আশ্চর্য সেই জয়ের গল্প ‘গেম অব দেয়ার লাইভস’

নিউইয়র্ক টাইমস ভেবেছিল ধাপ্পাবাজি। স্কোরলাইন প্রথমে জানার পর প্রচার করতে চায়নি। আর ইংলিশ সংবাদমাধ্যম ভেবেছিল, বেলো হরাইজন্তে থেকে যে খবর এসেছে, সেটা সম্ভবত ছাপার ভুল। ইংরেজ ভূ–ভাগ যেমন ফলের আশায় ছিল, তেমন কিছুই ছাপিয়েছিল তারা। ইংল্যান্ড ১০-১ গোলে জিতেছে।

ভুল। স্কোরলাইন ছিল ১-০। যুক্তরাষ্ট্রের অপেশাদার দলের কাছে হেরেছে তখনকার অন্যতম সেরা ও ফুটবলের জনক হওয়ার গর্বে বলীয়ান ইংল্যান্ড!

আরও পড়ুন

আশ্চর্য বললেও কম হয়, এই অত্যাশ্চর্য ফল ৭৫ বছর আগের সেই বিশ্বকাপে কেউ হয়তো ভাবেনি। যুক্তরাষ্ট্রের লেখক জিওফ্রে ডগলাস সেই আশ্চর্য গল্পই ১৯৯৬ সালে তুলে এনেছিলেন ‘দ্য গেম অব দেয়ার লাইভস’ বইয়ে। সে বছরই ডিসেম্বরে বইটির সিনেমার স্বত্ব কিনলেও টাকার জোগাড় হচ্ছিল না। অগত্যা স্বত্ব বেচে দেন আমেরিকান বিলিয়নিয়ার ও মেজর লিগ সকারের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন ফিলিপ আনশুৎজকে।

যুক্তরাষ্ট্রে ফুটবলে সবার আগ্রহ বাড়াতে সিনেমাটি বানানোর উদ্যোগ নেন আনশুৎজ। ডেকে পাঠান খেলা নিয়ে তত দিনে কাল্টে পরিণত হওয়া সিনেমা ‘হোসিয়ার্স’ ও ‘রুডি’র চিত্রনাট্য নির্মাতা অ্যাঞ্জেলো পিজ্জোকে। পরিচালনার ভার পড়ে ওই দুটি সিনেমারই পরিচালক ডেভিড এন্সপের কাঁধে।

ব্রাজিলের বেলো হরাইজন্তেতে সেদিন অবিশ্বাস্য জয় পেয়েছিল যুক্তরাষ্ট
আইএমডিবি

খেলাধুলায় যুক্তরাষ্ট্রের ‘আন্ডারডগ’ হিসেবে সাফল্য পাওয়া নিয়ে দারুণ সব সিনেমা আছে। আইস হকিতে ‘মিরাকল’, মুষ্টিযুদ্ধে যেমন ‘রকি’; পিজ্জো-এন্সপ জুটির এই সিনেমাটি সেই কাতারে থাকবে না।

আন্ডারডগ হিসেবে খাড়া পাহাড়ে বেয়ে ওঠার গল্প আছে, রোমাঞ্চে যত ঘাটতি। ব্যক্তি চরিত্রের জীবনে উত্থান-পতন ও ঝাঁকি উঠে এসেছে সামান্যই। সিনেমাটি অনেকটা প্রশংসাগাথাসূচক। হোসিয়ার্সে এন্সপ যেভাবে কোচ নরম্যান ডেলের হাতে একটি আন্ডারডগ দলের উঠে আসার গল্প চিত্রায়িত করেছেন, পিজ্জির এই চিত্রনাট্যেও তেমন রসদ ছিল। ১৯৫০ বিশ্বকাপে যুক্তরাষ্ট্রের সেই দলটি স্বপ্নের চেয়েও বেশি কিছু পূরণকে ডেলিভারি দিতে পারলেও এন্সপ এ যাত্রায় পারেননি। ইতিহাসগত কিছু ভুলও আছে। অবশ্য রুপালি পর্দায় গল্পের প্রয়োজনে ইতিহাসের অনেক কিছুই পাল্টে যাওয়া নতুন নয়।

