অবিশ্বাস্য নাটকীয়তার পর শেষ ষোলোয় এমবাপ্পের পিএসজি

শেষ ষোলোয় এমবাপ্পের পিএসজিটুইটার

‘রোলার কোস্টার রাইড’ বুঝি একেই বলে! চ্যাম্পিয়নস লিগের ‘মৃত্যুকূপ’ খ্যাত গ্রুপ ‘এফ’-এ আজ দেখা গেছে দৃশ্যপট পরিবর্তনের অবিশ্বাস্য এক খেলা। আলাদা দুটি ম্যাচে নিজেদের নকআউট ভাগ্য নির্ধারণের লক্ষ্যে মাঠে নেমেছিল পিএসজি, নিউক্যাসল ও এসি মিলান। ডর্টমুন্ডে আগেই নকআউট নিশ্চিত করা বরুসিয়া ডর্টুমন্ডের ‍মুখোমুখি হয় পিএসজি। আর নিউক্যাসলের মাঠে আতিথ্য নেয় এসি মিলান। পিএসজির জন্য সমীকরণ ছিল জিতলেই শেষ ষোলো।

তবে হেরে গেলে বা ড্র করলে বিপদ। সেক্ষেত্রে নিউক্যাসল-এসি মিলান ম্যাচের ফলের দিকে তাকিয়ে থাকতে হতো তাদের। এমন ‘যদি’, ‘কিন্তু’র ম্যাচে যতটা নাটক হতে পারত সবই হয়েছে। প্রথমার্ধে একের পর এক ‍সুযোগ হাতছাড়া করে পিএসজি গোল না পেলেও, অন্য ম্যাচে এগিয়ে যায় নিউক্যাসল। যা তাদের এগিয়ে দেয় নকআউটের পথে। এরপর দ্বিতীয়ার্ধে পিএসজি গোলে খেয়ে ফেললে তাদের পথটা আরও কঠিন হয়ে যায়।

আরও পড়ুন

কিন্তু এরপরই আরেক নাটক। পিএসজি ও এসি মিলান দুই দলই সমতায় ফেরে। শেষ ষোলোর পথে এগিয়ে যায় পিএসজি। কিন্তু নাটক তখনো শেষ নয়। এর মধ্যে অফসাইডের ফাঁদে বাতিল হয় এমবাপ্পের গোল। অন্য দিকে নিউক্যাসলের স্বপ্ন ভেঙে এগিয়ে যায় মিলান। শেষ কয়েক মিনিটে সমীকরণ ছিল যদি ডর্টমুন্ড ম্যাচে এগিয়ে যায়, তবে পিএসজি ও নিউক্যাসলের বিদায় ঘণ্টা বাজিয়ে পরের পর্বে যাবে মিলান। রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ে অবশ্য সেই গোলটি পায়নি ডর্টমুন্ড। ১-১ সমতায় ম্যাচ শেষ হওয়ায় ডর্টমুন্ডের সঙ্গে গ্রুপ রানার্সআপ হয়ে শেষ ষোলোয় গেছে পিএসজি।

অন্য ম্যাচে নিউক্যাসলের বিপক্ষে ২-১ গোলে জিতেও পরের পর্বে যাওয়া হয়নি মিলানের। এই ম্যাচ শেষে পিএসজি ও মিলানের পয়েন্ট ছিল সমান (৮)। এমনকি মুখোমুখি লড়াইয়েও ছিল সমতা। তবে মুখোমুখি লড়াইয়ে গোল ব্যবধানে এগিয়ে ছিল পিএসজি, যা তাদের পৌঁছে দিয়েছে নকআউটে। মিলান অবশ্য শেষ ষোলোয় যেতে না পারলেও ইউরোপা লিগের টিকিট পেয়েছে।

ঘরের মাঠে ম্যাচের শুরুতে আক্রমণে গিয়ে দারুণ একটি সুযোগ তৈরি করে বরুসিয়া ডর্টমুন্ড। তবে শেষ মুহূর্তে শট নিতে ব্যর্থ হওয়ায় সুযোগটি কাজে লাগাতে পারেনি তারা। ৬ মিনিটে বাঁ প্রান্ত দিয়ে দারুণ একটি আক্রমণ তৈরি করে পিএসজি। এমবাপ্পেকে ঘিরে তৈরি হওয়া এই আক্রমণ কাছাকাছি গিয়েও অল্পের জন্য আলোর মুখ দেখেনি।

১২ মিনিটে বক্সের বেশ বাইরে থেকে চেষ্টা করেন ভিতিনিয়া। তবে গোলরক্ষকের দৃঢ়তায় বেঁচে যায় ডর্টমুন্ড। একটু পর মারিওস উলফের সামনে সুযোগ আসে ডর্টমুন্ডকে এগিয়ে দেওয়ার, মেলেনি জালের দেখা। ১৬ মিনিটে রান্দাল কোলো মুয়ানির পাসে লি কাং-ইন যে গোল মিস করেছেন তাঁর কোনো ব্যাখা হয় না। গোলরক্ষককে একা পেয়েও গোল করতে পারেননি কাং-ইন। পরের মিনিটে অবিশ্বাস্য দক্ষতায় এমবাপ্পের গোলের প্রচেষ্টা রুখে দেন নিকোলাস সুলে।

