আর্সেনাল কেন পেনাল্টি পেল, রিয়ালের পেনাল্টি কেন বাতিল হলো
সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে গতকাল রাতে চ্যাম্পিয়নস লিগ কোয়ার্টার ফাইনাল ফিরতি লেগে রিয়াল মাদ্রিদকে ২-১ গোলে হারিয়েছে আর্সেনাল। দুই লেগ মিলিয়ে ৫-১ গোলের জয়ে সেমিফাইনালে উঠেছে ইংলিশ ক্লাবটি। ফিরতি লেগে ১৩ মিনিটে ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারির (ভিএআর) হস্তক্ষেপে পেনাল্টি পায় আর্সেনাল। দলটির ফরোয়ার্ড বুকায়ো সাকা পেনাল্টি থেকে গোল করতে পারেননি। ২৩ মিনিটে ফরাসি রেফারি ফ্রাঁসোয়া লেতেক্সিয়ের বাঁশি বাজান পেনাল্টির, সেটা রিয়ালের পক্ষে। কিন্তু ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি (ভিএআর) দীর্ঘ সময় পর্যালোচনার পর পেনাল্টিটি বাতিল করে দেয়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আর্সেনালের পেনাল্টি পাওয়া এবং রিয়ালের পেনাল্টি বাতিল হওয়া নিয়ে আলোচনা চলছে। ইএসপিএন অফিশিয়ালদের এ দুটি সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা দিয়েছে। আসুন জেনে নিই।
আর্সেনালের পেনাল্টি
যা ঘটেছিল: ম্যাচের ৯ মিনিটে কর্নার পেয়েছিল আর্সেনাল। ডেকলান রাইসের নেওয়া কর্নার রুখে দেন রিয়াল গোলকিপার থিবো কোর্তোয়া। কিন্তু ততক্ষণে রিয়ালের বক্সে তাদের ডিফেন্ডার রাউল আসেনসিওর চ্যালেঞ্জে টিকতে না পেরে মাঠেই পড়ে যান আর্সেনালের মিডফিল্ডার মিকেল মেরিনো। রেফারি লেতেক্সিয়ের খেলা চালিয়ে নিলেও কিছুক্ষণ পর হস্তক্ষেপ করে ভিএআর প্রযুক্তি। মাঠের রেফারিকে যেতে বলা হয় টাচলাইনের বাইরে রাখা ভিএআর মনিটরে। ভিএআর রেফারির দায়িত্বে থাকা জেরোমে ব্রিসার্দ লেতেক্সিয়েরকে মনিটরে সম্ভাব্য পেনাল্টি যাচাই করে দেখতে বলেন।
ভিএআরের সিদ্ধান্ত: পেনাল্টি। সাকার শট রুখে দেন রিয়াল গোলকিপার কোর্তোয়া।
ভিএআর রিভিউ: প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়কে ধরে রাখা কিংবা আটকে রাখা ফাউল হয় কীভাবে? এমনিতে এটাকে ফাউল হিসেবে দেখা না হলেও চ্যালেঞ্জ প্রতিপক্ষের ওপর কতটা প্রভাব ফেলল সেটা মূল বিষয় এবং এটাই দেখা হয়। তবে এই প্রভাব কতটা তা বিচার করা ভিএআর রেফারির জন্য কঠিন। এ ক্ষেত্রে বলের গতিপথ খুব গুরুত্বপূর্ণ। যে খেলোয়াড়কে আটকে রাখা হয়েছিল, তিনি যদি বলটি ধরার মতো অবস্থানে থাকেন এবং প্রতিপক্ষের অবৈধ চ্যালেঞ্জের কারণে সেটি করতে না পারেন, তাহলে সম্ভাব্য পেনাল্টি পর্যালোচনা করে দেখে ভিএআর প্রযুক্তি। কিন্তু চ্যালেঞ্জের মুখে পড়া খেলোয়াড়টি যদি বল যেখানে পড়বে সেদিকে না দৌড়ান, তাহলে ভিএআর প্রযুক্তি ফুটবল-সংশ্লিষ্ট কোনো কারণ পর্যালোচনা করবে না।
