ছেলে ক্যারিয়ার এগিয়ে নেওয়ার আশায়, বাবা জেলে থেকেই জুয়ার ব্যবসায়
সম্প্রতি রবসনের সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করেছে সান্তোস। এদিকে তাঁর কারাবন্দী বাবা রবিনিও বাজির কোম্পানি খোলার পরিকল্পনা করছেন।
পেলে, জিতো, কার্লোস আলবার্তো, গিলমারদের মতো কিংবদন্তিদের তৈরি করেছে সান্তোস এফসি। এই ক্লাব থেকে উঠে এসেছেন রবিনিও, নেইমারের মতো তারকারাও। সেই পথ ধরে এগিয়ে চলেছেন রবসন রবিনিও জুনিয়র।
নেইমারেরও কী কপাল দেখুন, সান্তোসে নিজের প্রথম অধ্যায়ে ও ব্রাজিল জাতীয় দলে ৭ বছর রবিনিওর সঙ্গে খেলেছেন। প্রায় এক যুগ পর সান্তোসে ফিরে সতীর্থ হিসেবে পেয়েছেন রবিনিওর ছেলে রবসনকে। কদিন আগে একটি ম্যাচে রবসনের বানিয়ে দেওয়া বল থেকে গোলও করেছেন নেইমার।
কিন্তু বাবা-ছেলে এখন একদম বিপরীতমুখী যাত্রা করছেন। সম্ভাবনাময় ক্যারিয়ারকে বিকশিত করার সুযোগ পেয়ে গেছেন রবসন। ১৭ বছর বয়সী এই স্ট্রাইকারের সঙ্গে সম্প্রতি চুক্তি নবায়ন করেছে সান্তোস। ২০২৭ সালের এপ্রিল পর্যন্ত সাও পাওলোর ক্লাবটিতে থাকবেন।
ওদিকে প্রায় দেড় বছর ধরে কারাবন্দী রবিনিও জেলে বসেই নতুন ব্যবসার ছক কষছেন। জুয়ার কোম্পানি খোলার পরিকল্পনা করছেন ৪১ বছর বয়সী সাবেক এই ফুটবলার।
রবসনের মধ্যে আগামী দিনের তারকা হওয়ার সব ধরনের সম্ভাবনা দেখছে সান্তোস। এ কারণেই বয়স ১৮ পূর্ণ হওয়ার আগেই তাঁকে পেশাদার স্কোয়াডে যুক্ত করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিল।
রবসনের সঙ্গে চুক্তি নবায়নের পর ক্লাবটির সভাপতি মার্সেলো তেইসেইরা বলেছেন, ‘সান্তোসের মধ্যে অনেক আগে থেকেই সম্ভাবনাময় প্রতিভার ডিএনএ আছে। আমাদের বিশ্বাস, তরুণ খেলোয়াড়েরা তাদের (তারকাদের) জায়গা নেবে, বিশেষ করে রবিনিও জুনিয়র।’
সান্তোসের সঙ্গে চুক্তি নিয়ে রবসন আবেগমাখা কণ্ঠে বলেছেন, ‘আমি এমন একটি স্বপ্ন দেখছি, যা বাস্তবে রূপ নিচ্ছে। ছোটবেলা থেকেই আমার স্বপ্ন ছিল একজন ফুটবল খেলোয়াড় হওয়া এবং সান্তোসের হয়ে খেলতে পারা আমাকে সবচেয়ে বেশি আনন্দ দিয়েছে।’
ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি হয়ে ওঠার মতো সব উপাদানই ছিল রবিনিওর মধ্যে। সান্তোসের পর খেলেছেন রিয়াল মাদ্রিদ, ম্যানচেস্টার সিটি, এসি মিলানের মতো ক্লাবে। ব্রাজিলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন ১০০ ম্যাচে। কিন্তু মিলানে থাকতে বড় ধরনের এক অপরাধ করে নিজের সর্বনাশ ডেকে এনেছেন।
২০১৩ সালে এক আলবেনিয়ান নারীকে ইতালির একটি নৈশ ক্লাবে ধর্ষণ করেছিলেন রবিনিও। দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় দেশটির আদালত তাঁকে ৯ বছরের কারাদণ্ড দেন। কিন্তু রায়ের আগেই তিনি ইতালি ছেড়ে যাওয়ায় ব্রাজিল সরকারকে শাস্তি কার্যকরের আহ্বান জানান ইতালির সর্বোচ্চ আদালত।
