখট জেতে ২-১ গোলে।