এই গোলে স্বপ্ন দেখেছিল নিউক্যাসল
টুইটার

এ সময় দারুণভাবে বল ধরে গোলরক্ষককে কাটিয়ে জালের দিকে বল ঠেলে দেন এমবাপ্পে। কিন্তু অবিশ্বাস্যভাবে স্লাইড করে লাইন থেকে বল ঠেকিয়ে নিশ্চিত গোল রুখে দেন এ জার্মান ডিফেন্ডার। গোল না পেলেও এ সময় ম্যাচের পুরো নিয়ন্ত্রণ চলে যায় পিএসজির দখলে। আক্রমণের পর আক্রমণে ডর্টমুন্ড রক্ষণকে রীতিমতো নাচিয়ে তোলেন এমবাপ্পেরা। তেমনই এক আক্রমণে ব্র্যাডলি বারকোলার শট লাগে পোস্টে। ২৪ মিনিটে দারুণভাবে বল নিয়ে ডর্টমুন্ড বক্সে ঢুকেও অল্পের জন্য গোল পাননি কোলো মুয়ানি। গোলরক্ষককে একা পেয়ে কোলো মুয়ানির বাড়ানো বল পোস্ট ঘেঁসে বাইরে চলে যায়।

২৬ মিনিটে স্রোতের বিপরীতে সুযোগ আসে ডর্টমুন্ডের সামনে। কিন্তু মার্কো রিওসের শট দারুণ দক্ষতায় ঠোকন পিএসজি গোলরক্ষক। ৩২ মিনিটে ফের পিএসজি রক্ষণে হুমকি তৈরি করে ডর্টমুন্ড। কিন্তু এবারও হতাশ হতে হয় জার্মান ক্লাবটিকে। এদিকে পিএসজি দারুণ সব সুযোগ হাতছাড়া করে গোল না পেলেও এসি মিলানকে চাপে রেখে অন্য ম্যাচে এগিয়ে যায় নিউক্যাসল।

আরও পড়ুন

ইংলিশ ক্লাবটির হয়ে ৩৩ মিনিটে গোল করেন জোয়েলিংটন। নিউক্যাসল এগিয়ে যাওয়ায় পিএসজিকে তখন জিততেই হতো। ৪৫ মিনিটে ফের এগিয়ে যাওয়ার দারুণ একটি সুযোগ এসেছিল কোলো মুয়ানির সামনে। কিন্তু এবারও গোলরক্ষককে একা পেয়ে বল জালে জড়াতে ব্যর্থ হন ফরাসি তারকা। প্রথমার্ধের শেষ মুহূর্তে ম্যাট হামেলসও ডর্টমুন্ডের হয়ে গোল করতে ব্যর্থ হলে সমতা নিয়েই বিরতিতে যায় দুই দল। দুই দল আশ্চর্যজনকভাবে সহজ কিছু হাতছাড়া করায় গোল না হলেও ম্যাচে রোমাঞ্চ একটুও কম ছিল না।

বিরতির পরও আক্রমণ প্রতি-আক্রমণে দুই দলই চেষ্টা করে গোল আদায়ের। ৫ মিনিটের মধ্যে দুই দলের সামনেই আসে গোলের সুযোগ। কিন্তু যথারীতি প্রথমার্ধের মতো এ অর্ধেও চলছিল গোল মিসের মহড়া। তবে নিজেদের রক্ষণের ভুলে শেষ পর্যন্ত গোল খেয়েই বসে পিএসজি। ৫১ মিনিটে গোল করেন করিম এদেইয়েমি। ডর্টমুন্ডের এই গোলে সিগনাল ইদুনা পার্কের চেয়ে অবশ্য নিউক্যাসলের মাঠ সেন্ট জেমস পার্কে উৎসব হয়েছে বেশি। তবে ৫ মিনিটে সেই উৎসবে কিছুটা জল ঢেলে দেন ১৭ বছর বয়সী পিএসজি মিডফিল্ডার ওয়ারেন জাইরে-এমরি। তাঁর গোল দারুণভাবে আশা ফিরিয়ে আনে পিএসজি শিবিরে।

এর মধ্যে নিউক্যাসল শিবিরকে হতাশায় মুড়ে দেন এসি মিলানের ক্রিস্টিয়ান পুলিসিক। দ্বিতীয়ার্ধে ফেরার চেষ্টায় থাকা এসি মিলানকে গোল এনে দেন এই মার্কিন ফু্টবলার। এই গোলে ফের সুবিধাজনক অবস্থানে পৌঁছে যায় পিএসজি। ৭১ মিনিটে এমবাপ্পের শট অল্পের জন্য পোস্টের বাইরে দিয়ে যায়। একটু পর এমবাপ্পে গোল করে উৎসবে মাতলেও সেটি থামে অফসাইডের ফাঁদে। এরপর শেষ দিকে লিড নিয়ে রোমাঞ্চ আরও বাড়ায় মিলান। তবে শেষ পর্যন্ত ডর্টুমন্ড জয়সূচক গোল না পাওয়ায় এমবাপ্পের পিএসজিই গেছে শেষ ষোলোয়।