যে ৮ কিশোর বদলে দিতে পারেন আগামী দিনের ফুটবল

ফিফা অনূর্ধ্ব–১৭ বিশ্বকাপ জেতার পর পর্তুগালের খেলোয়াড়দের উল্লাসফিফা

প্রতিভারা কখনো কখনো বেড়ে ওঠেন নিভৃতে। তবে বড় মঞ্চ পেলে নিজেদের জাত চেনাতে ভোলেন না। সম্প্রতি কাতারে হয়ে যাওয়া অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপ যেন ছিল এমন অনেক প্রতিভার জন্য নিজেদের চেনানোর মঞ্চ।

ফাইনালে অস্ট্রিয়াকে ১-০ গোলে হারিয়ে বয়সভিত্তিক এই বিশ্বকাপের শিরোপা জিতেছে পর্তুগাল। ইউরোপের বড় বড় ক্লাবগুলোর একাডেমি ও রিক্রুটমেন্ট বিভাগের প্রতিনিধি হয়ে প্রায় ১০০ স্কাউট উপস্থিত ছিলেন এই টুর্নামেন্টে। সন্দেহ নেই, তাঁদের অনেকেই টুর্নামেন্ট শেষে হাসিমুখে ফিরেছেন পকেটে ছোট কিংবা বড় কোনো তালিকা নিয়ে। সেই তালিকায় থাকতে পারেন, এমন আটজন ফুটবলারকে বেছে নিয়েছে ইএসপিএন। নিজেদের প্রতিভা দিয়ে যাঁরা আলাদা করে নজর কেড়েছেন, আভাস দিয়েছেন শিগগিরই আরও বড় মঞ্চে নিজেদের মেলে ধরার।

ইওহানেস মোসার

অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার, লিফারিং, অস্ট্রিয়া

এই আসরের সবচেয়ে বড় আবিষ্কার বলা যায় মোসারকে। অস্ট্রিয়াকে ফাইনালে নিয়ে যাওয়ায় বড় ভূমিকা তাঁর। গোল করার সহজাত প্রবৃত্তি, বল পায়ে না থাকা অবস্থায়ও দুর্দান্ত মুভমেন্ট এবং পেনাল্টি কিকের সময় দারুণ ঠান্ডা মাথা—সব মিলিয়ে নিজেকে আলাদা করে চিনিয়েছেন। পেনাল্টি থেকে ৩টি গোল করেছেন, এর মধ্যে একটি ছিল দারুণ ‘পানেনকা’।

ইওহানেস মোসার
এক্স/সালজবুর্গ

সালজবুর্গ একাডেমির ছাত্র, বর্তমানে অস্ট্রিয়ার দ্বিতীয় স্তরের দল লিফারিংয়ে খেলেন অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার বা উইঙ্গার হিসেবে। সাধারণত বাঁ দিক থেকে ভেতরে ঢুকে আক্রমণ করেন। ৮ গোল করে হয়েছেন টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা। শুধু গোলই নয়, দূরপাল্লার শট, এক টাচে ফিনিশ, বুদ্ধিদীপ্ত পাস এবং অক্লান্ত পরিশ্রম তাঁকে অন্যদের চেয়ে আলাদা করেছে।

আনিসিও কাব্রাল

সেন্টার ফরোয়ার্ড, বেনফিকা, পর্তুগাল

পর্তুগালের আক্রমণভাগে ভরসা ছিলেন কাব্রাল। জোরালো শট, বাঁ পায়ের নিখুঁত ফিনিশিং আর হেড—সব মিলিয়ে দারুণ নির্ভরযোগ্য। বেনফিকা একাডেমির খেলোয়াড়, এখনো মূল দলে সুযোগ পাননি। কিন্তু এই আসরে প্রমাণ করেছেন, ভবিষ্যতে হয়তো তিনিই হবেন পর্তুগালের নতুন ‘নাম্বার নাইন’। ৭ গোল করেছেন কাতারে, এর মধ্যে ফাইনালের জয়সূচক গোলও আছে। ডিফেন্ডারদের ফাঁকি দিয়ে দৌড়, বক্সে জায়গা তৈরি করে ফিনিশ, সবই করেছেন বেশ সহজে। তাঁর শারীরিক শক্তি, দৌড়ানোর ক্ষমতা আর টেকনিক এরই মধ্যে ইউরোপের বড় ক্লাবগুলোর নজরে এসেছে।

