‘কাজ না পেলে দেশও ছাড়তে হতে পারে’, ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখলেন সাবেক গোলকিপার বিপ্লব

বাংলাদেশ দলের গোলকিপিং কোচ হিসেবে কাজ করেছেন বিপ্লব ভট্টাচার্য (বাঁ থেকে দ্বিতীয়)ছবি: সংগৃহীত

গোলরক্ষক কোচ হিসেবে শেখ জামাল ধানমন্ডির সঙ্গে তাঁর এক মৌসুমের চুক্তি শেষ হয়েছে মাস দুয়েক আগে। ভালোই কাজ করেছেন প্রিমিয়ার লিগের শীর্ষ ক্লাবটির সঙ্গে। কিন্তু নতুন মৌসুমে এখনো কাজের সন্ধান পাননি। আর এতেই হতাশায় ভেঙে পড়েছেন জাতীয় দলের সাবেক গোলরক্ষক বিপ্লব ভট্টাচার্য। হতাশা নিজের মধ্যে লুকিয়ে রাখেননি। রীতিমতো তা প্রকাশ করে আজ নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে বিরাট স্ট্যাটাসও দিয়েছেন। তাতেও কাজ না পেলে হয়তো বিদেশে পাড়ি জমাতে হবে, এমন ক্ষোভও জানিয়েছেন বিপ্লব।

ফেসবুকে বিপ্লব লিখেছেন ‘যে স্বপ্ন নিয়ে গোলকিপার কোচ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য এগিয়ে যাচ্ছি, ঠিক সেই সময় কিছু সিন্ডিকেটের মানুষের জন্য কোথাও কাজ করার সুযোগ পাচ্ছি না। হয়তো এদের জন্যই এবং অসাধু মানুষের জন্য তা আর সম্ভব হবে না। হয়তো একটা অন্য কোনো পেশা নিয়ে নিজের মাতৃভূমি ছাড়তে হবে, হয়তো পরিবারের জন্য হলেও এই কঠিন সত্যিটাকে মেনে নিয়ে নিজের মাতৃভূমি ছেড়ে যাওয়া ছাড়া আর কোন পথ সামনে দেখছি না।’

কিন্তু কোন সিন্ডকেটের কারণে আজ বিপ্লব কাজ পাচ্ছেন না, সেটা খোলাসা করেননি। পরে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে জানতে চাইলেও কারও নাম বলেননি। শুধু বলেছেন, দুই মাস অপেক্ষার পরও ঢাকার কোনো ক্লাব থেকে কাজের প্রস্তাব না পাওয়ার ভবিষ্যৎ অন্ধকার দেখছেন তিনি। ক্লাব অবশ্য কাকে নেবে, সেটা একান্তই ক্লাবের বিয়ষ। বিপ্লবও সেটা জানেন। তাই ক্লাবে কাজ না পেলেও অন্তত বাফুফেতে আবার ফিরতে চেয়েছিলেন, যেখানে থেকে তিনি চাকরি ছেড়ে গত বছর শেখ জামালে যোগ দেন। কিন্তু বাফুফেতে এখন আর সুযোগ পাচ্ছেন না বা বাফুফে তাঁকে নিয়ে ভাবছে না।

বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক গোলকিপার বিপ্লব ভট্টাচার্য
ছবি: সংগৃহীত

বিষয়টা নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করে বিপ্লব বলছেন, ‘গত বছর বাফুফে ছেড়ে শেখ জামালে আসার পরই বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন স্যার বলেছিলেন, ‘‘তুমি শেখ জামালে যেতে চাইছ, যাও। তবে আগামীতে বাফুফেতে এসে আবার কাজ করিও।’’ তো এবার মৌসুম শেষে আমি প্রেসিডেন্ট স্যারকে বাফুফেতে ফেরার বিষয়টা জানিয়েছিলাম। তাঁর হয়তো আন্তরিকতা আছে। কিন্তু নানা কারণে পারছেন না। ফলে আমি কাজবিহীন অবস্থায় আছি।’

