হংকংয়ের বিপক্ষে ড্র করার পর ভারতকে নিয়ে বিদায় বাংলাদেশের

হংকংয়ের বিপক্ষে সমতা ফেরানো গোলের পর গোলদাতা রাকিব (ডানে) ও ফাহামিদুলের উদ্‌যাপনবাফুফে

হংকং ১–১ বাংলাদেশ

গ্যালারির দিকে তাকিয়ে মনে হচ্ছিল যেন লাল সমুদ্র। প্রায় ৫৫ হাজার দর্শকের গায়েই লাল জার্সি। এক কোনায় সাদা জার্সি পরা শ দুয়েক বাংলাদেশি সমর্থক। এই শ দুয়েক সমর্থকের মনেও লুকিয়ে ছিল জয়ের আকাঙ্ক্ষা। পাঁচ দিন আগে ঢাকায় হংকংয়ের কাছে ৪–৩ গোলে হেরে যাওয়ার হতাশা ভুলতে আজ হংকংয়ের কাই তাক স্টেডিয়ামে তাঁরা জয়ই চাইছিলেন। ফিরতি এই ম্যাচে ১০ জনের হংকংয়ের বিপক্ষে জিততে না পারলেও শেষ পর্যন্ত ড্র করতে পেরেছে বাংলাদেশ দল।

ম্যাচটা না জেতায় বাংলাদেশের ২০২৭ এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্বে ওঠার আশা প্রায় শেষই হয়ে যায়। আজ পরে ভারতের মারগাওয়ে গ্রুপের অন্য ম্যাচে সিঙ্গাপুর ভারতকে ২–১ গোলে হারানোতেই বাংলাদেশের বিদায় পুরোপুরি নিশ্চিত হয়ে যায়। চার ম্যাচ শেষে বাংলাদেশের পয়েন্ট ২, হংকংয়ের ৮। চার ম্যাচে ভারতের পয়েন্ট ২, সিঙ্গাপুরের ৮। বিদায় নিশ্চিত হয়েছে ভারতেরও। হংকং কিংবা সিঙ্গাপুরের এক দলই ‘সি’ গ্রুপ থেকে চূড়ান্ত পর্বে খেলবে।

আল্লাহর অশেষ রহমত, গোল করতে পেরেছি। গত ১৫ দিন আমরা অনেক কষ্ট করেছি, এটা সেই কষ্টের ফল। আমরা অনেক ভালো ফুটবল খেলেছি।
রাকিব হোসেন, ফরোয়ার্ড, বাংলাদেশ

টিকে থাকতে হলে হংকংয়ের বিপক্ষে আজ জয়ের বিকল্প ছিল না বাংলাদেশের। তবে ড্র–টাও কম নয়। গোল করে বাংলাদেশকে সমতায় এনে এক পয়েন্ট উপহার দেওয়া গোলদাতা রাকিব ম্যাচ শেষে খুশি, ‘আল্লাহর অশেষ রহমত, গোল করতে পেরেছি। গত ১৫ দিন আমরা অনেক কষ্ট করেছি, এটা সেই কষ্টের ফল। আমরা অনেক ভালো ফুটবল খেলেছি। প্রত্যেকটা খেলোয়াড় কঠোর পরিশ্রম করেছে, যে কারণে ম্যাচটা ড্র করতে পেরেছি। আমরা জিততেও পারতাম, কিন্তু আমরা অনেক সুযোগ নষ্ট করেছি।’

এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্বে খেলা হলো না বাংলাদেশের
বাফুফে

কোচ হাভিয়ের কাবরেরার কথায়ও সন্তুষ্টি, ‘আমরা সবাই একই লক্ষ্যে একতাবদ্ধ। আমরা জানি আমরা খুব ভালো খেলছি, পারফর্ম করছি, কিন্তু তিন পয়েন্টেরই অভাব থেকে যাচ্ছে। একবার সেই তিন পয়েন্ট পেলে নিশ্চিতভাবেই পরবর্তী ধাপে পৌঁছাতে পারব। আশা করি, ভারতের বিপক্ষে পরের ম্যাচেই সেটা হবে।’ ঢাকায় সেই ম্যাচ হবে ১৮ নভেম্বর।

