পিএসজির শ্রেষ্ঠত্বকে চেলসি চ্যালেঞ্জ জানাবে দাবার চালে
বাজির দর, পণ্ডিতদের বিশ্লেষণ, পারফরম্যান্সের পার্থক্য, খেলোয়াড়দের ছন্দ, সাধারণ ফুটবলপ্রেমীদের ধারণা এবং আরও কোনো মানদণ্ড যদি থাকে—সবকিছুতেই আজ চেলসির চেয়ে পিএসজি অনেক অনেক এগিয়ে। বলা হচ্ছে ক্লাব বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচের কথা। যেখানে পিএসজির সময়ের সেরা ক্লাব হওয়ার পথে বাধা এনজো মারেসকার চেলসি।
মারেসকার চেলসি আসলে বাধার প্রাচীরটা কতটা কঠিন করে তুলতে পারবে পিএসজির সামনে? প্রথমে ফুটবল–পণ্ডিতদের বিশ্লেষণে নজর দেওয়া যেতে পারে। ফরাসি ক্লাবটির স্প্যানিশ কোচ তাঁর দলকে চলতি মৌসুমে খেলাচ্ছেন ৪–৩–৩ ফর্মেশনে। এই ফর্মেশনে পিএসজির খেলাটা মূলত গড়ে ওঠে মাঝমাঠে সময়ের অন্যতম তিন কার্যকর মিডফিল্ডার জোয়াও নেভেস, ভিতিনিয়া ও ফাবিয়ান রুইজের মাধ্যমে। চেলসির ইতালিয়ান কোচ মারেসকার বড় চ্যালেঞ্জ হবে ছন্দময় এই মাঝমাঠ ভাঙা। সে ক্ষেত্রে এত দিন ধরে দলকে খেলিয়ে আসা ৪–২–৩–১ ফর্মেশন থেকে সরে আসতে হতে পারে মারেসকাকে। কারণ, মাঝমাঠে পিএসজি বলের দখল এতটা বেশি রাখে যে চেলসি দুজন মিডফিল্ডার নিয়ে খেললে সেটা বড় ঝুঁকির কারণ হতে পারে।
শুধু কি পিএসজির মাঝমাঠে ভাঙন ধরানোর দিকে নজর দিলেই চলবে চেলসিকে! প্যারিসের দলটির চরম আক্রমণাত্মক দুই ফুলব্যাক আশরাফ হাকিমি ও নুনো মেন্দেসের সঙ্গে উইঙ্গার দেসিরে দুয়ে আর খিচা কাভারাস্কাইয়ার মধ্যে যে দারুণ সমন্বয়, সেটাকে থামাবেন কারা? এই দায়িত্ব মূলত চেলসির দুই ফুলব্যাক মার্ক কুকুরেয়া ও রিচ জেমসের। তাঁদের দুজনের খেলাও আক্রমণের সুরে বাঁধা। কিন্তু দুয়ে ও কাভারাস্কাইয়াকে আটকানোয় মনোযোগ দিতে গিয়ে তাঁরা দুজন আক্রমণের সময় পাবেন কি না, সেটাই বড় প্রশ্ন। এ ছাড়া দারুণ ছন্দে থাকা পিএসজির ফরাসি ফরোয়ার্ড উসমান দেম্বলেকে নজরবন্দী করে রাখাও বেশ কঠিন!
পিএসজি অতি আক্রমণাত্মক হলে তাদের জন্য ঝুঁকি হতে পারেন চেলসির আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড এনজো ফার্নান্দেজ। কিন্তু তাঁকে সামলাতে ব্রাজিলিয়ান দুই ডিফেন্ডার মারকিনিওস ও লুকাস বেরালদোকে যথেষ্ট বলে মনে করেন অনেক ফুটবল–পণ্ডিত। সব মিলিয়ে ফর্মেশন, কৌশল, শক্তিমত্তা আর ছন্দে বেশির ভাগের কাছেই আজকের ফাইনালে পিএসজি নিরঙ্কুশভাবে এগিয়ে। এ কারণেই বাজির দরের মতো সাধারণ ফুটবলপ্রেমীদের কাছেও ফেবারিট পিএসজি।
সব মিলিয়ে পিএসজির কোচ এনরিকেকে আজকের ম্যাচের আগে সবচেয়ে বেশি কাজ করতে হচ্ছে খেলোয়াড়দের পা মাটিতে রাখা নিয়ে। ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে তাঁর কথায় যেন সেটিই ফুটে উঠেছে, ‘যতটা মনে করা হচ্ছে, এই ম্যাচ আমাদের জন্য এতটা সহজ হবে না।’ চেলসির কোচ মারেসকা দাবা খেলাটা খুব পছন্দ করেন। ম্যাচটিকে তিনি দেখছেন সেভাবেই, ‘আমার কাছে ফুটবল দাবা খেলার মতো। প্রতিপক্ষ যখন মুভ করবে, তখন পাল্টা কিছু দিতে হবে। এই ম্যাচটাও দাবা খেলার মতো হবে।’
পিএসজিকে ফেবারিট বলা হচ্ছে বটে, তবে ফুটবল বড্ড খেয়ালি! কে, কবে, কখন আর কীভাবে যে কোন পরাক্রমশালীকে কাঁদাবে; কেউ তা জানে না। পিএসজির শ্রেষ্ঠত্বকে ফুটবলের সেই খেয়ালিপনাই আবার আটকে দেবে না তো!
বোঝাই যাচ্ছে, পিএসজির বিপক্ষে দাবা খেলার মতো কৌশল দিয়েই জিততে চাইবেন মারেসকা। এটা এনরিকেও জানেন, আর তিনি এর প্রতিষেধক–প্রতিরোধকও তৈরি রেখেছেন, ‘আমি চেলসিকে বিশ্লেষণ করেছি...ঐতিহাসিক এই মৌসুমটা দারুণভাবে শেষ করতে চাই।’
পিএসজিকে ফেবারিট বলা হচ্ছে বটে, তবে ফুটবল বড্ড খেয়ালি! কে, কবে, কখন আর কীভাবে যে কোন পরাক্রমশালীকে কাঁদাবে; কেউ তা জানে না। পিএসজির শ্রেষ্ঠত্বকে ফুটবলের সেই খেয়ালিপনাই আবার আটকে দেবে না তো!