আরও পড়ুন

মিজৌরির সেন্ট লুইসের ইতালিয়ান কমিউনিটির দ্য হিল অঞ্চল থেকে একটি দল এবং ম্যাসাচুসেটসের ফল রিভার থেকে একটি দল; এ দুটো গ্রুপ নিয়ে বানানো হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বকাপ দল। তাঁদের মধ্যে ছিলেন স্কুলশিক্ষক, গাড়িচালক, পত্রবাহক এসব পেশার মানুষ। এমন ডেভিড বনাম গোলিয়াথ যে ব্যক্তি চরিত্রে ফুটবলের প্রতি প্যাশনটুকু বোঝাতে যেমন মোচড়ের প্রয়োজন, পর্দায় এমন কিছু ছিল খুব সামান্যই। প্রেডিক্টেবল।

যেমন ধরুন, বিয়ের কারণে এক খেলোয়াড় ভেবে নেন তিনি ব্রাজিলে বিশ্বকাপ খেলতে যেতে পারবেন না। চিত্রনাট্যে সমস্যাটির সমাধান করা হয়েছে এভাবে, কোচ এ নিয়ে কথা বলেছেন খেলোয়াড়ের হবু শ্বশুরের সঙ্গে, এরপর সেই হবু শ্বশুর কথা বলেছেন তাঁর মেয়ের সঙ্গে; ব্যস, কত সহজেই অনুমেয়!

হলিউড তারকা জেরার্ড বাটলার আছেন এ সিনেমায়
আইএমডিবি

তবে দেশপ্রেম আছে। খুব ভালোভাবেই তা দেখানো হয়েছে। তবে আবহ সংগীতে উইলিয়াম রস চাইলে আরও প্রেরণাদায়ী কিছু বাজাতে পারতেন।

এন্সপ সিনেমাটি বানাবেন কি না, শুরুতে এ নিয়ে দ্বিধায় ছিলেন। হোসিয়ার্স ও রুডি যে ট্রেডমার্ক গড়ে দিয়েছে, সেখানে ফুটবলের কোনো কিছু পৌঁছাতে পারবে কি না, এ নিয়ে তাঁর নিজের মনেই প্রশ্ন ছিল। কিন্তু পিজ্জোর সঙ্গে কথা বলার পর কাস্টিং শুরু করেন ২০০২ সালে। অভিনেতা বাছাইয়ে ফুটবলীয় দক্ষতাও তাঁদের বিবেচনায় ছিল। ফ্রাঙ্ক বোর্গির চরিত্রে অভিনয় করা স্কটিশ অভিনেতা জেরার্ড বাটলারের শৈশব যেমন ফুটবল খেলে কেটেছে। অবশ্য তাঁর চরিত্রটি গোলকিপারের। অভিনেতা ওয়েস বেন্টলিই একমাত্র ব্যতিক্রম। যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় দলে খেলা দুজন ফুটবলারও আছেন ছোট দুটি চরিত্রে।

আরও পড়ুন

১ কোটি ৩০ লাখ ডলার বাজেটের এ সিনেমা রটেন টমেটোজে মাত্র ৩৫ জন সমালোচকের রিভিউয়ের ভিত্তিতে ২৬ শতাংশ স্কোর পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সিনেমা সমালোচক ও সিনেমার ইতিহাসবেত্তা রজার এবার্টের মতে, ‘সিনেমাটা মন্থর এবং দায়িত্ব সারার, যেখানে রোমাঞ্চের বদলে প্রশংসাগাথাই বেশি।’

সিনেমাটি সেভাবে সবার নজর কাড়তে পারেনি
আইএমডিবি

অথচ সেই বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের জয়কে ভাবা হয় খেলাধুলার ইতিহাসেই সবচেয়ে বড় চমকগুলোর একটি। এই চমকটা বুঝতে যেসব রসদের প্রয়োজন, সেসবের মিশ্রণটা ভালো হয়নি, এই যা!

দ্য গেম অব দেয়ার লাইভস/দ্য মিরাকল ম্যাচ (২০০৫)

পরিচালক: ডেভিড এন্সপ

চিত্রনাট্য: অ্যাঞ্জেলো পিজ্জো

অভিনয়ে: জেরার্ড বাটলার, প্যাট্রিক স্টুয়ার্ট, ওয়েস বেন্টলি, গ্যাভিন রসডেল

আইএমডিবি রেটিং: ৬.১/১০

রানটাইম: ১ ঘণ্টা ৪১ মিনিট