শাস্তি কার্যকর করতেই গত বছরের মার্চের শেষ দিকে রবিনিওকে গ্রেপ্তার করে ব্রাজিলের ফেডারেল পুলিশ। এর পর থেকে তাঁর জীবন কাটছে সাও পাওলোর ত্রেমেম্বে কারাগারে।
বিখ্যাত ও কুখ্যাত—উভয় ধরনের ব্যক্তিদের কারাগার হিসেবে ত্রেমেম্বের পরিচিতি আছে। সেখানে যেমন লুইস এস্তেভাওয়ের মতো রাজনীতিবিদ, পিমেন্তা নেভেসের মতো সাংবাদিক জেল খাটছেন, আবার ক্রিস্তিয়ান ক্রাভিনিওস ও আলেক্সান্দার নার্দোনির মতো খুনি, ওয়ালতার দেলগাত্তির মতো হ্যাকারও আছেন।
ব্রাজিলের জাতীয় বিচার পরিষদ ব্যবস্থাপনার ওয়েবসাইট হ্যাক করে ৮ বছর ৩ মাসের কারাভোগ করছেন দেলগাত্তি। তিনিই কয়েকজন কারাবন্দীকে জানিয়েছেন, রবিনিওকে সঙ্গে নিয়ে একটি বাজি কোম্পানি চালু করবেন।
স্প্যানিশ ক্রীড়া দৈনিক মার্কার খবরে বলা হয়েছে, রবিনিওর তারকাখ্যাতি আর নিজের প্রযুক্তিগত জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে অনলাইন জুয়ার ব্যবসা গড়ে তুলতে চান দেলগাত্তি। শাস্তি শেষে দুজন জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর যেন ব্যবসাটির পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেন, সে জন্য এখন থেকেই পরিকল্পনা করছেন।
ব্রাজিলের একাধিক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ত্রেমেম্বে কারাগারে রবিনিও ও দেলগাত্তিকে আলাদা কক্ষে রাখা হয়েছে। তবে উঠানে রোদ পোহাতে গেলে দুজন প্রায়ই একসঙ্গে সময় কাটান। কারাগারে ৮ বর্গমিটারের একটি কক্ষে আছেন রবিনিও। তাঁর সঙ্গে ২২ বছর বয়সী এক যুবক আছেন। একজনকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করার অভিযোগে সেই যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
কারাগারে অন্যদের কাছ থেকে বুট ধার নিয়ে ফুটবলও খেলেন রবিনিও। এর পাশাপাশি ৬০০ ঘণ্টার ইলেকট্রনিকস কোর্স করেছেন। এখন তিনি টেলিভিশন ও রেডিও মেরামত করেন। বইপড়ুয়াদের ক্লাবেও ভর্তি হয়েছেন রবিনিও। এ ছাড়া তিনি সবজি বাগানের পরিচর্যা করেন।
কয়েক মাস আগে কাজের বিনিময়ে শিক্ষা ও নাগরিকত্ব কর্মমূচির ১০টি মডিউল সম্পন্ন করেছেন রবিনিও। প্রতি ১২ ঘণ্টা কাজের জন্য তাঁর শাস্তির মেয়াদ এক দিন করে কমানো হচ্ছে।
রবিনিওর সঙ্গে দেখা করতে কারাগারে শুধু নিকটাত্মীয়রাই যেতে পারেন—বাবা, মা, স্ত্রী ও সন্তান। ছেলে রবসন মাসে অন্তত একবার বাবার সঙ্গে দেখা করতে যান। নিজে ভালো ফুটবলার হওয়ার পাশাপাশি বাবা দ্রুত কারামুক্ত হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরুন, আপাতত রবসনের জীবনের সবচেয়ে বড় দুটি চাওয়া হয়তো এটাই।