বিশ্বকাপের ড্র: ইরানের প্রতিনিধি দলে ৩ জনের ভিসা দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র
ওয়াশিংটনে আগামী সপ্তাহে ২০২৬ বিশ্বকাপ ফুটবলের ড্র অনুষ্ঠান বয়কট করবে ইরান। কারণ, তাদের প্রতিনিধিদলের কয়েকজনের ভিসা মঞ্জুর করেনি যুক্তরাষ্ট্র। তেহরান টাইমস জানিয়েছে, প্রতিনিধি দলের মধ্যে তিনজনের ভিসা দেওয়া হয়নি।
ইরান ফুটবল ফেডারেশনের (এফএফআইআরআই) এক মুখপাত্র জানান, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা না দেওয়ার সিদ্ধান্তের সঙ্গে ‘খেলাধুলার সম্পর্ক নেই।’ যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপের ফলে ইরানের বিশ্বকাপ থেকে পুরোপুরি সরে যাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ল।
তেহরান টাইমস জানিয়েছে, ইরানের প্রতিনিধিদলের মধ্যে চারজনের ভিসা দিতে রাজি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তাঁরা হলেন ইরান জাতীয় দলের প্রধান কোচ আমির ঘালেনোয়ি, নির্বাহী পরিচালক মেহদি খারাতি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের পরিচালক ওমিদ জামালি এবং মুখপাত্র আমি মেহদি আলাভি। ফেডারেশন সভাপতি মেহদি তাজ, সহ–সভাপতি মেহদি নবী ও মেহদি মালেক-আবাদের ভিসা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার ফেডারেশন সভাপতি তাজ ভিসা না দেওয়ার সিদ্ধান্তকে রাজনৈতিক বলে নিন্দা করেন, ‘আমরা ফিফাপ্রধান (জিয়ান্নি) ইনফান্তিনোকে বলেছি যে এটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক অবস্থান এবং ফিফার অবশ্যই তাদের এমন আচরণ থেকে বিরত থাকতে বলা উচিত।’
ইরানের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেওয়ার কথা ছিল তাজের। এশিয়ান ফুটবলে তিনি অন্যতম সিনিয়র অফিশিয়াল। বিশ্বকাপের তত্ত্বাবধানে থাকা ফিফার দুটি কমিটির সদস্য। এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনের সহ–সভাপতির দায়িত্বেও আছেন তাজ। ফিফার প্যানেলের সদস্যও তিনি।
গত জুনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশনায় ১৯টি দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হয়। ইরান এই দেশগুলোর তালিকায় আছে। তবে অ্যাথলেট, কোচ বা ‘যারা প্রয়োজনীয় সহায়ক ভূমিকা’য় আছেন এবং বিশ্বকাপ কিংবা ‘অন্য কোনো বড় খেলাধুলার ইভেন্টে’র জন্য যাবেন—তাঁদের জন্য নিষেধাজ্ঞার ব্যতিক্রম রাখা হয়েছিল। কিন্তু ইরানের এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমটি বিবেচনা করা হয়নি। তেহরান টাইমস জানিয়েছে, ইরান ফুটবল ফেডারেশন বিষয়টি খুব গুরুত্ব দিয়ে ফিফা সভাপতি ইনফান্তিনোর কাছে তুলেছে।
আগামী ৫ ডিসেম্বর ওয়াশিংটনের কেনেডি সেন্টারে ২০২৬ বিশ্বকাপ ফুটবলের ড্র অনুষ্ঠিত হবে। যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো ও কানাডায় আগামী ১১ জুন থেকে শুরু হবে বিশ্বকাপ।
ইনফান্তিনো এর আগে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ‘বিশ্বকাপে সবাইকে স্বাগত জানানো হবে।’ গত ৯ অক্টোবর ইউরোপিয়ান ফুটবল ক্লাব সংস্থার বৈঠকে তিনি আশ্বস্ত করেন, ক্রীড়াবিদ ও কর্মকর্তারা ভিসা পেয়ে চিন্তিত হবেন না। ইনফান্তিনো বলেছিলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সঙ্গে আমাদের চমৎকার আলোচনা হয়েছে। হোয়াইট হাউসে একটি টাস্কফোর্স আছে, যার নেতৃত্বে আছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এসব বিষয়ে সেখানে আলোচনা করা হয়। অংশগ্রহণকারী দল এবং প্রতিনিধিদলের ভিসার বিষয়ে কোনো সমস্যা হবে না। আমরা ভক্তদের জন্যও কিছু করার ব্যবস্থা করছি। শিগগিরই ভালো খবর পাওয়া যাবে।’
ফিফা এরপর ‘ফিফা পাস’ তৈরি করে—এটি একটি ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে বিশ্বকাপের টিকিটধারীরা ভিসার আবেদনে অগ্রাধিকার পাবেন। আবেদনগুলো সফল হওয়ার নিশ্চয়তা নেই। যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ডিজিটাল সংবাদমাধ্যম ‘পলিটিকো’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, হাইতি যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে সীমাবদ্ধতা আরোপ করা দেশগুলোর তালিকায় থাকলেও সেখানকার ভক্তরা ভিসার আবেদন করতে পারবেন। কিন্তু ‘ভিসা প্রদানে কিংবা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে তারা অযোগ্য হতে পারেন।’ হাইতি এবার দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে।
ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক বিরোধ চলছে চার দশকের বেশি সময় ধরে। ইরানের ইউরেনিয়ামসমৃদ্ধ করার বিষয়ে দেশটির সঙ্গে মতবিরোধ রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের।
তবে এর মধ্যেও দুই দেশ উচ্চপর্যায়ের পারমাণবিক আলোচনা চালাচ্ছিল, যা এপ্রিল মাসে শুরু হয়। এই আলোচনায় মূল বিরোধ ছিল ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের অধিকার নিয়ে, যা তেহরান ‘অবিচ্ছেদ্য অধিকার’ হিসেবে দাবি করে।
তবে জুনের মাঝামাঝি সময়ে ইসরায়েল ইরানের ওপর নজিরবিহীন হামলা চালালে এসব আলোচনা থেমে যায়। সে সময় ১২ দিনের এক সংঘাত শুরু হয়, যাতে যুক্তরাষ্ট্রও স্বল্প সময়ের জন্য যুক্ত হয় এবং ইরানের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়।