আসেনসিও মেরিনোকে ধরে রেখেছিলেন। কিন্তু সেটা কি ভিএআর প্রযুক্তির হস্তক্ষেপে পেনাল্টির সিদ্ধান্ত দেওয়ার মতো ছিল? উত্তর হলো, এটা সহজ সিদ্ধান্ত ছিল এবং দ্রুতই নেওয়া হয়েছে। দুই মিনিটের কিছু বেশি সময় লেগেছে। তবে এটা খুব দ্রুত হলে পরে যেটা ঘটেছে, সেটা মোটেও তেমন ছিল না।
রিয়ালের পেনাল্টি প্রত্যাহার
যা ঘটেছিল: লুকাস ভাসকেজের শট বাতাসে ভেসে আর্সেনালের বক্সে পড়েছে। রাউল আসেনসিও হেড করে বলটা কিলিয়ান এমবাপ্পের সামনে ফেলেন। এমবাপ্পে বলের পিছু ছুটতে গিয়ে পারেননি। মাঠেই পড়ে যান এবং দাবি করেন ডেকলান রাইসের বাধায় তিনি পড়ে গেছেন। রেফারি লেতেক্সিয়ের তৎক্ষণাৎ পেনাল্টির বাঁশি বাজিয়ে রাইসকে হলুদ কার্ডও দেখান। এরপরই মাঠের রেফারির সিদ্ধান্তটি সঠিক কি না, তা পরীক্ষা করে ভিএআর।
ভিএআরের সিদ্ধান্ত: পেনাল্টি বাতিল।
ভিএআর রিভিউ: রিয়ালের সমর্থকেরা এই ভেবে আশ্চর্য হতে পারেন, প্রায় একই রকম কারণে আর্সেনাল পেনাল্টি পেল, রিয়াল কেন পেল না? এমবাপ্পেকে হাত দিয়ে আটকে রেখেছিলেন রাইস। এর আগে দেখা গেছে, শারীরিক বাধার প্রমাণ পাওয়ায় মাঠের রেফারির সিদ্ধান্তই বহাল রেখেছে ভিএআর। তবে একটু পার্থক্য আছে। শরীরের ওপর ভাগে পাওয়া বাধা এবং নিচের অংশে পাওয়া বাধাকে একই দৃষ্টিতে বিচার করা হয় না। এমবাপ্পে যদি পায়ে ট্যাকলের শিকার হতেন, তাহলে সম্ভবত মাঠের রেফারির সিদ্ধান্তই বহাল থাকত। কিন্তু শরীরের ওপরের অংশে বাধাপ্রাপ্ত হওয়ায় মানে এমবাপ্পের শরীরের ওপরের অংশকে রাইস বাধা দেওয়ায় দেখা হয়েছে, এই বাধা দেওয়ার ফলে প্রভাবটা কি পড়েছে?
ভিডিও দেখে পরিষ্কার বোঝা গেছে, রাইস যেভাবে এমবাপ্পেকে ধরে রেখেছিলেন, সেটা রিয়ালের ফরাসি তারকার মাঠে পড়ে যাওয়ার মতো ছিল না। অর্থাৎ অনেকটা চালাকি করেই লঘু বাধার গুরুদণ্ড হিসেবে মাটিতে পড়ে গেছেন এমবাপ্পে। সেখানে ভিএআরের হস্তক্ষেপ একটু চমকপ্রদই। সবচেয়ে বাজে বিষয় হলো, সিদ্ধান্ত দিতে ভিএআর যে পরিমাণ সময় নিয়েছে। মাঠের রেফারির পেনাল্টির বাঁশি বাজানো থেকে ভিএআর মনিটর দেখে সেই সিদ্ধান্ত তাঁর বাতিল করা পর্যন্ত প্রায় ৫ মিনিট সময় লেগেছে, যেটা অনেক বেশি সময়।
রাইসের হলুদ কার্ড বাতিল করা হয়। তবে ভিডিও রিপ্লের প্রক্রিয়া দেখে ভুল বোঝারও অবকাশ ছিল। টিভির গ্রাফিকসে ভুলভাবে দেখানো হয়, অফসাইডের কারণে পেনাল্টিটি বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু পেনাল্টি বাতিলের পর খেলা পুনরায় শুরু হয়েছে আর্সেনাল গোলকিপার ডেভিড রায়ার ড্রপড বল কিক করার মাধ্যমে। অফসাইড হলে ফ্রি–কিক পেত আর্সেনাল। দুই দলের খেলোয়াড়, কোচ, স্টাফ থেকে সমর্থকেরা দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষায় ছিলেন সিদ্ধান্ত জানার জন্য। এত সময় লাগার কারণ? ফাউলের পাশাপাশি অফসাইড হয়েছে কি না, সেটাও দেখেছে ভিএআর। উয়েফার সেমি অটোমেটেড অফসাইড প্রযুক্তির এই সিদ্ধান্ত আরও দ্রুত জানানো উচিত ছিল।