ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সাবেক মিডফিল্ডার এখন ধর্মযাজক
ফিলিপ মুলরিন ফুটবল ছেড়েছেন ২০০৮ সালে। এরপর তাঁর ক্যারিয়ারের গতিপথ আর দশজন ফুটবলারের মতো এগোয়নি। একটু আলাদা পথে হেঁটেছেন মুলরিন। ৪৫ বছর বয়সী সাবেক এই সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার এখন ধর্মযাজক। কেন এই পথে এলেন, তা নিয়ে নিজের সাবেক ক্লাব নরউইচ সিটির ওয়েবসাইটে কথা বলেছেন মুলরিন।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে ১৯৯৬ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত খেলেছেন মুলরিন। স্ট্রাইকার, মিডফিল্ডার কিংবা রাইট উইঙ্গার হিসেবে খেলতে পারলেও ইউনাইটেডে তখন ডেভিড বেকহাম, নিকি বাট, পল স্কোলস, অ্যান্ডি কোল ও ওলে গুনার সুলশারদের সময়, মুলরিন তাই পাঁচ মৌসুম ইউনাইটেডে থেকেও সেভাবে খেলার সুযোগ পাননি। ১৯৯৭–৯৮ মৌসুমে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের শেষ দিনে বার্নসলের বিপক্ষে মাঠে নেমেছিলেন মুলরিন।
প্রিমিয়ার লিগে ইউনাইটেডের হয়ে সেটাই তাঁর একমাত্র ম্যাচ। ইউনাইটেড ছেড়ে নরউইচ সিটি ও কার্ডিফ সিটি ঘুরে বর্তমানে ইংল্যান্ডের চতুর্থ স্তরের ক্লাব লেটন ওরিয়েন্টে খেলেছেন। ২০০৮ সালে মুলরিন অবসর নেওয়ার আগে তাঁর শেষ ক্লাব ছিল কিংস লিন। ১৯৯৭ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত জন্মভূমি উত্তর আয়ারল্যান্ডের হয়েও ২৭ ম্যাচ খেলেছেন মুলরিন।
৩০ বছর বয়সে পেশাদার ফুটবল ছাড়েন মুলরিন। পরের বছর থেকেই অর্থ, নারী ও ফুটবলের প্রতি ধীরে ধীরে মোহভঙ্গ ঘটতে থাকে তাঁর। নরউইচের ওয়েবসাইটে মুলরিন এ নিয়ে বলেছেন, ‘আমার জীবনে এই পরিবর্তন ঠিক কখন থেকে শুরু হয়েছে, তা বলা কঠিন। নরউইচে শেষ বছর থেকে এসব নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করি।’ ১৯৯৯ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত নরউইচে খেলেছেন মুলরিন।
জীবনযাপনে পরিবর্তন নিয়ে মুলরিনের ভাষ্য, ‘ফুটবলারদের জীবন দুর্দান্ত, আমারও সেই জীবন পাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিজেকে শূন্য ও বিপর্যস্ত মনে হতো। শৈশব থেকেই প্রায় সবকিছু পেয়ে এলেও সন্তুষ্ট ছিলাম না। আর এতেই অল্প বয়সে যে বিশ্বাসটা ছিল, সেটি ফিরে পাওয়ার অভিযাত্রাটা শুরু করি। এক বছরের জন্য বাড়িতে ফিরেছিলাম। সে বছর বাড়ির কোনো কিছুই ভালো হয়নি। আশ্রয়হীনদের আবাসস্থলেও স্বেচ্ছাসেবীর কাজ করেছি। এরপর গির্জায় ফিরে গিয়ে নিয়মিত উপাসনা শুরু করি। ধীরে ধীরে নিজেকে সন্তুষ্ট মনে হয়েছে। ফুটবলে প্রচুর উত্থান–পতন আছে। কিন্তু গির্জা ধারাবাহিকভাবে আমাকে সন্তুষ্ট করে যাচ্ছে। আমি এই জীবনধারাতেই বাঁচতে চাই।’
মুলরিনের নাম এখন রেভারেন্ড ফাদার ফিলিপ মুলরিন। ২০১৭ ডমিনিকান অর্ডার অনুযায়ী তিনি পাদরি হন। এখন তিনি আয়ারল্যান্ডের কর্কে সেন্ট মেরি প্রাইয়রি চার্চে আছেন। এক যুগের বেশি সময় আগে অল্প বয়সে ফুটবল ছেড়ে দেওয়া নিয়ে মুলরিনের কোনো আক্ষেপ নেই, ‘প্রথম কয়েক মাস এমন (পাদরি হয়ে ওঠার) জীবনধারাতেই ছিলাম, তারপর ধীরে ধীরে এই পথটা আবিষ্কার করতে থাকি এবং সিদ্ধান্ত নিই।’
ইউনাইটেডের বয়সভিত্তিক দল থেকে উঠে আসা মুলরিন ফুটবল ক্যারিয়ারের তুঙ্গে থাকতে বছরে ছয় লাখ পাউন্ড আয় করেছেন। নরউইচে ১৭২ ম্যাচ খেলে গোল করেছেন ২০টি। তবে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘ডেইলি স্টার’ জানিয়েছে, অবসর নেওয়ার পর থেকে নয়, নরউইচে থাকতেই ফুটবলের মোহ ছেড়ে বাইবেলের প্রেমে পড়েন মুলরিন। এরপর ধীরে ধীরে জীবন পাল্টে ফেলেন।