ডি ব্রুইনার গোলটি কি বৈধ

রিয়াল মাদ্রিদের জালে গোলের পর কেভিন ডি ব্রুইনাছবি: এএফপি

কেভিন ডি ব্রুইনার গোলটা কি বৈধ?

প্রশ্ন উঠেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। আর ডাগ আউটে দাঁড়িয়ে কাল রাতে অফিশিয়ালদের কাছে একই প্রশ্ন তুলে হলুদ কার্ড দেখেছেন রিয়াল মাদ্রিদ কোচ কার্লো আনচেলত্তি। ইতালিয়ান এই কোচ তাতে দমে যাননি। ম্যাচের ভিডিও পুনরায় দেখে আনচেলত্তি দাবি করেন, ম্যানচেস্টার সিটির সমতাসূচক গোলটি বাতিল করা উচিত ছিল। কারণ, ৬৭ মিনিটে ডি ব্রুইনার সেই গোলের আগেই বল একবার টাচলাইনের বাইরে চলে গিয়েছিল। অর্থাৎ, বলটা আউট ছিল। কিন্তু ম্যাচের অফিশিয়ালরা খেলা চালিয়ে যান এবং গোল হজম করতে হয় রিয়ালকে। সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে চ্যাম্পিয়নস লিগ সেমিফাইনাল প্রথম লেগের ম্যাচটি ১–১ গোলে ড্র হয়েছে

ম্যাচ শেষে ‘মুভিস্টার’কে আনচেলত্তি স্পষ্ট করে বলেছেন, ‘বলটা আউট ছিল। এটা আমার দাবি নয়, প্রযুক্তিই বলছে।’

আরও পড়ুন

ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি প্রযুক্তি (ভিএআর) বলটা আউট ধরেনি। তাহলে আনচেলত্তির এমন দাবির কারণ কি? ডি ব্রুইনা গোলটি করার আগে খেলাটা যেভাবে তৈরি হলো (বিল্ড আপ) তা আরেকবার স্মরণ করা যাক। কাইল ওয়াকারের পাস মাঠের ভেতর রাখতে টাচলাইন থেকে ফিরিয়েছেন বের্নার্দো সিলভা। টিভিতে কিংবা গ্যালারির দর্শক আসন থেকে খালি চোখে তখন এমন মনে হলেও রিয়ালের খেলোয়াড়েরা কিন্তু থেমে গিয়েছিলেন। তাদের দাবি ছিল বল মাঠের বাইরে চলে গিয়েছিল। রিয়াল কোচ আনচেলত্তিও থ্রো–ইনের দাবি করেন রেফারির কাছে।

সিলভা থেকে রুবেন দিয়াস হয়ে বল পেয়েছিলেন ডি ব্রুইনা। তাঁর ক্রস লুকা মদরিচ ঠেকানোর পর বল পেয়ে যান রিয়ালের এদুয়ার্দো কামাভিঙ্গা। ফরাসি তারকা প্রতি আক্রমণ করতে সামনে এগোন। আর তাতে ঘুরে যায় খেলার মোড়। অর্থাৎ যে আক্রমণ ছিল সিটির কামাভিঙ্গা বল দখল করে প্রতিআক্রমণে ওঠার চেষ্টা করায় সেটা তখন রিয়ালের। তাতে ঘুরে যায় ‘ফেজ অব প্লে’।

কিন্তু কামাভিঙ্গার কাছ থেকে বল কাড়েন রদ্রি। এরপর জ্যাক গ্রিলিশ ও ইলকায় গুন্দোগান হয়ে সুবিধাজনক জায়গায় শটের জন্য বল পেয়ে যান কেভিন ডি ব্রুইনা। দুর্দান্ত গতির শটে গোল করেন। তাঁর গোলের প্রায় ২০ সেকেন্ড আগে টাচলাইনে বল যখন বের্নার্দো সিলভার দখলে—বিতর্কটা সে সময় নিয়েই। তখন নাকি বল মাঠের বাইরে চলে গিয়েছিল।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন

তবে ক্যামেরার কোনো শটেই বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। পরে এই ম্যাচের সম্প্রচারক বিইন স্পোর্টস স্টেডিয়ামের ভেতর একাধিক ক্যামেরা অ্যাঙ্গেল ব্যবহার করে থ্রিডি প্রজেকশনের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছে মিলিমিটার ব্যবধানে বলের পুরো অংশই দাগের বাইরে ছিল। আর্সেনালের সাবেক কোচ আর্সেন ওয়েঙ্গার বিইন স্পোর্টসের স্টুডিওতে ছিলেন। ভিএআর প্রযুক্তি কেন বিষয়টি ধরতে পারল না, সেটি ওয়েঙ্গার ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে, ‘এমন পরিস্থিতিতে ভিএআর সাধারণত হস্তক্ষেপ করে। বলটা আউট ছিল কি না, তা নিশ্চিত হতে তারা হয়তো বেশি পেছনে (ভিডিও) যায়নি...ভিএআর সাধারণত সাইডলাইন দেখে না, শুধু গোললাইন দেখে।’

ওয়েঙ্গারের ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট হওয়ার সুযোগ খুব কম। সংবাদমাধ্যম সিবিএসের স্পোর্টস রুলস অফিশিয়াল ক্রিস্টিনা আনকেল এ বিষয়ে কথা বলেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের এই সংবাদমাধ্যমের স্টুডিওতে ম্যাচ বিশ্লেষক হিসেবে আনকেল পুরো বিষয়টির ব্যাখ্যা দেন। গোলটি সিটি যে আক্রমণ থেকে তৈরি করেছে তার সঙ্গে বল আউট হওয়ার সেই ঘটনার সংযোগ ছিল না। কারণ তার আগেই রিয়াল একবার বলের দখল পেয়েছিল এবং তাতে ‘ফেজ অব প্লে’ও ঘুরে যায়। এরপর পুনরায় বলের দখল নিয়ে আক্রমণ থেকে গোল পেয়েছে সিটি। ঠিক এ কারণেই ভিএআর প্রযুক্তি বল মাঠের বাইরে চলে যাওয়ার সেই ঘটনার জন্য ডি ব্রুইনার গোল বাতিল করেনি।

আনকেলের ভাষায়, ‘বলের দখল বদল হয়েছে। তাই বলটা আউট হলেও ভিএআর গোল হওয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ঘটনা হিসেবে এটা রিভিউ করেনি।

রেডিও মার্কায় রেফারিদের বিশ্লেষক পাভেল ফার্নান্দেজও একই দাবি করেছেন। তাঁর যুক্তি পরিস্কার, ‘বল মাঠের বাইরে গেলেও ম্যানচেস্টার সিটির গোলটি বাতিল করা যায় না।’

ফার্নান্দেজ নিজের যুক্তির পক্ষে ব্যাখ্যাও দিয়েছেন, ‘ভিএআর প্রযুক্তি এটা রিভিউ করতে পারে না। কারণ ইংলিশ ক্লাবটির আক্রমণ তৈরি হয়েছে যখন কামাভিঙ্গা বলটা হারাল। তাই ভিএআর সিটির আক্রমণ তৈরির সময় থেকেও পিছিয়ে গিয়ে ঘটনাটি রিভিউ করেনি।’

আরও পড়ুন