খেলার দুনিয়ার সবচেয়ে বড় ব্র্যান্ড রোনালদো
মাঠের ভেতরে ও মাঠের বাইরের ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো যেন একই রকম। মাঠে নিয়মিত গোল করছেন, সামনে তাঁর ১০০০ গোলের ‘ড্রিমল্যান্ড।’ এ মুহূর্তে তাঁর সামনে কেউ নেই। তেমনি মাঠের বাইরের রোনালদোও অন্যদের চেয়ে এগিয়ে। খেলাধুলার জগতে এখন তিনি সবচেয়ে বড় ব্র্যান্ড।
এটা শুধু কথার কথা নয়, পর্তুগিজ ইনস্টিটিউট অব অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অ্যান্ড মার্কেটিংয়ের (আইপিএএম) গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে এ তথ্য। ২০২৫ সালে রোনালদো ব্র্যান্ডের মূল্য পৌঁছেছে ৮৫ কোটি ইউরোয়। আইপিএএম হিসাব করে জানিয়েছে, ২০২০ সালের পর পর্তুগিজ কিংবদন্তির ব্র্যান্ডের দাম ৩২৫ শতাংশ বেড়েছে।
অন্য অনেক ক্রীড়াবিদের মতো রোনালদোও ব্যবসা–বাণিজ্যে বেশ আগ্রহী। হোটেল, লাইফস্টাইল (আন্ডারওয়্যার, জুতা, পারফিউম), রেস্তোরাঁ, চুলের ক্লিনিক, জিম ও ফিটনেস এবং ব্যক্তিগত জেট সার্ভিসে এরই মধ্যে সফল ব্যবসায়ী তিনি। এসবের পাশাপাশি জার্মানির একটি ঘড়ির ব্র্যান্ড এবং পর্তুগালে পোর্সেলিন ও সিরামিকস উৎপাদনের সঙ্গেও জড়িত রোনালদো। সম্প্রতি এই পর্তুগিজ ফুটবলার আরও একটি ক্ষেত্রে নিজেকে জড়িয়েছেন। সেটি সিনেমায়। ব্রিটেনের খ্যাতিমান পরিচালক ম্যাথু ভনের সঙ্গে সতন্ত্র একটি ফিল্ম স্টুডিও চালু করেছেন আল নাসর তারকা। দুটি সিনেমা নাকি এরই মধ্যে পাইপলাইনে আছে।
গবেষণাপত্রটি অবশ্য রোনালদোর সিনেমায় নাম লেখানোর আগেই প্রকাশ করা হয়েছে। গবেষণাটি করা হয়েছে ‘স্পোর্টস রেপুটেশন’ ইনডেক্সের মাধ্যমে, যেখানে ছয়টি ক্ষেত্রে (আয়, সংবাদমাধ্যমে উপস্থিতি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, ক্রীড়াক্ষেত্রে সাফল্য, সামাজিক প্রভাব ও বিস্তার) মোট ২৮টি বিষয়/চলক (ভ্যারিয়েবলস) পর্যালোচনা করা হয়েছে। ২০১১ সালে রোনালদো ব্র্যান্ডের মূল্য ছিল ২ কোটি ৪৫ লাখ ইউরো। মাঠ ও মাঠের বাইরে এই ১৪ বছরে রোনালদোর পারফরম্যান্স তাঁর ব্র্যান্ডমূল্যকে শতকোটির কাছাকাছি নিয়ে গেছে।
আইপিএএম জানিয়েছে, আল নাসরে বছরে ২০ কোটি ইউরো পারিশ্রমিক পান রোনালদো। এর বাইরে নাইকি, ট্যাগ হিউয়ের ও লুইস ভুইতনের মতো বিশ্বখ্যাত সব ব্র্যান্ডের সঙ্গে বিজ্ঞাপনী চুক্তি হিসেবে আয় করেন আরও ১৫ কোটি ইউরো। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সবচেয়ে বেশি অনুসারীও তাঁর—১০০ কোটির ওপরে। এর মধ্যে শুধু ইনস্টাগ্রামেই তাঁর অনুসারীসংখ্যা ৬৪ কোটি ৮০ লাখ।
ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ফুটবলারের চেয়েও বেশি কিছু। জনমানুষের জীবনে বহু বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্ব, উদ্ভাবন ও প্রভাবের প্রতিফলন। তার বাজারমূল্যটা খেলাধুলা, সংবাদমাধ্যম ও বাণিজ্যিক সংশ্লিষ্টতার প্রতিফলন, যা প্রজন্মান্তরে বিস্তৃত।আইপিএএমের নির্বাহী পরিচালক দানিয়েল সা
এসবের বাইরেও রোনালদোর বৈশ্বিক প্রভাব কতটা, তা কিছু তথ্যে বোঝানো যায়—
* বিশ্বের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে তাঁকে নিয়ে বছরে ২ কোটি ২৩ লাখ প্রতিবেদন তৈরি হয়।
* সার্চ ইঞ্জিন গুগলে বছরে ১৮ কোটি ৭০ লাখ বার সার্চ করা হয়।
* অ্যামাজনে পাওয়া যায় এমন ৪০০০ বইয়ে তাঁকে উল্লেখ করা হয়েছে।
* বিজ্ঞানভিত্তিক ৬৩ হাজার নিবন্ধে তাঁর উপস্থিতি।
পাঁচটি ব্যালন ডি’অর ও পাঁচটি চ্যাম্পিয়নস লিগসহ মোট ৩১টি ট্রফি জিতেছেন রোনালদো। আর ব্যবসা–বাণিজ্যে রোনালদোর বিস্তারের কথা তো আগেই বলা হয়েছে। ক্লাব ও জাতীয় দল মিলিয়ে ৯৩১ গোল করা এ ফরোয়ার্ডকে নিয়ে হওয়া গবেষণাটির দায়িত্বে ছিলেন আইপিএএমের নির্বাহী পরিচালক দানিয়েল সা। তাঁর ভাষায়, ‘ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ফুটবলারের চেয়েও বেশি কিছু। জনমানুষের জীবনে বহু বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্ব, উদ্ভাবন ও প্রভাবের প্রতিফলন। তার বাজারমূল্যটা খেলাধুলা, সংবাদমাধ্যম ও বাণিজ্যিক সংশ্লিষ্টতার প্রতিফলন, যা প্রজন্মান্তরে বিস্তৃত।’
যে তিন কারণে রোনালদো ব্র্যান্ডের এমন ফুলেফঁপে ওঠা:
* ৩০৮ শতাংশ বেতন বৃদ্ধি
* স্পনসরশিপ থেকে আয়বৃদ্ধি ৪৩৫ শতাংশ
* ২০২০ সাল থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনুসারীসংখ্যা বৃদ্ধি ২৮০ শতাংশ
২০২০ সাল থেকে করা এ হিসাবে একই সময়ে রোনালদোর ম্যাচসংখ্যাও বেড়েছে ৫১ শতাংশ এবং গোলসংখ্যা বেড়েছে ৬০ শতাংশ। আইপিএএম মনে করে, আগামী বছরগুলোয় রোনালদোর ব্র্যান্ডমূল্য আরও বাড়বে।
বিষয়টি নির্ভর করছে আল নাসরে তাঁর চুক্তি নবায়ন, ২০২৬ বিশ্বকাপে খেলা এবং ব্যবসা–বাণিজ্য সম্প্রসারণের ওপর। একজন অ্যাথলেট, স্পনসর, ইনফ্লুয়েন্সার এবং বিনিয়োগকারী হিসেবে রোনালদো যেন সত্যিকার অর্থেই এক ‘বৈশ্বিক আইকন’, মাঠ ছাপিয়ে জনমানুষের জীবনেও যাঁর ভূমিকা অনেক বেশি।