১৩৯১ নম্বর ম্যাচ খেললেন ব্রাজিলের ফাবিও, বিশ্ব রেকর্ড নিয়ে বিতর্ক

রেকর্ড গড়া ম্যাচে স্মারক উপহারসহ পরিবারের সঙ্গে ফাবিওফ্লুমিনেন্সে এক্স হ্যান্ডল

ফাবিও দেভিসন লোপেজ মাসিয়েল। ব্রাজিলিয়ান ফুটবলে ‘ফাবিও’ নামেই পরিচিত। গত জুলাইয়ে ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপে সবচেয়ে বয়স্ক খেলোয়াড় ছিলেন ৪৪ বছর বয়সী ফ্লুমিনেন্সের এই গোলকিপার। ফুটবল ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার রেকর্ড ভাঙার পথে তখন বেশ কাছাকাছিই ছিলেন ফাবিও। সে কারণে সংবাদমাধ্যম থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তখন আলোচনাও হয়েছিল এ নিয়ে।

আরও পড়ুন

কোপা সুদামেরিকানায় (ইউরোপে ইউরোপা লিগের সমমানের টুর্নামেন্ট) গতকাল মারাকানা স্টেডিয়ামে শেষ ষোলোয় কলম্বিয়ার ক্লাব আমেরিকা দে কালিকে ২–০ গোলে হারায় ফ্লুমিনেন্স। পেশাদার ফুটবলে এটা ছিল ফাবিওর ১৩৯১তম প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ। এই ম্যাচ দিয়েই ছেলেদের ফুটবলে সবচেয়ে বেশি প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলার রেকর্ড গড়ার দাবি করেন ফাবিও।

বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, ফ্লুমিনেন্স ও ব্রাজিলিয়ান সংবাদমাধ্যমের দাবি এই রেকর্ডটি এখন শুধুই ফাবিওর একার দখলে। যদিও ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা কিংবা আঞ্চলিকভাবে দক্ষিণ আমেরিকান ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা কনমেবল এখনো রেকর্ড হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। গিনেস বই অনুযায়ী, ইংল্যান্ড জাতীয় দলের হয়ে সর্বোচ্চ ম্যাচ (১২৫) খেলার রেকর্ড গড়া শিলটন তাঁর পেশাদার ক্যারিয়ারে ১৩৯০টি প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলেছেন।

এএফপি জানিয়েছে, ইংল্যান্ডের কিংবদন্তি গোলকিপার পিটার শিলটনের গড়া এই রেকর্ডটি গত শনিবার ছুঁয়ে ফেলেন ফাবিও। এরপর গতকালের ম্যাচ শেষে রেকর্ড গড়া নিয়ে গোটা ক্যারিয়ার ব্রাজিলে কাটানো এই গোলকিপার বলেছেন, ‘অনেক বছর ধরে টিকে থাকা এই রেকর্ডটি ভাঙার মতো এমন তাৎপর্যপূর্ণ অর্জনের গুরুত্ব আমরা কখনো কখনো বুঝতে পারি না।’

ফ্লুমিনেন্সের সমর্থকেরা গ্যালারিতে ‘ফাবিও ব্রাজিলের সেরা গোলকিপার’ স্লোগান তুলেছিলেন। রেকর্ডটি গড়ে ক্লাবের পক্ষ থেকে বিশেষ স্মারক উপহার পেয়েছেন ফাবিও। বিবিসি জানিয়েছে, মাইলফলকটি উদ্‌যাপনে বিশেষ জার্সিও পরেছিলেন তিনি। ম্যাচের আগে ও পরে তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়েছে ক্লাব ও সমর্থকেরা। ফাবিও বলেন, ‘জীবনের অংশ হয়ে থাকা সবাইকে ধন্যবাদ জানাই—বাবা, মা, বোন, বন্ধু ও স্ত্রী। ভালো মানুষ হওয়ার চেষ্টা করি। সতীর্থদের সাহায্য করাটা গুরুত্বপূর্ণ। আমি কৃতজ্ঞ। তবে সৃষ্টিকর্তা ছাড়া কিছুই সম্ভব হতো না।’

ফ্লুমিনেন্সে কোচ রেনাতো গাউচো ফাবিওকে নিয়ে বলেছেন, ‘তার মতো এমন পেশাদারত্ব বজায় রেখে কেউ এত ম্যাচ খেলেনি। সন্দেহ নেই সে আরও দীর্ঘ সময় খেলবে। তার রেকর্ড পেছনে ফেলা অন্য কারও পক্ষে কঠিন হবে।’