আনিসিও কাব্রাল
ইনস্টাগ্রাম/আনিসিও কাব্রাল

রেইগান হেসকি

অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার, ম্যানচেস্টার সিটি, ইংল্যান্ড

ইংল্যান্ডের সেরা পারফর্মার। যদিও তাঁর দল শেষ ষোলোতে অস্ট্রিয়ার কাছে ৪–০ গোলে হেরে গেছে। তবে হেসকি ওইটুকু সময়ের মধ্যেই নিজেকে চিনিয়ে গেছেন। উইংয়ের বাঁ দিকে খেলেন, ডান পায়ের খেলোয়াড়। প্রথম টাচ দুর্দান্ত, গতি বেশ ভালো, শট নিখুঁত।

রেইগান হেসকি
ইনস্টাগ্রাম/রেইগান হেসকি

হেসকি বিশ্বকাপে করেছেন ৪ গোল। সাহসী হেড, ডিফেন্ডারদের ফাঁকি দিয়ে নিচু শট, গোলকিপারের পায়ের ফাঁক দিয়ে ফিনিশ, আবার ৪০ মিটার দৌড়ে ঠান্ডা মাথায় গোল, দেখিয়েছেন অনেক কিছু। সাবেক লিভারপুল ও ইংল্যান্ড ফরোয়ার্ড এমিল হেসকির ছেলে। অস্ট্রিয়ার কাছে বড় ব্যবধানে হারের দিনে তিনি ছিলেন ইংল্যান্ডের সেরা খেলোয়াড়।

সেইদু দেম্বেলে

অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার, জেএমজি একাডেমি, মালি

বলে কী দারুণ স্পর্শ! ড্রিবলিং দেখে মনে হয় বল যেন তাঁর শরীরেরই অংশ। সম্ভবত টুর্নামেন্টের সবচেয়ে সৃজনশীল খেলোয়াড় ছিলেন সেইদু দেম্বেলে। খেলেছেন মূলত ‘নাম্বার টেন’ হিসেবে, কখনো কখনো ডান দিকেও। পায়ের কাজ দুর্দান্ত।

হঠাৎ দিকবদল, দূর থেকে শট, লাইন ভেঙে পাস দেওয়া, ভিড়ে বল ধরে রাখা—সব মিলিয়ে একেবারে পরিপূর্ণ প্লেমেকার। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মালির প্রথম ম্যাচে ১৭ মিনিটে তাঁর ঠান্ডা মাথার গোলেই দল এগিয়ে যায়। আক্রমণ গড়ে দেওয়ায় এই টুর্নামেন্টে তাঁর মতো আর কেউ ছিলেন না।

সেইদু দেম্বেলে
ইনস্টাগ্রাম/সেইদু দেম্বেলে

জোসে নেতো

লেফট–ব্যাক, বেনফিকা, পর্তুগাল

পর্তুগালের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় ছিলেন বেনফিকার এই লেফট ব্যাক। ১৮৪ সেন্টিমিটার উচ্চতা, খেলতে পারেন সেন্টার–ব্যাক হিসেবেও। শক্তিশালী শরীর, দীর্ঘক্ষণ দৌড়াতে পারেন, বাঁ পায়ের ক্রসও চমৎকার। রক্ষণে খুবই মনোযোগী, পাশাপাশি আক্রমণেও সমান কার্যকর।

