ফাহিমকে জার্সি দেওয়ার সময় কী বলেছিলেন অস্ট্রেলিয়ান ফুটবলার
অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ম্যাচটি বাংলাদেশের ফুটবলাররা ভুলেই যেতে চাইবেন। ৭ গোল হজমের দুঃসহ স্মৃতি কেই–বা মনে রাখতে চান! বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের দ্বিতীয় রাউন্ডে ‘আই’ গ্রুপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে মেলবোর্নে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৭-০ গোলের হারেও ফুটবলারদের অভিজ্ঞতা অমূল্য, এমনটাই মত জাতীয় দলের ফরোয়ার্ড ফয়সাল আহমেদ ফাহিমের। তিনি মনে করেন, অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ম্যাচের অনেক ভুলভ্রান্তি নিয়ে কাজ করেই লেবাননের বিপক্ষে দারুণ খেলেছে বাংলাদেশ। তবে ফাহিমের আবার আক্ষেপ আছে লেবাননের বিপক্ষে এত ভালো খেলেও না জিততে পারায়।
বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের প্রাথমিক রাউন্ডে ঢাকার হোম ম্যাচে মালদ্বীপের বিপক্ষে বাংলাদেশের জয়ের অন্যতম রূপকার ফাহিম। দারুণ গতিসম্পন্ন এই ফুটবলার অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ম্যাচটিকে দেখেন দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা হিসেবেই, ‘মেলবোর্নের মাঠ, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ আমাদের বিশ্বমানের ফুটবলের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। ম্যাচটা আমরা বড় ব্যবধানে হেরেছি ঠিকই, কিন্তু এ ম্যাচ থেকে আমরা আত্মবিশ্বাসও অর্জন করেছি। এমন ম্যাচ বেশি করে খেলতে চাই। বিশ্বমানের একটা দল কেমন হতে পারে, অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে খেলে আমরা শিখেছি।’
লেবাননের বিপক্ষে ম্যাচটিতে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে খেলার অভিজ্ঞতা কাজে এসেছে বলেই জানালেন ফাহিম, ‘ওই ম্যাচে যেসব ভুলত্রুটি হয়েছে, সেগুলো নিয়ে কোচ হাভিয়ের কাবরেরা কাজ করেছেন। সেই ভুলত্রুটি শুধরেই আমরা লেবাননের সঙ্গে ভালো খেলেছি। কিন্তু এ ম্যাচটা আমরা জিততেও পারতাম। না জেতার আফসোসটা থেকেই যাচ্ছে। দারুণ একটা সুযোগই এসেছিল আমাদের জন্য।’
অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে খেলতে নামার আগে ফাহিমের ধারণা ছিল, তাঁরা মাঠে স্লেজিংয়ের শিকার হবেন। অস্ট্রেলিয়ানরা প্রতিপক্ষকে কখনোই কোনো খেলাতেই ছেড়ে কথা বলেন না। ফাহিম সে কারণেই স্লেজিংয়ের আশঙ্কা করেছিলেন। কিন্তু বাস্তবে নাকি তেমন কিছু ঘটেনি, ‘আমি মনে করেছিলাম মাঠে প্রচুর গালিটালি হবে। কিন্তু মেলবোর্নের মাঠে নেমে দেখলাম, ওরা চুপচাপ খেলে গেল। ফুটবলে স্বাভাবিক যেসব কথা বিনিময় হয়, সেসবও হয়নি সেদিন। ওরা খুব নীরবে নিজেদের কাজটা করে গেছে। এটা আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে।’
অস্ট্রেলীয় ফুটবলার আজিজ বেহিচের সঙ্গে জার্সি বিনিময় করেছেন ফাহিম। সে সময়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি বলেছেন, ‘আমি নিজেই ওর কাছে গিয়েছিলাম। ওর জার্সি চেয়েছিলাম। বেহিচ একটু মজা করেই বলল, “আমি আমার জার্সি দেব, এক শর্তে, তোমারটাও আমাকে দিতে হবে।” আমি ওকে আমার জার্সি খুলে দিতেই সে তার জার্সি দিয়ে দিল।’
বেহিচের সঙ্গে ফুটবল নিয়েও কথা হয়েছে ফাহিমের, ‘খেলা শেষে ওরা সবাই মাটির মানুষ। জার্সি বদলানোর সময় বেহিচ আমাকে বলল, “আজ তোমরা একটু খারাপ খেলে ফেলেছ। সে জন্যই ৭ গোল। তবে আমি মনে করি, তোমরা বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের বাকি ম্যাচগুলোতে ভালো খেলবে। তোমাদের দেশে দেখা হবে আবার।”’
জাতীয় দলের জার্সিতে ১৬টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের এই ফুটবলার। অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ম্যাচটি তাঁর কাছে অন্য রকম যেকোনো বিচারেই, ‘আমরা সাধারণত সাফ অঞ্চলের দলগুলোর সঙ্গে বেশি খেলি। এর বাইরে তুর্কমেনিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, বাহরাইন, লেবানন, কুয়েত—এই দেশগুলোর বিপক্ষে খেলার অভিজ্ঞতা আমার আছে। অস্ট্রেলিয়া অন্য রকম দল। এরা বিশ্বমানের।’
ফাহিম এমন কথা কেন বলেছেন, সে ব্যাখ্যাও দিয়েছেন, ‘ওরা আপনাকে কোনো সুযোগই দেবে না। অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ভুল করে সেটি সামলে ওঠার কোনো সুযোগই পাওয়া যায় না। বল পায়ে রাখাও খুব কঠিন। স্কিলের তো কোনো তুলনাই হয় না। তবে আমি মনে করি, আমাদের বেশি করে অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, ইরান, সৌদি আরব, জাপানের মতো দলগুলোর সঙ্গে খেলা উচিত। এসব ম্যাচে যে অভিজ্ঞতা হবে, আমরা অনেক আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠব। আমরা তখন আমাদের কাছাকাছি মানের দলের সঙ্গে নিয়মিতই জিতব।’