সুপার ক্লাসিকোতে আর্জেন্টিনার সামনে এ কোন ব্রাজিল

বিশ্বকাপ বাছাই মুখোমুখি হবে ব্রাজিল–আর্জেন্টিনাটুইটার ও রয়টার্স

২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর। বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে দুটি ম্যাচের পর ২৬৮০ কিলোমিটার দূরের দুই প্রতিবেশী শহরে নামে ভিন্ন দুই রাত। বুয়েনস এইরেসের আকাশি–নীল উৎসবের ঢেউয়ে সেই রাতে চাপা পড়ে যায় রিও ডি জেনিরোর হলুদ কান্না। একই রাতে দুই দেশের ফুটবলও যেন চলে গেছে আলাদা দুটি পথে। একটি পথে হেঁটে লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা দল আলিঙ্গন করেছে অমরত্বকে আর অন্য পথে ব্রাজিলের ফুটবল চলে গেছে অন্ধকার এক খাদের দিকে।

সেই বিশেষ রাতের পর গত এক বছরে ভিন্ন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছে দেশ দুটি। নেইমার–ভিনিসিয়ুসদের চোখের জল শুকানোর আগেই ১৮ ডিসেম্বর ৩৬ বছর পর বিশ্বজয়ের উৎসবে মাতে আর্জেন্টিনা। কিন্তু আর্জেন্টিনার জয়ের ধারা বিশ্বকাপ জয়েই থামেনি। এরপর সর্বশেষ উরুগুয়ে ম্যাচের আগ পর্যন্ত অবিশ্বাস্য ফুটবল খেলেছে ‘আলবিসেলেস্তা’রা। এর মধ্যে বিশ্বকাপের পরই টানা ৮ ম্যাচে জিতেছে তারা, সব মিলিয়ে তারা অপরাজিত ছিল টানা ১৪ ম্যাচে।

আরও পড়ুন

শেষ পর্যন্ত গত সপ্তাহে ‘এল লোকো’ (পাগল)–খ্যাত স্বদেশি কোচ মার্সেলো বিয়েলসার উরুগুয়ের বিপক্ষে ২–০ গোলের হার দিয়ে স্বর্গ থেকে মাটিতে নেমেছে আর্জেন্টিনা। কিন্তু ব্যতিক্রমী এই হারকে এক পাশে সরিয়ে রাখলে এই আর্জেন্টিনা অদম্য। বিশ্বকাপ বাছাইয়ে আগামীকাল ভোর ৬টা ৩০ মিনিটে মারাকানায় এই অদম্য দলটির মুখোমুখি হবে ব্রাজিল। শক্তি, সামর্থ্য এবং সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে দুই দলের এই সুপার ক্লাসিকোকে অসম বলেই মনে হবে।

ব্রাজিলের যাওয়ার পথে দিবালারা
টুইটার

আর্জেন্টিনার সর্বগ্রাসী পারফরম্যান্সের বিপরীতে সাম্প্রতিক সময়ে ব্রাজিল কতটা নড়বড়ে ছিল, তা ধরা পড়ে পরিসংখ্যানেই। বিশ্বকাপের পর খেলা ৮ ম্যাচের ৩টিতে জিতলেও হেরেছে ৪ ম্যাচে এবং ড্র করেছে ১ ম্যাচে। আর বিশ্বকাপ বাছাইয়ের পারফরম্যান্স বিবেচনায় নিলে ৫ ম্যাচে ২টি জয়ের বিপরীতে হার আছে ২ ম্যাচে এবং ড্র করেছে ১টিতে। পয়েন্ট তালিকায় অবস্থান ৫ নম্বরে। বাছাইপর্বের শেষ ২ ম্যাচের ২টিতেই হেরেছে তারা। উরুগুয়ের বিপক্ষে ২–০ গোলে হারের পর কলম্বিয়ার বিপক্ষে হেরেছে ২–১ গোলে।

হার–জিতের এই পরিসংখ্যান এক পাশে সরিয়ে রাখলেও ব্রাজিলের খেলার মান মোটেই সন্তোষজনক ছিল না। ব্রাজিল যেন নিজেদের খেলার ডিএনএই হারিয়ে ফেলেছে। অবশ্য এ জন্য খেলোয়াড়দের চেয়ে ব্রাজিলের ফুটবল কর্তাদের ভূমিকাও সমানভাবে দায়ী। বিশ্বকাপের পর প্রায় এক বছর হতে চলল কিন্তু তারা এখনো স্থায়ী কোচ নিয়োগ দিতে পারেনি। রিয়াল মাদ্রিদের ইতালিয়ান কোচ কার্লো আনচেলত্তির সঙ্গে চুক্তি পাকা করে রেখেছে কিন্তু তিনি যোগ দেবেন চলতি মৌসুম শেষ করে। এর মাঝে প্রথমে রামন মেনেজেস এবং বর্তমানে অন্তর্বর্তীকালীন কোচের দায়িত্ব পালন করছেন ফার্নান্দো দিনিজ।

আরও পড়ুন

মাঠের বাইরের এসব অনিশ্চয়তা মাঠের পারফরম্যান্সেও প্রভাব ফেলেছে। ক্লাবের হয়ে দারুণ ছন্দে থাকা ভিনিসিয়ুস–রদ্রিগো–মার্তিনেল্লিদের এখনো একই সুরে খেলতে দেখা যায়নি। এসবের সঙ্গে পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করেছে চোটের হানা। বিশ্বকাপের পর লম্বা সময়ের জন্য ছিটকে যান নেইমার।

ব্রাজিলের অনুশীলনে রদ্রিগো ও দিনিজ
রয়টার্স

সেই চোট কাটিয়ে ফিরে থিতু হওয়ার আগে আবারও চোটে পড়েছেন ব্রাজিলের ইতিহাসে সর্বোচ্চ এই গোলদাতা। এর মধ্যে নতুন ধাক্কা ভিনিসিয়ুসের চোট। নেইমারের পাশাপাশি লম্বা সময়ের জন্য মাঠের বাইরে ছিটকে যাওয়া এই উইঙ্গারকে ছাড়াই আর্জেন্টিনার বিপক্ষে খেলতে হবে ব্রাজিলকে।

এদিকে ধ্রুপদি এই ম্যাচের আগে উরুগুয়ের বিপক্ষে হার মেসিদের যেন আরও তাতিয়ে রেখেছে। সেই ম্যাচের পর ব্রাজিলের বিপক্ষে ম্যাচ নিয়ে মেসি বলেছিলেন, ‘আমাদের ঘুরে দাঁড়াতে হবে এবং ব্রাজিলের বিপক্ষে দারুণ খেলার চেষ্টা করতে হবে।’ ব্রাজিলের এই দলকে হারাতে মেসিদের চেষ্টাটুকুই তো যথেষ্ট হতে পারে! এরপরও দলটি ব্রাজিল বলেই হয়তো এখনই শেষ কথা বলা যাচ্ছে না। কে জানে, এই ম্যাচটি জিতেই হয়তো নতুন করে সব শুরু করতে চাইবে তারা। তেমনটা হলে এই মুহূর্তে অসম মনে হওয়া ম্যাচটিই লিখতে পারে নতুন কোনো রোমাঞ্চকর আখ্যান।