দেখতে ইব্রার মতো, আসলে তিনি ইব্রা নন
গবেষণা বলছে, পৃথিবীতে একই রকম দেখতে ছয় থেকে সাতজন মানুষ পাওয়া সম্ভব। যেটিকে বলা হয় ডপেলগ্যাঙ্গার বা লুক অ্যালাইক।
এই সাদৃশ্য কখনো কখনো ঝামেলাও ডেকে আনে। এক অপরাধীর সঙ্গে চেহারায় মিল থাকার কারণে বছর চারেক আগে যেমন কলম্বিয়ান পুলিশের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’–এর তালিকায় ঢুকে পড়েছিলেন ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ব্যাপারগুলো মজার ঘটনা জন্ম দেয়।
নিহাদ জেডোভিচের ক্ষেত্রে যেমনটা হয়েছে। দক্ষিণ–পূর্ব ইউরোপের দেশ বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার এই বাস্কেটবল খেলোয়াড় যেখানেই যান, সেখানেই মানুষ তাঁকে ভুলে জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ মনে করেন। জেডোভিচের চেহারা যে হুবহু ইব্রাহিমোভিচের মতো! শুধু কি তাই? দুজনের শারীরিক গঠন, চুলের স্টাইল ও উচ্চতাও প্রায় এক। সুইডেনের সাবেক ফুটবলার ইব্রার উচ্চতা ৬ ফুট ৫ ইঞ্চি, বাস্কেটবল খেলোয়াড় জেডোভিচের ৬ ফুট ৬ ইঞ্চি।
২০২৩ সালের জুনে খেলোয়াড়ি জীবনকে বিদায় বলে দেওয়া ইব্রা ২০০৯ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে ক্লাব ফুটবলে খেলেছেন বার্সেলোনার হয়ে। বিস্ময়কর হলেও সত্যি, সেই সময় জেডোভিচও বার্সোলোনা বাস্কেটবল দলের সদস্য ছিলেন।
সেই নিহাদ জেডোভিচকে নিয়ে হঠাৎ আলোচনার কারণ আজ তাঁর ৩৫তম জন্মদিন। বাস্কেটবলে ঝোঁকার আগে ফুটবলেই মনোনিবেশ করেছিলেন জেডোভিচ, কিন্তু বসনিয়ান যুদ্ধের পর তাঁর ফুটবলার হওয়ার ইচ্ছা পূরণ হয়নি। তবে তিনি যেখানেই যান, মানুষ তাঁকে ফুটবলার ইব্রাহিমোভিচ মনে করে ছবি তোলেন।
বাস্কেটবলবিষয়ক সংবাদমাধ্যম ইউরোহুপসকে কয়েক বছর আগে এসব অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন জেডোভিচ। তিনি বলেছেন, ‘যখন আমি (ইব্রার মতো) বড় চুল রাখতে শুরু করলাম, কেউ একজন আমাকে প্রতিদিন ইনস্টাগ্রাম বা টুইটারে (বর্তমানে এক্স) বা অন্য কোনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্যাগ করত। এই গ্রীষ্মে আমি তিন দিনের জন্য প্যারিসে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমি তো আর জনে জনে বলতে পারি না, আমার সঙ্গে ছবি তোলা বন্ধ করো। এটা অবিশ্বাস্য ব্যাপার ছিল।’
ফুটবল ছেড়ে কেন বাস্কেটবলে যেতে হয়েছে, সেটিও জানিয়েছেন জেডোভিচ, ‘বসনিয়ান যুদ্ধের সময় আমার জীবনের সাতটি বছর (জার্মানির) মিউনিখে কাটিয়েছি। ফুটবল ছিল আমার প্রথম ভালোবাসা। আমার ঘরের দল এফকে জেলিয়েজনিকারের পাশাপাশি বায়ার্ন মিউনিখেরও বড় ভক্ত ছিলাম। কিন্তু যুদ্ধ শেষে ১৯৯৭ সালে যখন সারায়েভোয় (বসনিয়ার রাজধানী) ফিরলাম, তখন ফুটবল খেলার কোনো সুযোগ ছিল না। সবকিছু ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। আমি তো এ নিয়ে এখনো মাকে মজা করে বলি, তুমি আমাকে কখনোই ফুটবল খেলতে দাওনি।’
জেডোভিচ আরও বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, সেই সময় সবকিছু বিশৃঙ্খল ছিল, দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা মোটেও ভালো ছিল না। ফুটবল খেলার মতো কোনো মাঠও ছিল না। কয়েকটি ছোট ক্লাব ছিল। আমার ভাই সেখানে খেলার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু এটা খুব কঠিন ছিল।’
জেডোভিচ বর্তমানে খেলছেন স্পেনের বাস্কেটবল ক্লাব ইউনিকাহা মালাগায়। ইব্রাহিমোভিচ শেষবার ইতালিয়ান ক্লাব এসি মিলানের হয়ে খেলে অবসরে গেছেন। দুজনের জন্ম আলাদা দেশে হলেও পৈতৃক সূত্রে বসনিয়ার সঙ্গে ইব্রাহিমোভিচের সম্পর্ক আছে। ইব্রার মা একজন ক্রোয়াট, বাবা বসনিয়ান। ইব্রার বাবা সেফিক ইব্রাহিমোভিচ ১৯৭৭ সালে জন্মভূমি বসনিয়া ছেড়ে সুইডেনে পাড়ি জমান।
এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফুটবলবিষয়ক ট্রল পেজগুলোতে একটা কথা প্রচলিত আছে। যদিও বিশ্বস্ত কোনো সংবাদমাধ্যমে কথাটির সত্যতা পাওয়া যায়নি। তবু হাস্যরসের খোরাক জোগাতেই বলা।
চেহারায় মিল থাকার কারণে এক সাংবাদিক নাকি একবার নিহাদ জেডোভিচকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ সম্পর্কে তাঁর কেউ হন কি না। জেডোভিচ জবাবে বলেছিলেন, ‘না, আমার বাবা কখনো সুইডেনে যাননি।’ একই প্রশ্ন ইব্রাহিমোভিচকে করা হলে তিনি নাকি বলেছিলেন, ‘কিন্তু আমার বাবা তো বসনিয়ায় ছিলেন।’