আরও পড়ুন

ঢাকায় ৯ অক্টোবরের হংকং ম্যাচের একাদশে শমিত, জায়ানকে না রাখায় বিস্তর সমালোচনা হয়েছে কোচ কাবরেরার। ফিরতি ম্যাচে তিনি একাদশে রেখেছেন তরুণ জায়ান আহমেদ ও শমিত সোমকে, ফিরিয়েছেন ডিফেন্ডার তপু বর্মণকেও। এই তিন বদল নিয়ে নেমেও অবশ্য প্রথমার্ধে তেমন কোনো আক্রমণ করতে পারেনি বাংলাদেশ, আক্রমণ আসেনি হংকংয়ের দিক থেকেও। বাংলাদেশের আক্রমণ বলতে ২২ মিনিটে পাওয়া ফ্রি–কিক। বল নিয়ে হংকংয়ের বক্সে ঢোকার চেষ্টা করছিলেন শমিত সোম। তাঁকে আটকাতে না পেরে জার্সি ধরে টেনে ফেলে দেন হংকংয়ের এক খেলোয়াড়। হামজা ফ্রি–কিক নিলেও তা মানবদেয়ালে লেগে ফিরে আসে।

বাংলাদেশের গোলের পরের দৃশ্য
বাফুফে

৩২ মিনিটে বদলে যায় ম্যাচের ছবি। হংকংয়ের আক্রমণ ঠেকাতে গিয়ে ডিফেন্ডার তারিক কাজী ডি-বক্সের ভেতরে ফাউল করে বসেন। রেফারি সঙ্গে সঙ্গে পেনাল্টি দেন এবং তারিককে হলুদ কার্ড দেখান। স্পট কিকে বাংলাদেশ গোলকিপার মিতুল মারমাকে কোনো সুযোগই দেননি হংকংয়ের অধিনায়ক ও ফরোয়ার্ড মাত ওরে। এই একটি গোল ছাড়া আর তেমন কোনো ভালো সুযোগ পায়নি হংকং।

আরও পড়ুন

তবে বাংলাদেশ পেয়েছে, সেটা অবশ্য দশজনের হংকংয়ের বিপক্ষে। ৬৩ মিনিটে কোচ সোহেল রানা ও জায়ানকে তুলে মাঠে পাঠান ফাহামিদুল ও জামালকে। তাঁরা আসায় বাংলাদেশের আক্রমণে গতি বাড়ে, গোলেরও সুযোগ তৈরি হয়। ৭৩ মিনিটে হংকং হয়ে যায় ১০ জনের দল। শমিতকে ফাউল করে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন ডিফেন্ডার অলিভার বেঞ্জামিন। বাংলাদেশের জন্য গোলের সুবর্ণ সুযোগটি আসে ৮০ মিনিটে। সাদের ক্রস থেকে পা ছোঁয়ালেই গোল, এমন পরিস্থিতিতেও ফাহামিদুল বলে পায়ে সংযোগ ঘটাতে পারেননি।

হংকংয়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়েই লড়েছে বাংলাদেশ
বাফুফে

৮৪ মিনিটে ঘটে অপেক্ষার অবসান। বদলি নামা ফাহিমের নিখুঁত ক্রস ফাহামিদুলের কাছে পৌঁছালে তিনি হেডে বল নামিয়ে দেন রাকিব হোসেনের সামনে। রাকিব গায়ে গায়ে লেগে থাকা হংকং ডিফেন্ডারের ফাঁক গলে দারুণ প্লেসিংয়ে বল জড়ান জালে, ম্যাচে ফিরে আসে সমতা (১-১)। এই গোলের আগে মিনিট দশেক টানা আক্রমণে ছিল বাংলাদেশ, সেই আক্রমণেরও ফসল রাকিবের গোল।

অতিরিক্ত ছয় মিনিটও বাংলাদেশ আক্রমণে ছিল। লম্বা থ্রো, ক্রস, গোল করার চেষ্টা—সবই হয়েছে। কিন্তু জয়সূচক গোলটা আসেনি, আসেনি কাঙ্ক্ষিত তিন পয়েন্টও। তবে দলের মনোবল ধরে রাখতে স্বস্তির এই ড্র–টাও বাংলাদেশের জন্য যথেষ্ট দামি।

আরও পড়ুন