১৯৯৭ সালে পেশাদার ফুটবলে অভিষিক্ত হয়ে ব্রাজিলের ঘরোয়া ফুটবলে উনাইয়ো বান্দেইরান্তে, আতলেতিকো পারানায়েনসে, ভাস্কো দা গামা, ক্রুজেইরো ঘুরে ২০২২ সালে ফ্লুমিনেন্সে যোগ দেন ব্রাজিল অনূর্ধ্ব–১৭ দলের হয়ে ছোটদের বিশ্বকাপজয়ী এ গোলকিপার। ২০০৪ কোপা আমেরিকাজয়ী ব্রাজিলের স্কোয়াডে থাকলেও জাতীয় দলের হয়ে কখনো খেলার সুযোগ পাননি ফাবিও।

আরও পড়ুন

ওদিকে শিলটনের দাবি, ১৩৮৭টি প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলেছেন, যেটা লেখা আছে তাঁর এক্স হ্যান্ডলেও। নটিংহাম ফরেস্টের হয়ে টানা দুবার ইউরোপিয়ান কাপজয়ী (চ্যাম্পিয়নস লিগ) শিলটন আসলে কতগুলো ম্যাচ খেলেছেন, তা নিয়ে বিতর্ক আছে।

বিবিসি জানিয়েছে, ৭৫ বছর বয়সী শিলটন ক্লাব ক্যারিয়ারে ১২৪৯টি ম্যাচ খেলেছেন। এর সঙ্গে ইংল্যান্ডের হয়ে খেলা তাঁর ১২৫ ম্যাচ যোগ করলে সংখ্যাটা দাঁড়ায় ১৩৭৪ ম্যাচ। ইংল্যান্ড ফুটবল অনলাইনের হিসাবে ইংল্যান্ড অনূর্ধ্ব–২৩ দলের হয়ে ১৩ ম্যাচ খেলেছেন শিলটন। এই ম্যাচগুলো যোগ করলে সংখ্যাটা দাঁড়ায় ১৩৮৭ ম্যাচ—যেটা শিলটন নিজে দাবি করেন। এই ১৩ ম্যাচ তাঁর সিনিয়র ক্যারিয়ারে যোগ হবে কি না, সেটা অবশ্য বিতর্কের বিষয়। তবে ফ্লুমিনেন্স তাদের ক্লাবের ওয়েবসাইটে ঠিকই ঘোষণা করেছে, ‘ফুটবল ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার পর ফাবিওকে সম্মানিত করা হয়েছে।’

ক্রুজেইরোর হয়ে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ (২০০৫ থেকে ২০২২–এর মধ্যে ৯৭৬ ম্যাচ) খেলেছেন ফাবিও। ভাস্কোর হয়ে খেলেছেন ১৫০ ম্যাচ, উনাইয়োর হয়ে খেলেছেন ৩০ ম্যাচ এবং ফ্লুমিনেন্সের হয়ে এ পর্যন্ত খেলেছেন ২৩৫ ম্যাচ।

ফাবিওর ২৮ বছরের ক্যারিয়ারে ফ্লুমিনেন্স পঞ্চম ক্লাব। পেশাদার ফুটবলে তাঁর অভিষেকের পর জন্মেছেন তাঁর বর্তমান দলের ১৬ খেলোয়াড়। ১৯৯৭ সালে ব্রাজিল অনূর্ধ্ব–১৭ দলের হয়ে বিশ্বকাপ জয়ের মিশনে ফাবিওর সতীর্থ ছিলেন রোনালদিনিও। সে সময় তাঁর ব্যাকআপ গোলকিপার ছিলেন হুলিও সিজার। অথচ এ সিজারই পরে ব্রাজিল দলে নিয়মিত হন, ইউরোপে চ্যাম্পিয়নস লিগও জেতেন আর ফাবিও সিজারকে সরিয়ে কখনো ব্রাজিলের মূল জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পাননি। সিজার ২০১৮ সালে অবসর নেন।

কিন্তু ফাবিও খেলে যাচ্ছেন এখনো। সিআইইএস ফুটবল অবজারভেটরি জানিয়েছে, গত বছর জুলাই থেকে গত ১২ মাসে ৫৮৫০ মিনিট মাঠে ছিলেন এই গোলকিপার। গড়ে হিসাবটা দাঁড়ায় এ সময়ে ৬৫ ম্যাচ খেলেছেন ফাবিও—এক বর্ষপঞ্জিতে কোনো গোলকিপারই এত ম্যাচ খেলেননি। আবারও স্মরণ করিয়ে দেওয়া যাক, তাঁর বয়সটা ৪৪ বছর এবং রেকর্ডটি গড়েছেন ব্রাজিলের ‘হোম অব ফুটবল’ মারাকানায়। এর চেয়ে ভালো জায়গা আর কী হতে পারে!