সব নিয়ে, সব দিয়ে ফুটবলকে বিদায় চিরসবুজ বুফনের

ফুটবল থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন জিয়ানলুইজি বুফনপ্রথম আলো গ্রাফিকস

শেষের গল্পটা ‘তুমি–আমি’র।

‘তুমি আমাকে সবই দিয়েছ, আমিও তোমায় সবই দিয়েছি। দুজন একসঙ্গেই জয় করেছি।’ কাব্যের ঢঙে ফুটবল মাঠের সঙ্গে প্রেমের গল্পে এভাবেই ইতি টেনেছেন জিয়ানলুইজি বুফন। ৪৫ বছর বয়সী এই কিংবদন্তি গোলকিপার গ্লাভসজোড়া তুলে রাখার ঘোষণা দিয়েছেন আজ।

বুফন ও ফুটবলের এই ‘দেওয়া–নেওয়া’র গল্পে আছে ২৮ মৌসুম, ১১৫১ ম্যাচ আর ২৯ ট্রফির দীর্ঘ আখ্যান। যে ট্রফির মাঝে ২০০৬ ফিফা বিশ্বকাপ আছে, আছে সিরি আ–তে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ আর বেশি সময় গোল হজম না করার রেকর্ড। আর অর্জন বোঝানো এসব সংখ্যা ছাড়িয়েও বেশি করে আছে বছরের পর বছর নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার অদম্য গল্প আর দলের প্রতি গভীর মমতার অবিস্মরণীয় গাথা।

বুফনের অবসর নিয়ে চর্চা গতি পাচ্ছিল বয়স ৪০ পেরোনোর পর থেকেই। সেসব তুড়ি মেরে উড়িয়েই এ সময়ে পিএসজি, জুভেন্টাসের মতো ক্লাবে খেলা চালিয়ে গেছেন। চোটের কারণে টানা খেলা অস্বস্তিকর হয়ে পড়ার পরও হাল ছাড়েননি, ফিরে যান পেশাদার ক্যারিয়ার প্রথম ক্লাব পার্মায়। ইতালিয়ান ফুটবলের দ্বিতীয় স্তরে নেমে যাওয়া ক্লাবটিকে শীর্ষে ফেরানোর স্বপ্নও দেখছিলেন। তবে কোনো না কোনো পর্যায়ে গিয়ে একদিন থামতেই হয়।

এক নজরে জিয়ানলুইজি বুফনের ক্যারিয়ার
প্রথম আলো গ্রাফিকস

‘সুপারম্যান’ বুফনও থেমে গেলেন এ যাত্রায়; ইনস্টাগ্রাম পোস্টের ‘এখানেই সমাপ্তি’ শিরোনামে ‘দেওয়া–নেওয়া’র ওই কবিতায়। সঙ্গে জুড়ে দেন ২৮ বছরের ক্যারিয়ারের নানা মুহূর্তের ঝলকানি দিয়ে তৈরি একটি ভিডিও। যে ভিডিওতে চিতার ক্ষিপ্রতায় গোল ঠেকানোর দৃশ্যের সঙ্গে আছে বিশ্বকাপ ট্রফি হাতে আবেগাপ্লুত হয়ে ওঠার ছবি, আছে শরীরের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া সুপারম্যান অবতারও।

যে ক্লাবের একজন হয়ে বুফন ফুটবল ছাড়লেন, ১৯৯৫ সালের ১৯ নভেম্বর এই দলের হয়েই এসি মিলানের বিপক্ষে তাঁর সিনিয়র ফুটবল ক্যারিয়ারের অভিষেক। ছয় বছর সেখানে কাটিয়ে ২০০১ সালে জুভেন্টাসে যোগ দেন ৫ কোটি ২০ লাখ ইউরোয়, যা তখনকার গোলকিপারদের দামের বিশ্ব রেকর্ড।

২৮ বছরের পেশাদার ক্যারিয়ারে ৩টি ক্লাবের হয়ে খেলেছেন জিয়ানলুইজি বুফন
ছবি: বুফনের টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে নেওয়া

জুভেন্টাসে ১৭ বছরের ক্যারিয়ারে ১০ বার সিরি আ জেতার পাশাপাশি সুপারকোপা ইতালিয়া ও কোপা ইতালিয়া জিতেছেন ১৩ বার। চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালেও খেলেছেন তিনবার, যদিও ট্রফি হাতে তোলা হয়নি। তবে বুফনকে জুভেন্টাসের সমর্থকেরা মনে রাখবেন আরও একটি কারণে। ২০০৬ সালে জুভেন্টাস কুখ্যাত ‘ক্যালসিওপলি’ কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে সিরি বি-তে নেমে গেলেও ক্লাব ছাড়েননি বুফন।

২০১৮ সালে জুভেন্টাস ছেড়ে পিএসজিতে যোগ দিয়ে এক মৌসুম খেলেছিলেন, সেখানেও জিতেছেন লিগ। ২০১৯ সালে আবারও জুভেন্টাসে ফিরে বিকল্প গোলকিপার হিসেবে ২ বছরে খেলেছেন ২৯ ম্যাচ, জিতেছেন সিরি আও। ইতালির শীর্ষ লিগে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ (৬৪৮) খেলার রেকর্ড তাঁর। সবচেয়ে বেশি সময় গোল হজম না করার রেকর্ডও (৯৭৪ মিনিট)।

২০০৬ বিশ্বকাপের ট্রফি হাতে জিয়ানলুইজি বুফন
ছবি: বুফনের টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে নেওয়া

বুফনের কীর্তির ছাপ আছে আন্তর্জাতিক ফুটবলেও। ইতালি জাতীয় দলের হয়ে ১৯৯৭ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত খেলেছেন মোট ১৭৬ ম্যাচ, যা ইতালির হয়ে সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলার রেকর্ডও। বিশ্বকাপ তো জিতেছেনই। চ্যাম্পিয়নস লিগ আর ইউরোই শুধু রয়ে গেল ২৮ বছরের ক্যারিয়ারের আক্ষেপ হয়ে।