আর্জেন্টিনার মেসি, ইতালির রিভা, বিশ্বকাপজয়ী অন্য সব দলের সর্বোচ্চ গোলদাতা কারা

১৯৭৪ বিশ্বকাপে হাইতির বিপক্ষে ইতালির ফরোয়ার্ড জিজি রিভা (ডানে)এএফপি

চলে গেলেন আন্তর্জাতিক ফুটবলে ইতালির সর্বোচ্চ গোলদাতা জিজি রিভা। গতকাল রাতে ৭৯ বছর বয়সে মারা গেছেন ইতালির হয়ে ৩৫ গোল করা সেন্টার ফরোয়ার্ড। মাত্র ৩৫ গোল করেই দেশের হয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতা—১৯৭০ বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলা রিভা অন্য রকম এক রেকর্ডেরও মালিক। রেকর্ডটি বিশ্বকাপ জেতা দলগুলোর সর্বোচ্চ গোলদাতাদের মধ্যে সবচেয়ে কম গোলের।

উরুগুয়ে, ইতালি, জার্মানি, ব্রাজিল, ইংল্যান্ড, আর্জেন্টিনা, ফ্রান্স ও স্পেন—এ পর্যন্ত বিশ্বকাপ জিতেছে এই আটটি দল। এর মধ্যে শুধু ইতালির কোনো খেলোয়াড়েরই আন্তর্জাতিক ফুটবলে ৫০ গোল নেই।

কেন নেই, সেই প্রশ্নের উত্তরে ইতালির খেলার ধরন চলে আসবে স্বাভাবিকভাবেই। ইতালি যে চিরকালই রক্ষণনির্ভর দল হিসেবে পরিচিত। ইতালি সর্বশেষ যেবার বিশ্বকাপ জিতেছে, সেই ২০০৬ বিশ্বকাপটাই বড় উদাহরণ হতে পারে। বিশ্বকাপ জয়ের পথে ৭ ম্যাচে ১২ গোল করে ইতালি। সর্বোচ্চ ২ গোল ছিল দুজনের—লুকা টনি ও মার্কো মাতেরাজ্জির। লুকা টনির পরিচয় না হয় স্ট্রাইকার, কিন্তু মাতেরাজ্জি? তিনি তো সেন্টারব্যাক ছিলেন ইতালির। ওই বছরের ফিফার বর্ষসেরা খেলোয়াড় ও ব্যালন ডি’অর পুরস্কারজয়ীর নামটাও প্রমাণ। দুটি পুরস্কারই যে জিতেছিলেন ফাবিও ক্যানাভারো—ইতালির আরেক সেন্টারব্যাক ও বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক।

‘৩৫’—সংখ্যাটাকে যত কম মনে করা হোক না কেন, জিজি রিভার ম্যাচপ্রতি গোলের সংখ্যা কিন্তু ঈর্ষণীয়। ৪২ ম্যাচেই ৩৫টি গোল করেছেন ১৯৬৫ থেকে ১৯৭৪ পর্যন্ত জাতীয় দলে খেলা রিভা। ম্যাচপ্রতি তাঁর গোল ০.৮৩। আন্তর্জাতিক ফুটবলে ১০০–এর বেশি গোলের মালিক মেসি-রোনালদোরাও ম্যাচপ্রতি গোলে রিভার চেয়ে অনেক পিছিয়ে।

বিভিন্ন দেশের সর্বোচ্চ গোলদাতাদের তালিকায় ম্যাচপ্রতি গোলে সর্বকালের র‍্যাঙ্কিংয়ে দশম স্থানে আছেন রিভা। বিশ্বকাপজয়ী দলের সর্বোচ্চ গোলদাতাদের মধ্যে রিভার ওপরে নেই কেউ। ম্যাচপ্রতি ০.৭০ গোল নিয়ে ইংল্যান্ডের হ্যারি কেইন রিভার নিকট প্রতিদ্বন্দ্বী। আর ম্যাচপ্রতি গোলে রিভার ওপরে থাকা নয়জনের মধ্যে একজনই আছেন, যাঁকে ফুটবলের সর্বকালের সেরাদের তালিকায় চোখ বুজে জায়গা দেওয়া যায়। সেই তিনি ফেরেঙ্ক পুসকাস। হাঙ্গেরির কিংবদন্তি ৮৫ ম্যাচে করেছেন ৮৪ গোল, ম্যাচপ্রতি প্রায় ০.৯৯ গোল!

