ইয়ামাল-রাফিনিয়া এবং ভিনি-এমবাপ্পেরা কে কেমন খেললেন
ম্যাচের স্কোরলাইন বলছে বার্সেলোনা ভালো খেলেছে। ৩–২ গোলে রিয়াল মাদ্রিদকে হারিয়ে জিতেছে কোপা দেল রের শিরোপা। তবে অতিরিক্ত সময়ে গড়ানো ম্যাচটিতে লড়াইয়ের ভেতরে ছিল অনেক লড়াই। কেউ বার্সেলোনার জয়কে ত্বরান্বিত করেছেন, কেউবা রিয়াল মাদ্রিদকে ডুবিয়েছেন। আবার দল যেমনই খেলুক, ব্যক্তিপর্যায়ে কেউ ভালো খেলেছেন, কেউবা মন্দ। গোলডটকমের সৌজন্যে দেখে নিতে পারেন দুই দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে কে কতটা ভালো বা মন্দ খেলেছেন। প্রতি ১০ নম্বরের মধ্যে কে কত পাওয়ার মতো।
বার্সেলোনা
ভয়েচেক সেজনি (৬/১০)
প্রথমার্ধে খুব বেশি করার দরকার পড়েনি। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই এমবাপ্পের বিপক্ষে চমৎকার একটি সেভ করেছেন। মোটের ওপর সেভ করেছেন পাঁচটি, বল রিকভারও ৫ বারই।
জুলস কুন্দে (৮/১০)
ম্যাচের ব্যবধান গড়েছেন, করেছেন বার্সেলোনার জয়সূচক তৃতীয় গোল। তবে জুলস কুন্দে নিজের মূল দায়িত্বেও ভালোই করেছেন। বিশেষ করে ভিনিসিয়ুস জুনিয়রকে একদমই জায়গা দেননি। যদিও রিয়ালের দ্বিতীয় গোলে চুয়ামেনিকে সামালও দিতে পারেননি। বল উদ্ধার করেছেন ৭ বার, হেডে বিপদমুক্ত করেছেন ২ বার।
পাউ কুবাসরি (৭/১০)
বার্সেলোনার প্রথম গোলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। জুড বেলিংহামের পাস থেকে কাটআউট করেছেন, যা পেদ্রির গোলে ভূমিকা রেখেছেন। এর বাইরে ৬ বার রক্ষণ থেকে বল উদ্ধার করেছেন, ৯৪টি পাস দিয়ে ৯১ শতাংশেই সফল হয়েছেন।
ইনিগো মার্তিনেজ (৬/১০)
ভিনিসিয়ুসের কাছে একটা পেনাল্টি হজমই করে ফেলেছিলেন, সৌভাগ্যবশত অফসাইডে বেচেছেন। রক্ষণে বল উদ্ধার করেছেন ১১ বার। আবার ফাইনাল থার্ডে সবচেয়ে বেশি ১১ বার পাসও দিতে পেরেছেন। ম্যাচে দুই দল মিলিয়ে সবচেয়ে বেশি ১১৫ বার বলে স্পর্শও তাঁরই।
জেরার্দ মার্তিন (৬/১০)
একটা হলুদ কার্ড দেখেছেন, তবে রদ্রিগোকে অকার্যকর রাখতে ভূমিকা রেখেছেন। ৩ বার বল উদ্ধার, ৩ বার বল বিপদমুক্ত করেছেন।
পেদ্রি (৭/১০)
প্রথমার্ধে বক্সের বাইরে থেকে জোরালো শটে বার্সাকে এগিয়ে দিয়েছিলেন। যে গোলের আক্রমণ তৈরির কাজও তাঁর পায়েই শুরু। তবে দ্বিতীয়ার্ধে মাদ্রিদের শরীরনির্ভর মাঝমাঠের সঙ্গে লড়াইয়ে বেগ পেতে হয়েছে। সুযোগ তৈরি করেছেন তিনটি।
ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ং (৫/১০)
শুরুতে ভালোই করেছেন, কিন্তু পরে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলেন। দ্বিতীয়ার্ধে এমবাপ্পে তাঁকে বারবার পরীক্ষায় ফেলেছেন। তাঁর কারণেই রিয়াল ফ্রি কিক পেয়েছে, যা কাজে লাগিয়ে সমতা এনেছেন এমবাপ্পে।
দানি ওলমো (৬/১০)
আক্রমণভাগে খুব একটা হুমকি হতে পারেননি। ফরোয়ার্ড হলেও ফাইনাল থার্ডে পাস মাত্র একটি। এক ঘণ্টা পরই কোচ তাঁকে উঠিয়ে নিয়েছেন।
লামিনে ইয়ামাল (৮/১০)
দুটি গোলে অ্যাসিস্ট করেছেন। প্রথমটি পেদ্রির গোলে, পরেরটি তরেসের গোলে। সব মিলিয়ে ফাইনাল থার্ড বল পাস ৭ বার। অবশ্য দুই অ্যাসিস্টের মাঝে দ্বিতীয়ার্ধের খানিকটা সময় নিষ্প্রভও ছিলেন।
ফেরান তরেস (৬/১০)
চোটের কারণে না থাকা রবার্ট লেভানডফস্কির অভাব পূরণ করতে পারেননি বেশির ভাগ সময়। তবে দ্বিতীয়ার্ধে বার্সেলোনাকে ২-২ সমতায় আনা গোলটি তাঁর। সুযোগ তৈরি করেছেন ৩ বার।
রাফিনিয়া (৫/১০)
দ্বিতীয়ার্ধে দুটি সুযোগ নষ্ট করেছেন পোস্টের বাইরে মেরে; যার একটিও কাজে লাগাতে পারলে রিয়াল ৯০ মিনিটের খেলায় ম্যাচে ফিরতে পারত না। মোট ৭টি শট নিয়ে লক্ষ্যে রাখতে পেরেছেন মাত্র ৩টি।
ফারমিন লোপেজ (৬/১০)
বদলি হিসেবে নেমেছিলেন। তবে রিয়ালের আক্রমণের বিপক্ষে শক্ত প্রতিরোধ হতে পারেননি। অতিরিক্ত সময়ের খেলায় ঘুরে দাঁড়িয়েছেন, গোলের সুযোগও তৈরি করেছেন।
রিয়াল মাদ্রিদ
থিবো কোর্তোয়া (৫/১০)
পেদ্রির গোলের বেলায় তাঁর কিছুই করার ছিল না। ম্যাচে মোট ৬টি সেভ করেছেন, হজম করেছেন ৩টি গোল।
লুকাস ভাসকেজ (৬/১০)
রাইটব্যাকও শক্ত অবস্থানে ছিলেন। রাফিনিয়াকে ভালো সামাল দিয়েছেন। রক্ষণের খেলোয়াড় হয়ে একটি সুযোগও তৈরি করেছেন।
রাউল আসেনসিও (৫/১০)
দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা সময়ে খুব বাজে একটি চ্যালেঞ্জ করেছেন। সৌভাগ্যবশত পেনাল্টি থেকে বেঁচেছেন। ডুয়েলে জিতেছেন একবার, বল হারিয়েছেন চারবার।
আন্তনিও রুডিগার (৬/১০)
ফেরান তরেস যে গোলে বার্সাকে সমতায় ফিরিয়েছেন, সেটায় খেই হারিয়ে ফেলেছেন। মোটের ওপর রক্ষণে কার্যকরই ছিলেন। দুটি ব্লক, সাতবার বল বিপদমুক্ত, পাঁচবার বল উদ্ধার। শেষ দিকে ডাগআউট থেকে অতি উত্তেজিত হয়ে লাল কার্ড দেখেছেন।
