প্রতি রাত ২১ হাজার টাকার ফ্যান ভিলেজে ‘নরক–যন্ত্রনায়’ সমর্থকেরা

কাতারের একটি ফ্যান ভিলেজছবি: রয়টার্স

‘এটা এখনো নির্মাণাধীন। দিনের বেলায় এটা অনেকটা নরকের মতো। এটা মরুভূমি, এত গরম!’ আগামী দুই সপ্তাহ যে ঘরে থাকবেন, সেটি নিয়েই হাসতে হাসতে বিবিসিকে কথাগুলো বলছিলেন শোগো নাকাশিমহা। এরপর আরও যোগ করলেন, ‘আমি হাসছি কারণ, যদি না হাসি, আমাকে কাঁদতে হবে।’

বলা হচ্ছে কাতারের কুয়েতাইফান ফ্যান ভিলেজের কথা। যেখানে এক রাত থাকতে খরচ হবে ১৭৫ পাউন্ড। অর্থ্যাৎ, বাংলাদেশি মুদ্রায় ২১ হাজার টাকার বেশি। তবে গরমের কারণে এখানে থাকতে গিয়ে অনেক দর্শককে বিরূপ পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে।

কাতারের ঠিক উত্তরে কুয়েতাইফান দ্বীপের ফ্যান ভিলেজে যাঁরা শুরুর দিকে এসেছেন, তাঁদের একজন হচ্ছেন ৩১ বছর বয়সী জাপানি এই ফুটবল–ভক্ত। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ যখন মাঠে গড়ানোর অপেক্ষায়, তখনো এই ফ্যান ভিলেজের নির্মাণকাজ চলছে। যেটি নিয়ে এখানে অবস্থান করা লোকদের রয়েছে বিস্তর অভিযোগ।

আরও পড়ুন

নিজের অসহায়ত্বের কথা বলতে গিয়ে এই নাকাশিমহা আরও বলেন, ‘আমার থাকার জায়গা বদলানোর সুযোগ নেই। তাই যেভাবে আছি, সেটাকেই মেনে নিতে হবে এবং জাপানের ম্যাচের অপেক্ষায় থাকতে হবে। আমি এখানে আসি শুধু ঘুমাতে। সারা দিন বাইরে থাকি এবং শহরটাকে ঘুরে ঘুরে দেখি। আমি এখানে থাকতে চাই না।’

বেশির ভাগ অতিথি এই ভিলেজে আসার আগেই সবকিছু ঠিকঠাক না হওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছিল। সঙ্গে সারাক্ষণ নানা ধরনের নির্মাণাধীন কাজের ব্যস্ততা, আকাশছোঁয়া ভারী যন্ত্রপাতি এবং সেসবের শব্দও ভিলেজে থাকার জন্য সহায়ক নয়। এই ভিলেজে সব মিলিয়ে ১৮ শ তাঁবু খাটানো হয়েছে। যেখানে প্রতিটি ঘরে দুজন করে লোক থাকতে পারবেন।

কাতারের বিশ্বকাপ উপলক্ষ্যে তৈরি একটি ফ্যান ভিলেজের অন্দরমহল
ছবি: রয়টার্স

কাতারে খেলা দেখতে এসে এই ভিলেজে ঠাঁই নিয়েছেন পেদ্রো ও ফাতিমা দম্পতি। তাঁদের বাস স্পেনে হলেও তাঁরা গলা ফাটাবেন মেক্সিকোর জন্য। গত এপ্রিলেই তাঁরা বিয়ে করেছেন এবং কাতারে খেলা দেখতে আসা মূলত তাঁদের হানিমুনেরই অংশ। নাকাশিমহার মতো ভিলেজ নিয়ে অভিযোগ আছে এই দম্পতিরও।

আরও পড়ুন

পেদ্রো বলেন, ‘এখানে এক রাত থাকার খরচ ১৭৫ পাউন্ড (২১ হাজার ৪৪২ টাকা)। তবে সত্যি বলতে যেমনটা প্রত্যাশা করেছিলাম, তেমনটা হয়নি। এটা ফিফা বিশ্বকাপ, এখানে কিছুটা মানসম্পন্ন বিষয়-আশয় আপনি আশা করতেই পারেন। এটা অনেকটা নিচু মানের হোস্টেলের মতো।’ ক্ষোভ প্রকাশ করে পেদ্রো আরও যোগ করে বলেন, ‘এটা অনেকটা গ্রিনহাউজের মতো। তাই ফ্লাইটের কারণে ক্লান্ত থাকার পরও সকাল ৯টার পর আর ঘুমাতে পারিনি।’

পাতলা প্লাস্টিকে তৈরি এই তাঁবুগুলোতে দুটি করে বেড রয়েছে। সঙ্গে একটি ফ্যান ও বাতি রয়েছে। আর নিচে রয়েছে পাতলা কার্পেট। ব্যবস্থাপনার সমস্যার কথা উল্লেখ করে ফাতিমা বিবিসিকে বলেন, ‘এখানে কোনো সংগঠন নেই। কেউ কিছু জানেন না। দোকানগুলো বন্ধ, খাবার পানি নেই। এমন কিছুর জন্য টাকা দিইনি।’