ফুটবল কোচদের বেকার থাকা নতুন কিছু নয়। বাংলাদেশে অনেক ফুটবল কোচই চাকরি হারিয়ে বেকার থাকেন মাসের পর মাস। কিন্তু কেউ দুই মাসের মধ্যেই বিপ্লবের মতো এভাবে হতাশা ঢেলে দেননি ফেসবুকে। এ নিয়ে বিপ্লব প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘ফুটবল ছেড়ে অন্য পেশায় যাইনি। কোচিংয়ে এসেছি। এখন কোচিংই আমার রুটি–রুজি। ফলে কাজ না পেয়ে আমি যদি এখন ঢাকা শহরে ট্যাক্সি চালাই, তাহলে সবাই বলবে, ‘‘বিপ্লব তুমিও।’’ সেটা নিশ্চয়ই কারও ভালো লাগবে না। এ কারণেই আমি সবাইকে জানালাম যে আমি কাজ পাচ্ছি না।’

আমিনুল হক যখন জাতীয় দলের প্রধান গোলকিপার, বিপ্লব তখন আড়ালে ছিলেন। তবে আমিনুল অবসর নিলে নিয়মিত খেলেছেন বিপ্লব। খেলেছেন রেকর্ড আটটি সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ। দীর্ঘ ২৪ বছর জাতীয় দল ও পেশাদার ক্লাব ফুটবল খেলে গ্লাভসজোড়া তুলে রেখেছেন ২০১৮ সালে। গোলকিপিংয়ের ওপর ‘বি’ সনদ করে ২০১৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত শেখ জামালের গোলকিপার কোচ ছিলেন। তারপর বাফুফেতে ২০ মাস কাজ করেন জাতীয় দলসহ বিভিন্ন বয়সভিত্তিক দলের সঙ্গে। কিন্তু বাফুফেতে সম্মানি কম হওয়ায় ক্লাব কোচিংয়ে ফিরে যান। কিন্তু এখন আর কাজ পাচ্ছেন না।

শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের গোলকিপিং কোচ হিসেবেও কাজ করেছেন বিপ্লব
ছবি: সংগৃহীত

তবে কোচিংটা সুনামের সঙ্গে করেছেন জানিয়ে বিপ্লব স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘ফুটবল আমাকে নাম, যশ ও বাংলাদেশের মানুষের অফুরন্ত ভালোবাসা দিয়েছে। অনেক আশা করে নিজেকে গোলকিপার কোচ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলাম এবং বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের গোলকিপার কোচ হিসেবে সুনামের সঙ্গে দুই বছর কাজ করেছি এবং এই দুই বছরে ছেলেদের একাডেমিতে আসিফ, সোহান, মাহিন ও ইমনদের দুই বছর নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে প্রতিষ্ঠিত গোলকিপার হওয়ার মতো করে তৈরি করেছি।’

বাংলাদেশের ফুটবল প্রিয় মানুষের কাছে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন বিপ্লব। স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘আমি সারা জীবন আপনাদের কাছে ঋণী হয়ে থাকব। এত ভালোবাসা দিয়েছেন আমাকে, যা কোনোকিছু দিয়ে শেষ করা যাবে না।’ পরক্ষণেই তাঁর হতাশা, ‘হয়তো আমার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেল!’

সামনে কী হবে, বিপ্লব জানেন না। তবে দেশের ফুটবলের প্রতি শুভকামনা জানিয়ে রেখেছেন, ‘বাংলাদেশ ফুটবল এগিয়ে যাক। ফুটবল এগিয়ে নেওয়ার মতো সুন্দর মনের মানুষ আসুক। যারা আমাদের মতো স্বপ্ন দেখা মানুষকে উৎসাহিত করে নতুন প্রতিভা বের করে আনার জন্য অনুপ্রাণিত করবে, এমন নেতৃত্ব আশা করছি।’