মরক্কোর বিপক্ষে ৬–০ গোলের জয়ে করেছেন ২ গোল ও ২ অ্যাসিস্ট। সুইজারল্যান্ড ও নিউ ক্যালেডোনিয়ার বিপক্ষেও গোল করেছেন। একটু দেরিতে ব্যাক পোস্টে ঢোকেন। দৌড় শুরু করেন একেবারে সঠিক সময়ে। সব মিলিয়ে মনে হয়, খুব তাড়াতাড়ি তাঁকে মূল দলে দেখা যাবে।

জোসে নেতো
ইনস্টাগ্রাম/জোসে নেতো

সামুয়েলে ইনাসিও

অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার, বরুশিয়া ডর্টমুন্ড, ইতালি

ইতালির আক্রমণে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য নাম, খেলেন জার্মান ক্লাব ডর্টমুন্ডের একাডেমি দলে। বিশ্বকাপে ইতালির দলে দ্বিতীয় স্ট্রাইকার ও ১০ নম্বরের মাঝামাঝি এক ভূমিকা নিয়েছিলেন। প্রথম টাচ ও দৌড়ে ফাঁক খুঁজে নেওয়ার ক্ষমতা দারুণ।

বল নিয়ে এগোতে ইতালি সবচেয়ে বেশি ভরসা করেছে তাঁর ওপরে। ফিনিশিং তেমন চমকপ্রদ নয়, তবে হঠাৎ নিচু শটে গোলরক্ষকদের চমকে দিয়েছেন অনেকবার। সেমিফাইনালে অস্ট্রিয়ার বিপক্ষে বদলি হওয়ার পর লাল কার্ড দেখে তাঁর টুর্নামেন্টটা খারাপভাবে শেষ হয়েছে। তবে এর আগেই নজর কেড়ে গেছেন ভালোভাবে।

সামুয়েলে ইনাসিও
ইনস্টাগ্রাম/সামুয়েলে ইনাসিও

দেল

ফরোয়ার্ড, বাহিয়া, ব্রাজিল

ব্রাজিলের হতাশাজনক পারফরম্যান্সের মধ্যে সবচেয়ে উজ্জ্বল ছিলেন দেল। ব্রাজিলিয়ানদের মতো ঠিক জন্মগত প্রতিভা মনে হয়নি। তবে পরিশ্রম, বক্সে সব সময় নড়াচড়া আর ধারাল ফিনিশিং তাঁকে আলাদা করে দিয়েছে অনেকের চেয়ে।

দেল
ইস্টাগ্রাম/দেল

টুর্নামেন্টে করেছেন ৫ গোল। ডিফেন্ডারদের দ্বিধা–দ্বন্দ্ব খুব তাড়াতাড়ি ধরে ফেলেন। সেই অনুযায়ী তাঁদের ফাঁকি দেওয়া, সুযোগ কাজে লাগানো ও নিরন্তর প্রেসিং তাঁকে কার্যকর করে তুলেছে। ম্যানচেস্টার সিটি ইতিমধ্যে নজর দিয়েছে তাঁর দিকে।

রাফায়েল কিন্তাস

ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার, বেনফিকা, পর্তুগাল

পর্তুগালের মাঝমাঠের প্রাণভোমরা। খেলার গতি নিয়ন্ত্রণ করেন, বল ধরে রাখেন, চাপ থেকে দলকে মুক্ত করেন। একাডেমির খেলোয়াড় হলেও বিশ্বকাপে ছিলেন দলের অধিনায়ক। একা ৬ নম্বর হিসেবেও খেলতে পারেন, চারপাশে পাস দিতে পারেন, জায়গা তৈরি করে খেলেন।

রাফায়েল কিন্তাস
ইনস্টাগ্রাম/রাফায়েল কিন্তাস

রক্ষণে ঝুঁকিপূর্ণ ট্যাকলে যান না খুব একটা, বরং শারীরিক অবস্থান দিয়েই বিপদ ঠেকান। পর্তুগালের আগামী দিনের তারকা হওয়ার সব গুণই আছে তাঁর মধ্যে।

আরও পড়ুন