টিকিট বিক্রির ‘ডিজিটাল স্বাদ’ নিতে গিয়ে লেজেগোবরে বাফুফে
কোন ঘড়ি ব্যবহার করে বাফুফে মনোনীত বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর ম্যাচের টিকিট বিক্রির প্রতিষ্ঠান টিকিফাই? তাদের এক মিনিট কখনো ২০ মিনিট, আবার কখনো ৩৮ মিনিটের সমান!
রাত ১০টার পর সীমিত পরিসরে টিকিট বিক্রি হবে—গতকাল সোমবার ফেডারেশনের এমন ঘোষণায় আশায় বুক বাঁধেন ফুটবলপ্রেমীরা। কিন্তু তাঁদের অনেকেরই আশার গুঁড়ে শেষ পর্যন্ত বালিই পড়েছে। গত শনিবার যে টিকিট-নাটক শুরু করেছিল বাফুফে, সেটা আজ দুপুর ১২টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত দেখতে হয়েছে বেশির ভাগ দর্শককে।
গতকাল রাত ১০টার পর টিকিফাই সাইটে ঢুকে টিকিট কেনার চেষ্টা করা দর্শকদের সামনে লেখা আসে, ‘আপনি এখন লাইনে আছেন। আপনার ধৈর্যের জন্য ধন্যবাদ। আপনার আনুমানিক অপেক্ষার সময় ৩ ঘণ্টা ৮ মিনিট। আমরা বর্তমানে উচ্চ পরিমাণে ট্রাফিকের সম্মুখীন হচ্ছি এবং একই সময়ে ওয়েবসাইটে ব্যবহারকারীর সংখ্যা সীমিত রাখতে একটি ভার্চ্যুয়াল কিউ ব্যবহার করছি। এটি আপনার সর্বোত্তম অনলাইন অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করবে।’
কারও কারও ক্ষেত্রে এই অপেক্ষার সময় ৪ থেকে ৫ ঘণ্টাও দেখায়। আবার যাঁরা ১ মিনিট দেখে খুশি হয়েছিলেন, তাঁদের ওই ১ মিনিট আর শেষ হয়নি। কখনো আবার এক মিনিট অপেক্ষার কথা বলে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট পর নতুন সময় দেখাচ্ছে। আবার রাত ১২টার পর থেকে লেখা আসে, ‘আমরা আপনার অপেক্ষার সময় অনুমান করতে পারিনি।’
অনেকে এটাকে ডিজিটাল লাইন ভাবলেও আদতে তেমনটাও নয়। আর ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও টিকিট না পাওয়ার তিক্ততাই বেশি।
গত রাতে বাফুফে তাদের ফেসবুক পেজে টিকিট বিক্রি পুনরায় শুরুর যে খবর প্রকাশ করেছিল, সেটির কমেন্ট বক্সে চোখ বুলালে এমন অনেক ভোগান্তির অভিজ্ঞতাই দেখা যাবে।
রুহুল আমিন নামের একজন লিখেছেন, ‘টিকিট না পাইলে খবর আছে, ১ ঘণ্টা ধরে বসে আছি।’ জাহিদ হাসান লিখেছেন, ‘আপনারা রসিকতা শুরু করেছেন। ২ ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করলাম কিন্তু টিকিট কাটতে পারলাম না।’
কেউ কেউ টিকিটের সমপরিমাণ টাকা পরিশোধ করার পরও টিকিট পাননি। শাকিল আহমেদ নামের একজন লিখেছেন, ‘পেমেন্ট করার পর ডাউনলোড করার আগে সার্ভার চলে গেছে। মেইলও আসেনি।’
আবার দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর টিকিট পেয়ে খুশিও অনেকে। এই যেমন রিয়াদ হোসেন লিখেছেন, ‘দুই দিনে ১০ ঘণ্টা নষ্ট করেছি, তা–ও টিকিট পেয়ে ভালো লাগছে।’
টিকিট বিক্রির এই পদ্ধতি নিয়ে বাফুফের কম্পিটিশন কমিটির চেয়ারম্যান গোলাম গাউস আজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাইবার হামলা এড়াতে ভার্চ্যুয়াল পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে। মানুষের কষ্ট হলেও এভাবে টিকিট পাচ্ছেন তাঁরা। বাকি ক্যাটাগরির টিকিটও শিগগিরই অনলাইনে ছাড়া হবে।’
এর আগে শনিবার রাত ১১টা ২০ মিনিটে বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর ম্যাচের টিকিট বিক্রির ওয়েবসাইট টিকিফাই সাইবার আক্রমণের শিকার হয়েছে বলে জানায় বাফুফে। এ জন্য ফেডারেশনের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করা হয়।
শনিবার রাত আটটা থেকে অনলাইনে টিকিট বিক্রি শুরু করে টিকিফাই। যদিও ওয়েবসাইটে ঢুকে অনেকেই টিকিট কাটতে পারেননি। কারও কারও পর্দায় ভেসে ওঠে—‘503 Service Temporarily Unavailable’। অথচ বাফুফের কম্পিটিশন কমিটি থেকে জানানো হয় প্রথম দফায় সাড়ে তিন হাজার টিকিট বিক্রি হয়েছে।
বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বের ম্যাচ ঘিরে দর্শকদের আগ্রহ তুঙ্গে। চার বছর পর নতুনভাবে সেজে ওঠা জাতীয় স্টেডিয়ামে বহুল আলোচিত আন্তর্জাতিক ম্যাচ, সঙ্গে হামজা চৌধুরী ও শমিত সোমের সঙ্গে ফাহামিদুল ইসলামের মতো ফুটবলারদের খেলা দেখার সুযোগ।
স্বাভাবিকভাবেই ১০ জুন জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠেয় এই ম্যাচের টিকিটের চাহিদা আকাশচুম্বী। কিন্তু মানুষের সেই আগ্রহে পানি ঢেলে দিয়েছে বাফুফের এমন হযবরল টিকিটব্যবস্থা।