ফারলাঁ মেন্দি
শুরুর একাদশে নামলেও ১০ মিনিটের মধ্যে পায়ে চোট পেয়ে মাঠ ছেড়ে গেছেন। কিছু করার ছিল না।
অরেলিয়েঁ চুয়ামেনি (৮/১০)
রিয়ালের কাছে যখন বল ছিল, ভালো খেলেছেন। উদ্ধারও করতে পেরেছেন। তবে খোলা জায়গায় স্বচ্ছন্দ ছিলেন না। হেডে রিয়ালের দ্বিতীয় গোলটি তাঁরই। চারবার বল ফাইনাল থার্ডে ফেলেছেন। তিনটি ট্যাকলের তিনটিই জিতেছেন।
ফেদেরিকো ভালভার্দে (৬/১০)
বেশির ভাগ সময়ই সতীর্থদের ফাঁকা করে যাওয়া জায়গা সামাল দিতে হয়েছে। ফাইনাল থার্ডে বল পাঠিয়েছেন চারবার, বার্সার বক্সে বলে পা লাগাতে পেরেছেন একবার।
দানি সেবায়োস (৫/১০)
৫৫ মিনিট মাঠে ছিলেন। বলে স্পর্শ ২৮ বার, তবে শট একটিও নয়। মোটের ওপর নিজের ছায়া হয়ে থেকেছেন।
জুড বেলিংহাম (৮/১০)
সাম্প্রতিক সময়ের তুলনায় ভালো খেলেছেন। ম্যাচে সবচেয়ে বেশি ১৪টি ডুয়েল জিতেছেন, ট্যাকলও জিতেছেন সবচেয়ে বেশি (৪ বার)। এমনকি ম্যাচে সবচেয়ে বেশি পাঁচবার ফাউলের শিকারও হয়েছেন এই মিডফিল্ডার।
ভিনিসিয়ুস জুনিয়র (৮/১০)
প্রথমার্ধে বার্সার হাইলাইন ডিফেন্সের বিপক্ষে ভালো খেলতে পারেননি। তবে দ্বিতীয়ার্ধে কার্যকর ছিলেন। একটি সুযোগ তৈরি করেছেন, একটি বড় সুযোগ নষ্ট করেছেন। মোট ৬টি শট নিয়ে লক্ষ্যে রেখেছেন ৪টি। ৮৯তম মিনিটে চোটের কারণে মাঠ ছেড়ে যেতে হয়েছে।
রদ্রিগো (৪/১০)
ম্যাচের মধ্যে থেকেও ছিলেন না। মাত্র ৮টি পাস ঠিকঠাক সম্পন্ন করতে পেরেছেন। ডুয়েলে বল হারিয়েছেন চারবার। বিরতির সময়ই তুলে নেওয়া হয়েছে।
ফ্রানস গার্সিয়া (৬/১০)
শুরুতে মেন্দি উঠে যাওয়ায় নামানো হয়েছিল। তবে ইয়ামালকে একদমই সামলাতে পারেননি। তিনটি ডুয়েল জিতে আরও তিনটিতে হেরেছেন।
কিলিয়ান এমবাপ্পে (৮/১০)
সম্পূর্ণ ফিট না থাকায় প্রথমার্ধে নামানো হয়নি। তবে বিরতির পর নেমেই ম্যাচের গতিপথ পাল্টে দিয়েছেন। দুবার গোলের কাছাকাছি গিয়েছিলেন, এরপর একটিতে রিয়ালকে সমতা এনে দিয়েছেন।
লুকা মদরিচ (৬/১০)
বদলি নেমে নিয়ন্ত্রিত ফুটবলই খেলেছেন। তবে তাঁর ভুল পাসই শেষ পর্যন্ত কুন্দের গোল হয়ে বার্সা জিতেছে। পাঁচটি ডুয়েল জিতলেও চারটিতে হেরেছেন।