বুলেটপ্রুফ গাড়ি ছাড়া আফগানিস্তানে চলাফেরা করতে পারেন না রশিদ খান
মাঠে তাঁর মায়াবী লেগ স্পিনে ব্যাটসম্যানরা দিশাহারা হন। ২২ গজে তিনি এক রহস্যময় জাদুকর। কিন্তু সেই ‘সুপারস্টার’ রশিদ খান যখন নিজের দেশে ফেরেন, তখন মাঠের সেই দাপুটে ছবিটা পাল্টে যায় এক নিরেট বাস্তবতায়। মাঠের বাইরে নিজের দেশে তাঁর জীবনটা মোটেও সহজ নয়। চারপাশটা তখন আর ক্রিকেট মাঠের মতো চেনা থাকে না। নিজের দেশে চলাফেরা করতে রশিদকে ব্যবহার করতে হয় বুলেটপ্রুফ গাড়ি।
সম্প্রতি ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক কেভিন পিটারসেনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নিজের জীবনের এই অন্য রকম বাস্তবতার কথা তুলে ধরেছেন রশিদ। রশিদের কথা শুনে পিটারসেন তো রীতিমতো আকাশ থেকে পড়েছেন! বিদেশের মাটিতে বুক ফুলিয়ে দাপিয়ে বেড়ানো এই তারকাকে কেন নিজের দেশে এত কড়া পাহারায় থাকতে হয়?
রশিদ যখন পিটারসেনকে বলছিলেন, ‘সাধারণ গাড়িতে চড়ার তো কোনো সুযোগই নেই। আমাকে নিজের বুলেটপ্রুফ গাড়িতেই যাতায়াত করতে হয়।’ পিটারসেন যেন বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না। বিস্ময় নিয়ে জানতে চাইলেন, কেন এমন বাড়তি সতর্কতা?
রশিদ খুব শান্ত গলায় বুঝিয়ে বললেন, ‘হ্যাঁ, এটা আমার নিরাপত্তার জন্য খুব জরুরি। কেউ হয়তো আমাকে লক্ষ্য করে গুলি করবে না। কিন্তু হুট করে কোনো ভুল সময়ে যদি ভুল জায়গায় চলে যাই, তখন কী হবে? আমার গাড়িটা সব সময় ভেতর থেকে লক করা থাকে। মাঝে মাঝে মানুষ এমনকি গাড়ির দরজা খোলারও চেষ্টা করে।’
পিটারসেন এই কঠিন বাস্তবতাকে ‘বিস্ময়কর’ বলার পর রশিদ জানান, এই গাড়িটা তিনি বিশেষভাবে নিজের জন্যই তৈরি করিয়েছেন এবং আফগানিস্তানে অনেক মানুষই এখন নিরাপত্তার খাতিরে এমন গাড়ি ব্যবহার করে। দেশটির বর্তমান পরিস্থিতিতে এটা এখন খুব সাধারণ এক দৃশ্য।
নানগারহার প্রদেশের যুদ্ধবিধ্বস্ত পরিবেশ থেকে উঠে আসা এক কিশোর কীভাবে বিশ্ব ক্রিকেটের রাজপুত্র হয়ে উঠলেন, সে এক রূপকথার গল্প। কিশোর বয়সেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক, এরপর আফগানিস্তানের সর্বকনিষ্ঠ অধিনায়ক হওয়া—রশিদের উত্থান ছিল উল্কার মতো। আজ তিনি বিশ্বের বড় বড় সব ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের বড় বিজ্ঞাপন। আইপিএল থেকে শুরু করে অস্ট্রেলিয়ার বিগ ব্যাশ কিংবা ইংল্যান্ডের ‘দ্য হানড্রেড’—সবখানেই তিনি সমান জনপ্রিয়। বর্তমানে দুবাইকে নিজের দ্বিতীয় বাড়ি বানিয়ে নিয়েছেন রশিদ। সেখান থেকে আফগানিস্তান কাছে বলে যাতায়াত করতে সুবিধা হয়।
গ্ল্যামার আর আলোর ঝলকানি ঘেরা গ্লোবাল স্টার হওয়ার পরও নাড়ির টান ভোলেননি রশিদ। তবে তার এই স্বীকারোক্তি এক রূঢ় সত্যকে সামনে নিয়ে এল। কোটি মানুষের মুখে হাসি ফোটানো এই জাদুকরকে নিজভূমে পরবাসী হতে না হলেও, এক টুকরা শান্তির জন্য আশ্রয় নিতে হয় ইস্পাতের কঠিন আবরণে।