আরও পড়ুন

দেশের সর্বোচ্চ গোলদাতাদের মধ্যে ম্যাচপ্রতি সর্বোচ্চ ১.৫ গোল গিনি-বিসাউয়ের নান্দো কোর। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত কো অবশ্য মাত্র ৬টি ম্যাচ খেলে করেছেন ৯ গোল। যাঁদের ৫০ গোলের বেশি আছে, তাঁদের মধ্যে ম্যাচপ্রতি সর্বোচ্চ গোল ডেনমার্কের পল নিয়েলসেনের। ১৯১০ থেকে ১৯২৫ সালের মধ্যে ডেনিশ খেলোয়াড় ১.৩৭ গড়ে ৩৮ ম্যাচে করেছেন ৫২ গোল।

সুয়ারেজ, মেসি ও নেইমার—তিন বন্ধু, বিশ্বকাপজয়ী তিন দেশের সর্বোচ্চ গোলদাতা

আন্তর্জাতিক ফুটবলে সর্বোচ্চ গোলদাতা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর ম্যাচপ্রতি গোল ০.৬২। ২০৫ ম্যাচে ১২৮ গোল পর্তুগিজ তারকার। রোনালদো যাঁর রেকর্ড ভেঙেছেন, সেই ইরানি তারকা আলী দাইয়ি ১৪৮ ম্যাচে করেছেন ১০৮ গোল, ম্যাচপ্রতি গোল ০.৭৩।

আন্তর্জাতিক ফুটবলে আর যাঁর ১০০ গোল আছে, সেই মেসির ম্যাচপ্রতি গোল ০.৫৯। আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক ১৮০ ম্যাচে করেছেন ১০৬ গোল।

আরও পড়ুন

মেসি-রোনালদোদের মতো বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ পেলে রিভা কোথায় থামতেন, কে জানে! এই মুহূর্তে বিশ্বকাপজয়ী ৮ দলের সর্বোচ্চ গোলদাতাদের মধ্যে একমাত্র রিভাই পৃথিবীর মায়া কাটিয়েছেন। বাকি ৭ দলের ৫টি সর্বোচ্চ গোলদাতা তো জাতীয় দলে খেলে চলেছেন এখনো। বাকি দুজনও এই শতাব্দীর ফুটবলার।

আর্জেন্টিনার হয়ে ১০৬ গোল করে মেসিই নির্বাচিত এই তালিকার শীর্ষে। দুইয়ে গত বছর গোলসংখ্যায় প্রয়াত ফুটবল কিংবদন্তি পেলেকে ছাড়িয়ে যাওয়া ব্রাজিল তারকা নেইমার।

বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোলদাতা মিরোস্লাভ ক্লোসা আন্তর্জাতিক ফুটবলে জার্মানির সর্বোচ্চ গোলদাতাও
এএফপি

৭১ গোল করে তিনে বিশ্বকাপ ফুটবল ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতা জার্মান স্ট্রাইকার মিরোস্লাভ ক্লোসা। ৫৯ গোল করে এই তালিকার ছয়ে আছেন স্পেনের দাভিদ ভিয়াও। তালিকায় আছেন অলিভিয়ের জিরু, লুইস সুয়ারেজ ও হ্যারি কেইন।

বিশ্বকাপজয়ী দলের সর্বোচ্চ গোলদাতা হলেও বিশ্বকাপ জয়ের অভিজ্ঞতা আছে চারজনের—মেসি, ক্লোসা, ভিয়া ও জিরু।