ঢাকার মাঠে রেফারিরা কেন অনিরাপদ
সময়টা ভালো যাচ্ছে না দেশের ফুটবল রেফারিদের। খেলা পরিচালনার সম্মানীর জন্য মাঠের বাইরে যেমন আন্দোলন করতে হচ্ছে, তেমনি মাঠের ভেতরে হরহামেশাই মারধর ও লাঞ্ছনার শিকার হচ্ছে। গত ১৪ দিনে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের দ্বিতীয় স্তর চ্যাম্পিয়নশিপ লিগের (বিসিএল) তিনটি ম্যাচে রেফারি মারধরসহ অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে।
সর্বশেষ গত রোববার সিটি ক্লাব ও বাফুফে এলিট একাডেমির ম্যাচ শেষে রেফারি জিম এম চৌধুরী নয়ন মারধরের শিকার হয়েছেন, যা নিয়ে ফুটবল অঙ্গনে সমালোচনার ঝড় বইছে। একটি পেনাল্টিকে কেন্দ্র করে মারধরের ঘটনাটি ঘটে। এ বিষয়ে রেফারি নয়ন প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘পেনাল্টি দেওয়ায় সিটি ক্লাবের কয়েকজন কর্মকর্তা, খেলোয়াড় ও সমর্থক আমাকে মারধর করে। সত্যি এটা খুবই কষ্টদায়ক। অথচ আমি যে সিদ্ধান্ত দিয়েছি, সেটা শতভাগ সঠিক ছিল।’
এবার চ্যাম্পিয়নশিপ লিগ হচ্ছে পূর্বাচলের জলসিঁড়ি প্রকল্পের ফর্টিজ মাঠে। সেখানে গত পরশু সিটি ক্লাব ও বাফুফে এলিট একাডেমি ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা সময়ে সিটি ক্লাবের বিপক্ষে পেনাল্টি দিয়েছিলেন রেফারি নয়ন। সেই পেনাল্টি থেকে গোল করে ম্যাচে ১-১ সমতা আনে এলিট একাডেমি। সমতার পর অতিরিক্ত সময়ের আরও দুই মিনিটের খেলা মাঠে গড়ায়। সেই দুই মিনিট শেষে রেফারি নয়ন ম্যাচ শেষের বাঁশি বাজাতেই একদল মানুষ মাঠে ঢুকে তাঁকে কিল–ঘুষি মারতে থাকেন।
দেড় দশকের বেশি সময় ধরে ফুটবল ম্যাচ পরিচালনা করে আসছেন নয়ন। দীর্ঘ এই সময়ে বহু আন্তর্জাতিক ম্যাচেও রেফারির দায়িত্বে ছিলেন তিনি। কিন্তু এভাবে মার খাওয়ার তিক্ত অভিজ্ঞতা আগে কখনো হয়নি নয়নের, ‘১৮ বছর রেফারির দায়িত্ব পালন করছি। দেশ ও দেশের বাইরে কত ম্যাচ পরিচালনা করলাম। এ রকম বাজে অভিজ্ঞতা কখনো হয়নি।’
এমন ঘটনার শাস্তি চেয়ে রেফারি নয়ন বলেন, ‘আমি চাই এই ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত হোক। ভবিষ্যতে কোনো রেফারিকে যেন এভাবে মার খেতে না হয়। শৃঙ্খলা কমিটি নিশ্চয়ই যথাযথ শাস্তি ঘোষণা করবেন।’
যদিও সিটি ক্লাবের টিম ম্যানেজার আমির হোসেন বলছেন ভিন্ন কথা, ‘দেখুন রেফারি যেটা পেনাল্টি দিয়েছেন, সেটা কিছুতেই পেনাল্টি হতে পারে না। এরপর তিনি যা করেছেন, সেটাও তো মেনে নেওয়া যায় না। ম্যাচ শেষ হওয়ার আগেই বাঁশি বাজিয়ে দেন। এটা কেমন কথা!’ এই দুই কারণেই কী আপনারা রেফারিকে এভাবে মেরেছেন, এমন প্রশ্নের উত্তরে আমির বলেন, ‘না আমরা তো মারিনি, সিটি ক্লাবের সমর্থকেরা তাঁকে মারধর করেছেন।’
এর আগে গত ৩০ এপ্রিল একই মাঠে পিডব্লিউডি ও ওয়ারী ক্লাবের মধ্যকার ম্যাচেও অনাকাঙ্ক্ষিত এক ঘটনার দেখা মেলে। প্রথমার্ধ শেষে বিরতিতে কয়েকজনকে রেফারির ওপর চড়াও হতে দেখা যায়। এমনকি সহকারী রেফারির কাছ থেকে পতাকা কেড়ে নেওয়ার দৃশ্যও চোখে পড়ে। গাজীপুরে ফরাশগঞ্জ ও পিডব্লিউডি ম্যাচেও রেফারি আক্রমণের শিকার হন।
সম্প্রতি বিসিএলে ঘটে যাওয়া এসব ঘটনা নিয়ে বাফুফের লিগ কমিটির ডেপুটি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘ম্যাচের পরপরই ম্যাচ কমিশনার তাঁদের প্রতিবেদন জমা দেন। সেই প্রতিবেদন দেখে ডিসিপ্লিনারি (শৃঙ্খলা) কমিটি জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবেন।’
বাফুফের সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেনও অনেকটা লিগ কমিটির ডেপুটি চেয়ারম্যানের সুরে কথা বলেছেন, ‘তিনটি ঘটনাই ডিসিপ্লিনারি (শৃঙ্খলা) কমিটির কাছে রয়েছে। তারা বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে দ্রুতই যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।’